নিজস্ব প্রতিনিধিঃ
দেওয়া হয়নি কোন নোটিশ, পায়নি জমি অধিগ্রহনের কাগজ ও ক্ষতিপূরণ , তবুও ক্ষমতার অপব্যবহার করে ভেঙ্গে গুড়িয়ে দিয়েছে এতিম তরুনির বাড়ি। বর্তমানে রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের দ্বায়িত্বরত নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেটের পদ শূন্য থাকলেও ম্যাজিষ্ট্রেট পরিচয় দিয়ে পুলিশ সদস্য নিয়ে ব্যক্তি মালিকানা জমি জবরদখলের অভিযোগ তুলে আর্তনাদ করছে মা- বাবা ও পরিজন হারানো এক তরুণী। আর্তনাদ করা ঐ অসহায় ভুক্তভোগী তরুণীর নাম ফাতেমা ফারজানা স্মৃতি (২৫)। তার বাড়ি মহানগরীর শিরোইল শান্তিবাগ এলাকায়। স্মৃতি নগরীর হেঁতেমখাঁ এলাকার আব্দুল হাকিমের মেয়ে। সে রাজশাহী কলেজের প্রাণী বিজ্ঞান বিভাগের মাস্টার্সের ছাত্রী।
তথ্যসূত্রে জানায়ায়, বৃহস্পতিবার (৫ জানুয়ারি ২০২৩) কোন ধরণের ক্ষতিপুরণ ও জমি অধিগ্রহনের নোটিশ ছাড়াই তার বসতবাড়ি ভাংচুর করেছে সিটি কর্পোরেশন। এসময় জমির মালিক স্মৃতি বাধা দিতে গেলে ম্যাজিষ্টেট পরিচয়ে থাকা রাসিক কর্মকর্তা স্মৃতিকে আটকানোর আদেশ দেন। এরপর পুলিশ তাকে আটকিয়ে রাখে এবং স্মৃতি যেন কারো সাথে যোগাযোগ করতে না পারে সেজন্য তার ফোন কেড়ে নেয়। বাড়ি ভাংগা হলে স্মৃতিকে ছেড়ে দেয় এবং ফোনটি সিটি কর্পোরেশন থেকে নিয়ে আসতে বলেন। এরপর স্মৃতি ফোনটি বিকেলে সিটি কর্পোরেশন থেকে ফিরে পায়।
এবিষয়ে ভুক্তভুগী নারী অভিযোগ করে বলেন, এই বাড়ি এবং জমি আমার নানীর সম্পদ। যার মৌজা- শিরোইল, জেএল নং -১৩৪, খাতিয়ান নম্বার- ৫২২ আরএস, দাগ নাম্বার- ৪২৮৩, ও জমির পরিমান . ০২৭৮ একর (তিন কাঠা)। আমার নানী ২০০০ সালে মারা যাওয়ার পর আমার নানীর দুই মেয়ে, আমার মা রাশিদা বেগম ও খালা আসমা বেগম এই জমির ওয়ারিস মালিক হন। যা পরবর্তীতে খাজনা ও খারিজ সম্পুর্ন পরিশোধ করা হয়েছে। পরে ২০১৭ সালে আমার মা মারা গেলে আমি মায়ের একমাত্র সন্তান হিসেবে এই সম্পত্তির ওয়ারিস মালিক হই। আমার বাবা মা কেউ নাই, আমি এই বাড়ীতে একাই থাকি। পাশের বাড়ীটি আমার খালার। আমাকে এই সম্পত্তি থেকে উচ্ছেদ করতে দীর্ঘদিন থেকে একটি কুচক্রি মহলের সহযোগিতায় বিগত পাঁচবছর সিটি কর্পোরেশন উঠেপড়ে লেগেছে। অবশেষে না পেরে বৃহস্পতিবার ম্যাজিষ্টেট পরিচয় দিয়ে আমাদের বাড়ি ভাংচুর করেছে। এমনকি তারা আমাকে লাঞ্চিত করে আমার মোবাইল ফোন কেড়ে নিয়েছে। সিটি কর্পোরেশন আমাদের আগে থেকে লিখিত কোন নোটিশও করেনি, এই জমি এখন পর্যন্ত অধিগ্রহণও করেনি। অথচ সিটি কর্পোরেশন আজ আমার মাথা গোঁজার ঠাঁই টুকুও ভেঙে দিল। আমি অসহায় বলে আমার সাথে অন্যায় করা হয়েছে। আমি সিটি কর্পোরেশনের মাননীয় মেয়র জননেতা এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটনের কাছে এর বিচার চাই, আমি ক্ষতিপূরণ চাই। প্রয়োজনে আমি সিটি কর্পোরেশনের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করবো।
এদিকে ভাংচুর হওয়া ঐ বাড়িতে থাকা ভাড়াটিয়া সাথে কথা বললে সে কান্না জড়িত কন্ঠে বলেন, আমার স্বামি নাই, আমার তিন সন্তান। আমার সন্তানের মুখে খাবর তুলে দিতে আমি বাসা বাড়িতে ঝিঁ এর কাজ করি। আমি বাসায় ছিলাম না। এসে দেখি আমার ঘর ভাঙ্গা। এ মাসে আমি বেতন পেয়েছি, যা ঘরে রেখেছিলাম। কিন্তু বিকালে এসে দেখি আমার টাকা নাই। এবারের শীতে বাচ্চাদের কিছু কিনে দিতে পারিনি। এখন কোথা থেকে কিনে দিব? আমার ঘরে আরও অনেক কিছু ছিল যা এখন আর পাওয়া যাচ্ছে না।
জানতে চাইলে উচ্ছেদ অভিযানে নেতৃত্ব দেয়া রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের সচিব মশিউর রহমান বলেন, তার জমি অধিগ্রহন করা হয়েছে এবং তাকে নোটিশ করা হয়েছিল। ঐ রাস্তার কাজটি দীর্ঘদিন থেকে বন্ধ রয়েছে। অবশেষে গত ৫ তারিখে সিটি কর্পোরেশনের একটি টিম অভিযান পরিচালনা করে ভাঙ্গা হয়েছে। স্মৃতিকে জমি অধিগ্রহনের টাকা দেওয়া হয়েছে কিনা জানতে চাই তিনি বলেন, তার টাকা ডিসি অফিসের এলএ শাখায় রয়েছে চাইলে সে তুলে নিতে পারবে।
পরে এ বিষয়ে রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ড. এবিএম শরীফ উদ্দিন বলেন, আমি তো বুধবার ও বৃহস্পতিবার ঢাকায় ছিলাম তাই বিষয়টি আমার৷ জানা নাই। আমি জেনে দেখবো।
তবে সিটি কর্পোরেশনের কর্মকর্তাদের এমন বক্তব্য ও ন্যাক্কার কাজে জনমনে প্রশ্ন উঠেছে, কাকে তুষ্ট করতে এমন কাজ করা হয়েছে? কেনই বা স্মৃতি টাকা নেইনি? তাহলে কি স্মৃতিকে জমির যথাযথ মূল্য দেওয়া হয়নি? মেয়েটির রুদ্ধকন্ঠে এমন কান্না আর্তনাদ পৌঁছাবে কি সিটি কর্পোরেশনের দরজায়? অসহায়দের পাশে দাঁড়াবে কি নগর পিতা ? এসকল প্রশ্নের উত্তর-ই খুঁজছেন এখন সাধারণ মানুষ।