প্রতিবেদক-
সুলতানা রাজিয়া
আজ বৃহস্পতিবার কুড়িগ্রামের সর্বত্র অত্যন্ত শান্তিপূর্ণ পরিবেশে শ্রী শ্রী শ্যামা পূজা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। হিন্দু সম্প্রদায়ের দ্বিতীয় বৃহত্তম ধর্মীয় উৎসব এটি। কার্তিক মাসের অমবস্যা তিথিতে শ্যামা পূজা বা কালী পূজা অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে।
চামুণ্ডাচর্চিকা কালীর পূজা বাংলা ও বহির্বঙ্গে প্রাচীন উৎসব হলেও বর্তমান আকারে কালীপূজা আধুনিক কালের। ষোড়শ শতাব্দীতে নবদ্বীপের প্রসিদ্ধ স্মার্ত পণ্ডিত তথা নব্যস্মৃতির স্রষ্টা রঘুনন্দন দীপান্বিতা অমাবস্যায় লক্ষ্মীপূজার বিধান দিলেও, কালীপূজার উল্লেখ করেননি। ১৭৬৮ সালে রচিত কাশীনাথের কালী সপর্যাসবিধি গ্রন্থে দীপান্বিতা অমাবস্যায় কালীপূজার বিধান পাওয়া যায়। ডঃ শশীভূষণ দাশগুপ্তের মতে, “কাশীনাথ এই গ্রন্থে কালীপূজার পক্ষে যে ভাবে যুক্তিতর্কের অবতারণা করিয়াছেন, তাহা দেখিলেই মনে হয়, কালীপূজা তখনও পর্যন্ত বাঙলা দেশে সুগৃহীত ছিল না।” তবে খ্রিষ্টীয় সপ্তদশ শতাব্দীতে বাংলায় কালীপূজার প্রচলনের কিছু কিছু প্রমাণ পাওয়া গিয়েছে।
সপ্তদশ শতকের নবদ্বীপের প্রথিতযশা তান্ত্রিক কৃষ্ণানন্দ আগমবাগীশকে বাংলায় কালীমূর্তি ও কালীপূজার প্রবর্তক মনে করা হয়। তাঁর পূর্বে কালী উপাসকগণ তাম্রটাটে ইষ্টদেবীর যন্ত্র এঁকে বা খোদাই করে পূজা করতেন। পাঁচকড়ি বন্দ্যোপাধ্যায় লিখেছেন, “কৃষ্ণানন্দ আগমবাগীশ স্বয়ং কালীমূর্তি গড়িয়া পূজা করিতেন। আগমবাগীশের দৃষ্টান্ত অনুসরণ করিয়া বাংলার সাধক সমাজ অনেকদিন চলেন নাই; লোকে ‘আগমবাগিশী’ কাণ্ড বলিয়া তাঁহার পদ্ধতিকে উপেক্ষা করিত।” অষ্টাদশ শতাব্দীতে নদিয়ার রাজা কৃষ্ণচন্দ্র রায় কালীপূজাকে জনপ্রিয় করে তোলেন। এই সময় রামপ্রসাদ সেনও আগমবাগীশের পদ্ধতি অনুসারে কালীপূজা করতেন। ঊনবিংশ শতাব্দীতে কৃষ্ণচন্দ্রের পৌত্র ঈশানচন্দ্র ও বাংলার ধনী জমিদারদের পৃষ্ঠপোষকতায় কালীপূজা ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করে। বর্তমানে কালীপূজা বাংলায় দুর্গাপূজার মতোই এক বিরাট উৎসব। সাধাররণত কার্ত্তিক মাসের অমাবস্যা তিথিতে এ পূজা অনুষ্ঠিত হয়। সনাতন ধর্মাম্বলীদের কাছে শ্যামা হচ্ছেন শক্তির প্রতীক ।
সরেজমিনে আজ সন্ধ্যায় উলিপুরের বিভন্ন হিন্দু অধ্যুষিত এলাকার বিভিন্ন পূজা মন্ডপ ঘুরে ঘুরে সর্বত্র উৎসবমুখর পরিবেশ দেখতে পাওয়া যায়।কোথাও কোন প্রকার অপ্রিতিকর ঘটনার খবর পাওয়া যায়নি। উপজেলার ৬নং বুড়াবুড়ী ইউনিয়নের শ্রী সুরেন চন্দ্র (সাধু) জানান,এবার শ্যামাপূজার দীপাবলির উৎসবটি মোটামোটি ভাবে পালিত হচ্ছে পল্লীগুলোতে।