ওয়ালিউর রহমান রাজু,লালমনিরহাট :
আজ ৬ ডিসেম্বর লালমনিরহাট হানাদার মুক্ত দিবস। ১৯৭১ সালের এ দিনে জেলাটি পাক হানাদার মুক্ত হয়। মুক্তিযোদ্ধাদের মরণপণ লড়াই আর মুক্তিগামী জনগণের দুর্বার প্রতিরোধে পতন হয় পাক হানাদার বাহিনীর।
এক পর্যায়ে চূড়ান্ত বিজয়ের আগ মূহূর্তে মুক্তিযোদ্ধারা লালমনিরহাট ঘিরে ফেললে অবস্থা বেগতিক দেখে ভোরেই জেলার রেলওয়ে স্টেশন থেকে পালায় পাক সেনা, রাজাকার, আলবদর ও তাদের দোসররা। তারা দুটি স্পেশাল ট্রেনে রংপুর ক্যান্টনমেন্ট থেকে পালিয়ে যায়। তিস্তা নদী পার হওয়ার পরে পাক সেনারা তিস্তা রেল সেতুতে বোমা বর্ষণ করে সেতুটির একপাশ্বে ভেঙ্গে দিয়ে যায়।
সেই দিন জেলার সর্বত্রই ছড়িয়ে পড়ে মুক্তির উল্লাস। লালমনিরহাট শত্রুমুক্ত হওয়ার খবর ছড়িয়ে পড়ার সঙ্গে সঙ্গে চারদিক থেকে শহরে লোকজন ছুটে আসতে শুরু করে। সন্ধ্যার মধ্যে শহরের প্রাণকেন্দ্র মিশন মোড় এলাকায় লোকে লোকারন্য হয়ে যায়। স্লোগানে মুখরিত হয় শহর ও আশপাশের গ্রাম। আনন্দে উল্লসিত কন্ঠে স্বদেশের পতাকা নিয়ে ছুটোছুটি করতে থাকে তরুণ, যুবক, আবাল বৃদ্ধ বনিতা সবাই। ওই দিন সকাল থেকে উত্তেজনা নিয়ে লালমনিরহাট শহর, লোকালয়ের মানুষ জড়ো হতে থাকে। শহরের বিভিন্ন সড়কে বেরিয়ে পড়ে আনন্দ মিছিল।
পরদিন ৭ ডিসেম্বর বাঁধ ভাঙা জোয়ারের মতো ‘জয় বাংলা’ ধ্বনিতে বিজয়ের পতাকা নিয়ে শহরে ঢুকে পড়ে মুক্তিকামীরা। যারা ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চের কালো রাতে হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে অস্ত্র হাতে প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিল। মুক্তিযুদ্ধের সময় ৬নং সেক্টরটি অবস্থিত ছিল লালমনিরহাটের পাটগ্রাম উপজেলার বুড়িমারীতে। সেক্টরটির কমান্ডার ছিলেন বিমান বাহিনীর এম খাদেমুল বাশার। লামনিরহাটের একমাত্র বীরপ্রতীক ক্যাপ্টেন (অব.) আজিজুল হক বলেন, স্বাধীনতার এতো বছর অতিবাহিত হলেও এখনো অনেক মুক্তিযোদ্ধা অনাহারে-অর্ধাহারে দিনাতি পাত করছে। অনেক মুক্তিযোদ্ধা তাদের অধিকার থেকে বঞ্চিত রয়েছে। এ জন্য মহান মুক্ত দিবসের এ দিনে সহায়-সম্বলহীন মুক্তিযোদ্ধাদের পুর্নবাসন করতে সরকারের প্রতি আহবান জানান এই বীর প্রতীক। অবিস্বরণীয় এ দিনটি যথাযথভাবে উদযাপনের জন্য লালমনিরহাটের বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক, মুক্তিযোদ্ধা সংগঠন, সাংবাদিকবৃন্দ ও জেলা প্রশাসন বিভিন্ন কর্মসূচি হাতে নিয়েছে।
এব্যাপারে লমনিরহাট জেলা প্রশাসক মো. আবু জাফর বলেন, ৬ ডিসেম্বর লালমনিরহাট মুক্ত দিবস ও ১৬ই ডিসেম্বর মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে নানা কর্মসূচি মধ্য দিয়ে প্রতিবারের ন্যায় এবারো যথাযথ মর্যাদায় দিবসটি উদযাপন করা হবে। এজন্য লালমনিরহাটে বিভিন্ন রাজনৈতিক সাংস্কৃতিক ব্যক্তিসহ সকলের সহযোগিতা কামনা করছেন তিনি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *