ঝালকাঠি প্রতিনিধি :ঝালকাঠি জেলার নলসিটি উপজেলার কুলকাঠি ইউপি চেয়ারম্যান আক্তারুজ্জামান বাচ্চু বিরুদ্ধে ধর্ষণ মামলা করায় ধর্ষিতার পরিবারকে হত্যার হুমকির অভিযোগে বাংলাদেশ ক্রাইম রিপোর্টার্স এসোসিয়েশন এ্যাব সেগুন ভাগিচা অফিসে সোমবার দুপুর একটায় সাংবাদিক সম্মেলন করেছেন ভুক্তভোগী ধর্ষিতা নারী । ধর্ষণ মামলার বাদী ভুক্তভোগী নারী লিখিত বক্তব্যে বলেন জেলার নলছিটি উপজেলার বাসিনা। আমার বাবা পেশায় একজন কৃষক। আমি এক দরিদ্র অসহায় পরিবারের সন্তান। একই উপজেলার ৩ নং কুলকাঠী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান, আওয়ামী লীগ নেতা আক্তারুজ্জামান বাচ্চু (৪৫), হঠাৎ আমার ইমুতো তিনি একদিন কলদেন। তখন আমি লেখাপড়ার পাশাপাশি নারায়নগঞ্জের একটি গার্মেন্টসে কর্মরত ছিলাম। তিনি আমার কাছে আমার কর্মস্থল কোথায়া এবং আমি কোথায় থাকি এইসব বিভিন্ন বিষয়ে জানতে চান। এক পর্যায়ে আমি তার কাছে আমার পরিচয় এবং পেশাগত দিক তুলে ধরি। তার কিছুদিন পর আবার ফোন দিয়ে তিনি আমাকে বলেন তুমি তো আমার একই ইউনিয়নের মেয়ে তুমি একটা কাজ করো তোমার বায়োডাটা নিয়ে আমার সাথে দেখা করো আমার নিজের এনজিও আছে, আমি তোমাকে আমার এন.জি.ওতে চাকরি দেব, আমি কোথায় দেখা করবো জানতে চাইলে তিনি আমাকে কাগজপত্র নিয়ে গুলিস্থানে এসে দাড়াতে বলেন। তার কথামত আমি ১৩/১২/২০২১৫ তারিখে বিকালে গুলিস্থানে গেলে সে একটি প্রাইভেট গাড়িতে করে আমাকে দক্ষিণ বনত্রীর ৯/২ রোডে, বুক- ই, বাড়ি নং- ১২৩ (পাটোয়ারি বাড়িতে নিয়ে যায়। এখানে হেড অফিস আমাকে এই কথা বলে। ওই সময় সেই বাড়ি তে মোরশেদা নামের এক নারী ছিলেন। মোরশেদার সহায়তায় বাচ্চু চেয়ারম্যান ওইদিনই আমাকে ধর্ষন করেন। প্রকৃতপক্ষে মোরশেদা হলো একজন পতিতাবৃত্তি কাজের দালাল এবং উক্ত ফ্ল্যাটে সে নানারকম অসামাজিক কার্যকলাপ করে থাকে। এনিয়ে প্রতিবাদ করলে বাচ্চু চেয়ারম্যান ও মোরশেদা আমাকে নানাভাবে হুমকি দেন। উল্লেখ্য যে, ধর্ষণের দৃশ্য বাচ্চু চেয়ারম্যান ও মোরশেদা মোবাইল ফোনে রেকর্ড করে রাখে এবং আমি প্রতিবাদের চেষ্টা করলে উক্ত ধারনকৃত ভিডিও ইন্টারনেটে ছেড়ে দেওয়ার ভয় দেখায়। লোকলজ্জার ভয়ে আমি ওই ঘটনার কোন আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারিনি। পরবর্তীতে গত ০৯/০১/২০২২ইং তারিখে পুনরায় আমাকে বাচ্চু চেয়ারম্যান আমাকে উরু ফ্ল্যাটে যেতে বলেন আমি না খেতে চাইলে আমাকে ধর্ষনের ধারনকৃত ভিডিও ইন্টারনেটে প্রকাশের ভয়ভীতি দেখায়। বাধ্য হয়ে আমি তার সাথে দেখা করতে উক্ত ফ্ল্যাট যাই এবং সেখানে আমাকে আটকে রেখে পুনরায় কয়েকবার ধর্ষণ করে এবং ০৭/০১/২০২২ইং তারিখে আমাকে সেখান থেকে মুক্তি দেয়। দ্বিতীয়বার ধর্ষণের পর আমি গর্ভবর্তী হয়ে পরি, বাচ্চু চেয়ারম্যান আমাকে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে আমার গর্ভপাত ঘটায়। দিনদিন চেয়ারম্যানের অত্যাচার আরো বেড়ে যায় এবং আমাকে প্রায়ই উক্ত ফ্ল্যাটে যাওয়ার জন্য জোড় করতে থাকে। এক পর্যায়ে আমি আমার পরিবারের সাথে আলোচনা করে তাদের সম্মতিক্রমে মামলা করার সিদ্ধান্ত নেই। গত ১০ ফেব্রুয়ারী ২০২২ইং তারিখ আমি বাদি হয়ে খিলগাঁও থানায় বাচ্চু চেয়ারম্যান ও তার সহযোগী মোরশেদাকে আসামী করে “নারী ও শিশু নির্যাতন দমন” ৯(১) ধারায় একটি মামলা দায়ের করি।
এই মামলা দায়েরের পর বাচ্চু চেয়ারম্যান আরো বেপরোয়া হয়ে যায়। এখন সে এবং তার সহযোগিরা আমি এবং আমার পরিবারের সদস্যদের মেরে ফেলার হুমকী দিচ্ছে। ১০ ফেব্রুয়ারী মামলা দায়ের করা হলেও বাচ্চু চেয়ারম্যান এখনো গ্রেফতার হয়নি।
ভুক্তভোগী বলেন, বাচ্চু চেয়ারম্যান এলাকায় খুবই প্রভাবশালী ও বিত্তশালী। উপজেলা আওয়ামী লীগের তিনি সাংগঠনিক সম্পাদক ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি এবং পরপর তিনবার বিনা প্রতিদ্বন্দিতায় জয়ী চেয়ারম্যান। এই সূত্র ধরে তার এলাকায় বিশাল এক অস্ত্রধারী বাহিনী রয়েছে। যারাই তার প্রতিবাদ করতে চায় তাদেরকেই তার বাহিনী দিয়ে অভ্যাচার, নির্যাতন, লাঞ্চিত ও বিভিন্ন মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করেন। এজন্য এলাকার কেউই তার বিরুদ্ধে সত্য বলতে পারেনা বা মুখ খুলতে চায়না। এই অপক্ষমতার দাপটে তিনি নানা অপকর্ম চালিয়ে যাচ্ছেন। ঢাকা ও বরিশালে নামে-বেনামে একাধিক ফ্ল্যাট বাড়ি আছে। যেখানে তিনি আমার মতো আরো অসহায় মেয়েদের চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে ধর্ষণ করেছেন বলেও অভিযোগ আছে। আমি আজ অসহায়, বাচ্চু চেয়ারম্যানের ক্ষমতার কাছে আজ সবাই জিম্মি। আমি বাচ্চু চেয়ারম্যানের বিচার চাই। যাতে করে আমার মতো আর কোন নারীর সতিত্ত কোন বাচ্চু চেয়াম্যানের মতো লোকদের হাতে নষ্ট না হয়। আমি আপনাদের মাধ্যমে দেশবাসির কাছে আমার এই অসহায়ত্বের কথা তুলে ধরতে চাই। আমাকে আপনারা সহায়তা করুন।