এস এম আসাদুজ্জামান, ফুলবাড়ী (কুড়িগ্রাম)ঃ-২১.০৩.১৮
পৌনে দু’লাখ মানুষের একমাত্র স্বাস্থ্য সেবার কেন্দ্রস্থল কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি নিজেই রুগ্ন হয়ে পড়েছে। পঞ্চাশ শয্যার এই কমপ্লেক্সটির ১৫ জন ডাক্তারের নেই একজনও। শুরু থেকেই ৫জন কলসাল্টটেন্টের পদ ফাঁকা। পড়ে থেকে নষ্ট হচ্ছে আলট্রাসনোগ্রাম মেশিন। এক্স-রে মেশিনটিও নষ্ট।
বুধবার (২০ মার্চ) সাড়ে ১১টায়, মঙ্গলবার (১৯ মার্চ) ১১টায় ও সোমবার (১৮ মার্চ) সকাল সাড়ে ১০টায় গিয়ে দেখা দেখা গেছে, উপজেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে রোগীরা আসছেন স্বাস্থ্যসেবা গ্রহণের জন্য। মেডিকেল অফিসার (এমবিবিএস) না থাকায় রোগীরা চিকিৎসা নিচ্ছেন উপ-সহকারী মেডিকেল অফিসারের কাছ থেকে।

চিকিৎসা সেবা নিতে আসা উপজেলার ১০ কি.মিটার দুরের সীমান্তবর্তী নাওডাঙ্গা ইউনিয়নের বালাতাড়ী গ্রামের এমদাদুল (২৫), মেহেনী (২২) জানান, গাইনী ডাক্তার না থাকায় ফিরে যেতে হচ্ছে তাদের।

বালারহাট থেকে আসা আমিন (৫৫) জানান,যে ডাক্তার আছে তার কাছ থেকেই ব্যবস্থাপত্র নিয়ে ওষূধ নিচ্ছেন তিনি। তার এক ভাগনা এখানে কর্মরত আছেন।

বড়ভিটা ইউনিয়নের চরধনিরাম গ্রামের হাফিজুর (২৮) ও রাজু (২৩) জানান,এখানে এক্স-রে করার উপায় না থাকায় তাদের লালমনিরহাটে গিয়ে এক্স-রে করতে হবে।

ফুলবাড়ী ইউনিয়নের বালাতাড়ী গ্রামের হামিদ জানান,আগের মতই আছে হাসপাতাল। এখন আরও অবস্থা খারাপ! ডাক্তার নাই।

চন্দ্রখানা থেকে আসা বদিয়ার(৫৫) জানান,তার নাতী আদনানকে (৩ বছর ৬ মাস) উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিসার জন্য এনেছেন। কিন্তু চিকিসার উন্নতি না হওয়ায় লালমনিরহাট সদর হামসপাতালে নিয়ে গিয়ে চিকিসা করাচ্ছেন।

দাসিয়ার ছড়ার হিমেল (২০) জানান,তিনি ডিগ্রী কলেজে পড়েন। ডাক্তার দেখায়ে ওষুধ নিতে এসেছেন কিন্তু ডাক্তার নেই। ওষুধ আছে অল্প। বাকী গুলো কিনতে হবে।

উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সুত্র জানায়, স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি ৩১ শয্যা থেকে ৫০ শয্যা উন্নতী হয়েছে ২০১৩ সালে। এখানে ১৫ জন ডাক্তারের (মেডিকেল অফিসার) স্থলে একজন ডা.রাকিবুল ইসলাম ৯ মাস আগে নিয়োগ পেয়ে যোগদান করে ৩ মাস চাকুরী করেন। এরপর হন লাপাত্তা । বেতনও উঠাননি। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে যোগাযোগ করা হলেও সাড়া দেননি তিনি। পেষণে আসা ডা.শফিকুল ইসলাম প্রশিক্ষণে আছেন ঢাকায় আর ডা.সাকির আহমেদ কাজেই আসছেন না কিছুদিন থেকে।

উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স অফিস জানায়, এখানে ১৫ টি ডাক্তারের পদে একটিও নেই। শুরু থেকে ৫টি কনসাল্টেন্ট পদে নেই কেউই। এছাড়া মোট ১২০টি পদের বিপরীতে রয়েছেন ৭৬ জন। উপ-সহকারী মেডিকেল অফিসারের ৮টি পদের বিপরীতে রয়েছেন ৬ জন। একটি এক্স-রে মেশিন থাকলেও সেটা বন্ধ আছে ৮ মাস ধরে। আলট্্রাসনোগ্রাফির ডাক্তার না থাকায় পড়ে থেকে নষ্ট হচ্ছে। ইসিজি সচল থাকলেও ডাক্তার নেই, তাই রোগীও আসে না। ২৬টি কমিউনিটি সেন্টার কাগজে কলমে আছে কিন্তু ৩টির স্থাপনাই নাই।

মেডিকেল টেকনিশিয়ান(রেডিও গ্রাফার) বিশ্বনাথ হালদার জানান,উন্নতমানের এক্স-রে মেশিন থাকলেও উপজেলার রোগীদের উপকারে আসছে না। আলট্রাসনোগ্রামের মেশিন আছে ডাক্তার কিন্তু নেই।

উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা.মো.মেশকাতুল আবেদ এ বছরের ফেব্রুয়ারিতে যোগদান করেন উল্লেখ করে জানান,উত্তরবঙ্গে এতটা অসহায় আর কোনো উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স তার চোখে পড়েনি। ডাক্তার এখানে জরুরী ভিত্তিতে আনা প্রয়োজন। সে ব্যবস্থা তিনি করছেন। ডা.মো.মেশকাতুল আবেদ এলাকাবাসীসহ সবার সাহায্য কামনা করেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *