তৈয়বুর রহমান, কুড়িগ্রামঃ

উলিপুরে রামপ্রসাদ মতিউল্লাহ পাড়া সরকারি  প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আব্দুস সোবাহানের বিরুদ্ধে কমিটি গঠনে অনিয়মসহ স্লিপের টাকা আত্মসাৎ এর অভিযোগ উঠেছে। প্রধান শিক্ষক তার পিতা ও দুই সহদরকে ম্যানেজিং কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত করে এসব দুর্নীতি নির্বিঘ্নে চালিয়ে যাচ্ছেন। সম্প্রতি শিক্ষার্থীদের অভিভাবক সদস্যরা কমিটি গঠনে অনিয়ম ও দুর্নীতির প্রতিকার চেয়ে উপজেলা শিক্ষা কমিটির সভাপতিসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বরাবর লিখিত আবেদন করলেও প্রতিকার না পাওয়ায়  শিক্ষার্থীর অভিভাবকদের মাঝে তীব্র ক্ষোভ ও অসন্তোষ দেখা দেয়।   

লিখিত অভিযোগ ও অনুসন্ধানে জানা গেছে, রেজিঃ প্রাথমিক বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠার লগ্নে জমি  দাতা হোসেন আলীর পুত্র আঃ সোবহান প্রধান শিক্ষক হিসাবে নিয়োগ পান। এরপর ২০১৩ সালে প্রতিষ্ঠানটি জাতীয়করণ হলে সরকারি নীতিমালা অনুযায়ী এসএমসি গঠন করা হয়। ওই সময় প্রধান শিক্ষক হীন স্বার্থ চরিতার্থ করতে তার বড় ভাই আবুল কাসেমকে সভাপতি, পিতা হোসেন আলীকে সহ-সভাপতি ও নিজের পছন্দ মত সদস্য নিয়ে পারিবারিক কমিটি গঠনের মাধ্যমে দীর্ঘদিন ধরে নিজের ইচ্ছা মতো প্রতিষ্ঠানটি চালিয়ে আসছেন। ২০২০-২১ অর্থবছর বিদ্যালয়টির দোতলা ভবন নির্মাণের জন্য বরাদ্দ আসলে স্থান নির্বাচন নিয়ে দাতা সদস্য হোসেন আলী পরিবারের সাথে শিক্ষা বিভাগের  জটিলতা সৃষ্টি হয়।

 অনুসন্ধানে জানাজায় প্রধান শিক্ষক নিজেই বিদ্যালয়টির ৫ শতাংশ জমি জবর দখলে রাখায় – উত্তর দক্ষিণ লম্বায় ভবন নির্মাণের কথা থাকলেও দাতা পরিবারের অসহযোগিতার কারণে ঠিকাদার পূর্ব -পশ্চিম লম্বায় ভবন নির্মাণ করতে বাধ্য হন। এদিকে, সমালোচনার মুখে প্রধান শিক্ষক আবারও অত্যন্ত গোপনে  তার ছোট ভাই মাইদুল ইসলামকে সভাপতি, বড় ভাই আবুল কাসেমকে সহ-সভাপতি, চাচাতো ভাইয়ের স্ত্রী মাসুমা বেগম সদস্য, ভাগ্নে বউ মারুফা বেগম সদস্য সহ নিজের পছন্দের লোক দিয়ে গোপনে কমিটি করেন। পদাধিকার বলে ইউপি সদস্য সান্তনা বেগমকে কমিটিতে রাখা হলেও তার সাথে. কোন আলোচনা কিংবা তার কোন স্বাক্ষর গ্রহণ করা হয়নি বলে  জানান তিনি। অভিযোগ রয়েছে কমিটি গঠনে দাখিলকৃত রেজুলেশনের অধিকাংশ স্বাক্ষর জাল করা হয়েছে। এছাড়াও দাদা হোসেন আলী জীবিত থাকলেও প্রধান শিক্ষক কমিটি তার নিয়ন্ত্রণে রাখার সুবিধার্থে দাতা পরিবর্তন করে কমিটি গঠন করেন বলে জানা গেছে।  

কোন প্রকার নির্বাচন কিংবা সাধারণ সভা ছাড়াই  কমিটি দাখিল করায় স্থানীয় অভিভাবক মহলে তোলপাড় শুরু হয়। 

এ এরকম পরিস্থিতিতে বিদ্যালয়ের অধিকাংশ ছাত্রের অভিভাবক প্রত্যক্ষ  নির্বাচনে কমিটি গঠন, আর্থিক দুর্নীতির প্রতিকার চেয়ে  উপজেলা শিক্ষা কমিটির সভাপতিসহ-সংশ্লিষ্ট বিভাগে লিখিত অভিযোগ দাখিল করেন। কিন্তু প্রশাসনিক পদক্ষেপ গ্রহণে কর্তৃপক্ষের রহস্যজনক নীরবতায় ক্রমেই পরিস্থিতির অবনতি হয়।  লিখিত অভিযোগে জানা গেছে, প্রধান শিক্ষক বিগত২০১৮-১৯ অর্থ বছর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কমিটির অনুমোদন ক্রমে বিদ্যালয় মেরামত ও সংস্কার কাজের জন্য দেড় লক্ষ টাকা উত্তোলন করেন। উল্লেখিত টাকা কি কাজে কোথায় ব্যয় করা হয়েছে তা স্থানীয় অভিভাবকরা অবগত নন বলে জানান। এছাড়াও ২০২১-২২ অর্থবছরের স্লীপের  ৬০ হাজার ও প্রাক প্রাথমিকের জন্য ১০ হাজার  টাকা বরাদ্দ আসলে ভুয়া বিল ভাউচার দাখিলের মাধ্যমে সমুদয় টাকা উত্তোলন করে পকেটস্থ করা হয়েছে। এভাবেই দাতা পরিবার ও প্রধান শিক্ষক পকেট কমিটি করে ২০১৩ সাল থেকে বিদ্যালয়ের অনুকূলে আসা স্লিপের টাকা প্রাক প্রাথমিকের টাকা ও উন্নয়ন বরাদ্দের টাকা আত্মসাৎ করেন বলে এলাকায় জনশ্রুতি পাওয়া গেছে। এ ব্যাপারে প্রধান শিক্ষক আঃ সোবহান এর সাথে কথা হলে তিনি জানান স্কুলে কোন নিরাপদ জায়গা না থাকায় এ-সব মালামাল ক্রয় করা হয়নি। উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মোঃ নাদিরুজ্জান জানান,লিখিত অভিযোগ পাওয়া গেছে, এ ব্যাপারে তদন্ত অব্যাহত রয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *