রোকনুজ্জামান মানু, উলিপুর (কুড়িগ্রাম)
কুড়িগ্রামের উলিপুরে ভিজিএফ এর গম ১৩ কেজির পরির্বতে ৯ কেজি নিতে অস্বীকার করায় নুর আলম (২০) নামের এক মেধাবী ছাত্রকে নির্দয়ভাবে পিটিয়ে আহত করেছে চেয়ারম্যানের পেটোয়া বাহিনী। বর্তমানে সে উলিপুর হাসপাতালে ১৩নং বেডে চিকিৎসাধীন রয়েছে। ঘটনাটি ঘটেছে, রোববার (০২ জুলাই) দুপুরে উপজেলার গুনাইগাছ ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়ে।
জানা গেছে, ওই ইউনিয়নের ভিজিএফের গম ঈদের আগে দেয়ার কথা থাকলেও তা বিতরন করা হয় রোববার। মা নুর বানু বেগম অসুস্থ্য থাকায় তার পরিবর্তে সন্তান নুর আলম স্লিপের ভিজিএফ এর গম নিতে গেলে ১৩ কেজি গমের পরিবর্তে ৯ কেজি গম নিতে অস্বীকার করায় গ্রাম পুলিশ মেহেরুল ইসলামের সাথে কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে ইউপি চেয়ারম্যান আবুল কালাম আজাদ খোকার কাছের লোক বলে পরিচিত ফয়জার রহমান (৩২), রাজু মিয়া (৩৫), জহুরুল হক (৩৬) সহ বেশ কয়েকজন তাকে নির্দয় ভাবে পিটিয়ে আহত করে। পরে স্বজনরা তাকে উদ্ধার করে উলিপুর হাসপাতালে ভর্তি করে। এ ঘটনায় নুর আলম বাদী হয়ে উলিপুর থানায় অভিযোগ দায়ের করেছেন। নির্যাতনের শিকার ওই ছাত্রের মা একজন গৃহকর্মী। অন্যের বাড়িতে কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করেন। উল্লেখ্য, মেধাবী ছাত্র নুর আলম এসএসসি তে গোল্ডেন জিপিএ-৫ পাওয়ায় ‘মিজান মেধাবী দেশের মুখ’ এর পক্ষ থেকে নাট্য অভিনেতা আবুল হায়াৎ ও বিপাশা হায়াৎ উলিপুরে এসে তাকে সম্বর্ধিত করে। বর্তমানে নুর আলম কুড়িগ্রাম সরকারি মহাবিদ্যালয়ের পর্দাথ বিজ্ঞান বিভাগের অর্নাস প্রথম বর্ষে অধ্যায়নরত, রোল নং-১৩। ভিজিএফ এর ১৩ কেজি গম নিতে গিয়ে হাসপাতালের ১৩ নং বেডে জায়গা হয়েছে এই মেধাবী ছাত্রের। এ ঘটনায় এলাকায় তোলপার সৃষ্টি হয়েছে।
সোমবার (০৩ জুলাই) উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান হায়দার আলী মিঞা ও উপজেলা নির্বাহী অফিসার মুহাম্মদ শফিকুল ইসলাম আহত নুর আলমকে উলিপুর হাসপাতালে দেখতে যান এবং চিকিৎসার খোজ খবর নেন।
রিলিফ অফিসার নুরে আলম সিদ্দিকী জানান, আমার জানামতে ভিজিএফ এর গম কাউকে কম দেওয়া হয়নি। তবে ছাত্র আহত হওয়ার ঘটনা স্বীকার করেন।
গুনাইগাছ ইউপি চেয়ারম্যান আবুল কালাম আজাদ খোকা বলেন, এ সময় আমি ইউনিয়ন পরিষদের ভিতরে ছিলাম। হইচই শুনে আমি ছাত্তার মেম্বারসহ তাকে উদ্ধার করি। তবে এ ঘটনায় তার কোন সম্পৃক্ততা নেই বলে দাবী করেন।
উলিপুর থানার অফিসার ইনাচার্জ এস.কে আব্দুল্যা আল সাঈদ অভিযোগ পাওয়ার কথা স্বীকার করে বলেন, বিষয়টি তদন্ত পর্যায় রয়েছে।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার মুহাম্মদ শফিকুল ইসলাম জানান, ঘটনার তদন্ত করে দোষী ব্যাক্তির বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।
বাংলাদেশর ওয়ার্কাস পাটি কুড়িগ্রাম জেলার শাখার সাধারন সম্পাদক রুবেল আলম মন্ডল, কৃষক সমিতির সাধারন সম্পাদক সিরাজুল ইসলাম সুজা ও ইনার্চাজ, বাংলাদেশ যুব মৈত্রী, সভাপতি গনতান্ত্রিক আইনজীবি সমিতি, বাংলাদেশের ওয়ার্কাস পাটি কুড়িগ্রামের এ্যাডভোকেট শেখ মোঃ জামাল জনি সোমবার মেধাবী ছাত্র নুর আলমকে দেখতে উলিপুর হাসপাতালে যান এবং তার খোজ খবর নেন। এরপর প্রতিনিধি দল উলিপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ সফিকুল ইসলামের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে মেধাবী ছাত্র নুর আলমের ব্যাপারে জিজ্ঞাসাবাদ করলে তিনি জানান, আমি নিজেই গুনাইগাছ ইউপি পরিষদের গিয়েছি। সমস্ত ঘটনা শুনেছি চেয়ারম্যানকে নিয়ে উলিপুর হাসপাতালে গিয়ে তার খোজ খবর নিয়েছি। ঘটনাটি একটি স্পর্শকাতর। নুর আলম যেন আইনী সহায়তা পায় সে ব্যাপারে আমার সহযোগীতা অব্যাহত থাকবে।