কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি:
মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের মেধাবী শিক্ষার্থীদের দেয়া প্রধানমন্ত্রীর উপহার ট্যাব ফেরত চেয়ে ইউএনও’র নোটিশ পেয়ে শিক্ষার্থীদের বাড়ি বাড়ি চিঠি দিলো একটি বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক।
কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরী উপজেলার কেদার ইউনিয়নের সুবলপাড় বহুমূখী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের দেয়া ১৫ এপ্রিল ওই নোটিশে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার দেয়া পত্রের বরাতে বলা হয় আগামী দুই দিনের মধ্যে বিতরণ করা ট্যাব ফেরৎ প্রদানের নির্দেশ প্রদান করা হইলো।
এদিকে নোটিশ পেয়ে ওই বিদ্যালয়ের ট্যাবলেট গ্রহণ করা ৬জন শিক্ষার্থীর মাঝে হতাশা বিরাজ করছে। তাদের মাঝে সম্মানহানীর শংকার পাশাপাশি স্কুল যাওয়া বন্ধ হবার উপক্রম দেখা দিয়েছে। কোমলমতি শিক্ষার্থীদের সাথে কর্তৃপক্ষের এমন আচরণকে কান্ডজ্ঞান ও দায়িত্বহীনতার পরিচয় বলে মত অভিভাবক মহলের।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সুবলপাড় বহুমূখী উচ্চ বিদ্যালয়ের নবম ও দশম শ্রেণীর ৬জন শিক্ষার্থীকে উপজেলা পরিসংখ্যান বিভাগের ৬টি ট্যাব প্রদানের জন্য নির্বাচন করা হয়। নির্বাচনের শর্ত মোতাবেক ক্লাস রোল-১ হতে ৩ এর মধ্যে হতে হবে। এদিকে ওই বিদ্যালয়ের ওই দুই শ্রেণীর ১ থেকে ৩ রোলের শিক্ষার্থীরা পার্শবর্তি ছায়ানীড় কোচিং সেন্টারে লেখাপড়া করেন। তারা কোনদিন স্কুলে আসে না। শুধুমাত্র পরীক্ষার সময় এসে পরীক্ষায় অংশ নেয়। বছরের সিংহভাগ সময় স্কুলে অনুপস্থিত থাকায় তাদের নামে ট্যাব দেবার তালিকায় অন্তর্ভূক্ত করা হয়নি। স্কুলের যারা নিয়মিত উপস্থিতি ও ভালো ফলাফলধারী শিক্ষার্থীদের ট্যাব নেবার তালিকা ভূক্ত করে পরিসংখ্যান অফিসে পাঠায় বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। সেই তালিকা অনুযায়ী গত ২৮মার্চ উপজেলা পরিসংখ্যান অফিসে ডেকে নিয়ে নির্বাচিত ৬জন শিক্ষার্থীর নিকট ট্যাব তুলে দেয়। বিষয়টি প্রকাশ পেলে ওই বিদ্যালয়ে তদন্তে আসে পরিসংখ্যান কর্মকর্তা। এর প্রেক্ষিতে ১৩এপ্রিল এক পত্রের মাধ্যমে ট্যাব গুলো ফেরত চান উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা।
বিদ্যালয়ের ৯ম শ্রেণীর ৩রোল নম্বর শিক্ষার্থী রোবাইদা খান বলেন,এতো কষ্ট করে আমরা ট্যাবটি পেলাম। এখন শুনতেছি এটা ফেরত দিতে হবে। এতে করে আমাদের সম্মান হানীর পাশাপাশি শ্রেণীতে মাথা নিচু করে থাকার পরিস্থিতি তৈরি হলো।
অভিভাবক জহুরুল ইসলাম জানান,স্কুলের নিয়মিত শিক্ষার্থীদের বাদ দিয়ে অনিয়মিত শিক্ষার্থী এবং কোচিং মুখি শিক্ষার্থীদের ট্যাব দেবার পায়তারা চলছে। কোচিং বন্ধে একাধিকবার প্রশাসনকে জানানো হলেও কোন পদক্ষেপ নেয়নি। কিন্তু আজ কে বা কারা মৌখিক অভিযোগ দিলো আর তাতেই ট্যাব ফেরত নেবার জন্য চিঠি দেয়া শুরু হয়েছে। এটা শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের জন্য কতটা লজ্জার তা কর্তৃপক্ষের বোধগম্য নয়।
অভিভাবক রোমেল মিয়া বলেন,ট্যাব দিলোই বা কেনো আর ফেরতই নিবে কেন? আমার মেয়ের নিকট থেকে ফেরত নেয়া সম্ভব না। শিক্ষার্থীদের মানসিক বিপর্যয়ের দায়ভার নিয়ে ট্যাব ফেরত নিয়ে যেতে হবে ইউএনওকে।
প্রধান শিক্ষক আব্দুস সফিক সরকার বলেন,ইউএনও স্যার ট্যাব ফেরত চেয়ে আমাকে চিঠি দিয়েছে। সেই আলোকে আমি শিক্ষার্থীদের নিকট থেকে ট্যাব ফেরত চেয়েছি। এখানে নিয়মিত শিক্ষার্থীরদেরকেই ট্যাব দেয়া হয়েছে। কর্তৃপক্ষ যেসব শিক্ষার্থীদেরকে ট্যাব দেবার কথা বলছে তারা আমার স্কুলের অনিয়মিত শিক্ষার্থী। তারা স্কুলেই আসেনা শুধু পরীক্ষার সময় এসে পরীক্ষা দেয়। পাশেই তারা নিয়মিত কোচিং করে। এই কোচিং থেকে হয়তোবা ইউএনও স্যারকে কেউ অভিযোগ করায় ট্যাব নিয়ে এমন উদ্ধুব্ধ পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে।
এই বিষয়ে পরিসংখ্যান তদন্তকারী মো: মাসুম মিয়া বলেন,ট্যাব বিতরণের পর স্থানীয় সংসদ সদস্য স্যারের পিএস পরিচয় দিয়ে আলতাফ হোসেন নামে একজন ব্যক্তি ফোনে মাধ্যমিক স্যারকে মৌখিক অভিযোগ করেন। সেই আলোকে আমাকে বলায় হয় তদন্ত করতে। আমি তদন্ত করে আমার কর্তৃপক্ষের নিকট প্রতিবেদন দিয়েছি।তবে ওই স্কুলে সরকারের বিধি মোতাবেক ট্যাব গুলো বিতরণ করা হয়নি বলেও তিনি জানান।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফারজানা জাহান বলেন,ট্যাব নিয়ে মৌখিক অভিযোগ পেয়েছি। সেই মোতাবেক পরিসংখ্যান তদন্তকারীকে তদন্ত করতে বলেছি। তদন্তে অনিয়মের সত্যতা পাওয়ায় ট্যাব ফেরত চেয়ে চিঠি দেয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।