কুড়িগ্রাম প্রতিনিধিঃ

কুড়িগ্রামের কচাকাটায় কবিরাজের কাছে চিকিৎসা নিতে গিয়ে ৫০ বছরের এক বিধবা নারী ধর্ষণের শিকার হয়েছে। ধর্ষণের শিকার ওই নারী তাৎক্ষনিক  ভাবে কচাকাটা থানায় হাজির হয়ে অভিযোগ দিলেও ব্যবস্থা নেয়নি পুলিশ। পরে স্থানীয় ইউপি সদস্য ও কিছু ব্যক্তি শালিস বসিয়ে অভিযুক্তদের  নিকট মোটা অংকের টাকা জরিমান নিয়ে ওই নারীকে ১৮ হাজার টাকা দিয়ে হুমকি ধামকি দিয়ে বিদায় করে দেবারও অভিযোগ উঠেছে। ভুক্তভোগী ঐ বিধবা নারীর বাড়ি নাগেশ্বরী উপজেলার কচাকাটা থানার বল্লভের খাষ ইউনিয়নের চরকৃঞ্চপুর গ্রামে। নিগৃহিত ওই নারী জানান, গত রবিবার দুপুরে কচাকাটা বাজারের নূর আয়ুর্বেদিক নামের দোকানের মালিক পার্শ্ববর্তি কেদার ইউনিয়নের মৃত হাছিম মুন্সির ছেলে কবিরাজ নূর হুদার (৪৫)কাছে চিকিৎসার জন্য যান তিনি। দোকানে অনেকক্ষন বসিয়ে রাখার পর কবিরাজ নূর হূদা তার সহযোগী মোল্লাপাড়া গ্রামের সৈয়দ আলীর ছেলে শামছুল (৩৫) এর সাথে তার বাড়িতে ওষুধ নিতে যেতে বলেন। কথা মতো তিনি শামছুলের বাড়িতে যান। এসময় শামছুলের বাড়িতে কেউ ছিলো না। ফাঁকা বাড়িতে নিয়ে গিয়ে একটি রুমে তাকে বসতে দেয় শামসুুল। এসময় কবিরাজ নূর হুদা সেই বাড়িতে এসে ওষুধ আনার কথা বলে চলে যান। তার যাওয়ার সাথে সাথেই আরেক সহযোগি হামেদ আলীর ছেলে শফিয়ার রহমান (৩২) হাজির হয়। পরে শামছুল এবং শফিয়ার দু’জনে মিলে জোর পূর্বক ধষর্ণ করে তাকে। প্রায় ঘন্টা খানেক ওই বাড়িতে মহিলাকে আটকিয়ে রাখে অভিযুক্তরা। তিনি আরে জানান,কৌশলে বাড়ি থেকে পালিয়ে কচাকাটা থানায় হাজির হয়ে ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার কাছে অভিযোগ দেন তিনি। পরদিন সোমবার বিকালে স্থানীয় কিছু লোকজন বিচার করে দেবে বলে থানার সামনে থেকে কচাকাটা বাজারের আসলাম হোসেনের বাড়িতে তাকে ডেকে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে শালিসের নামে  অভিযুক্ত তিনজনের কাছ থেকে ৮০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। এসময় শালিসে বল্লভেরখাস ইউপি সদস্য সাইফুর রহমান ও হুজুর আলী এবং স্থানীয় মনির হোসেনসহ আরো কয়েকজন উপস্থিত ছিলেন। পরে নির্যাতিত মহিলাকে ২০হাজার টাকা দিয়ে কচাকাটা থানার ওসির সামনে নিয়ে গিয়ে সবকিছু মিমাংসা হয়েছে বলে চলেন আসেন সবাই। থানা থেকে বেরিয়ে ইউপি সদস্য  সাইফুর রহমান তার কাছ থেকে খরচের কথা বলে আরো ২ হাজার টাকা হাতিয়ে নেন। তিনি  আরোও বলেন, এসব ঘটনা ঘটে যাওয়ার পর লজ্জায় আমি বাড়িতে যেতে পারছি না। সেদিন থেকে এখানে ওখানে আত্মীয়ের বাড়িতে কোন রকমে দিন কাটাচ্ছি। এ ব্যাপারে ইউপি সদস্য সাইফুর রহমান জানান, ওই নারী তার নাতীসহ এসে  আমাকে ডেকে নিয়ে গেছে, কত টাকা জরিমানা হয়েছে বা কত টাকা ওই নারী পেয়েছে আমি জানি না। আর থানায় আমাকে নিয়ে গেছে কিন্তু ওসির রুমে আমাকে থাকতে দেয়া হয়নি। তিনি অভিযোগ দিয়েছেন কিনা আমি বলতে পারি না। 
কচাকাটা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মামুন অর রশিদ জানান, ওই নারী থানায় এসেছিলো তবে কোন অভিযোগ করেননি। পরে শুনেছি স্থানীয়ভাবে মিমাংসা হয়েছে। ধর্ষণের বিষয়টি জেলা পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মহিবুল ইসলাম খানের নজরে আসার পর কচাকাটা থানা পুলিশকে ধর্ষকদের আটকসহ শালিসে জড়িতদের আইনের আওতায় আনার নির্দেশ দিলে বৃহস্পতিবার ভোরে ধর্ষক সৈয়দ আলীর ছেলে শামসুল হক (৪৫) ও মৃত হামেদ আলীর ছেলে শফিয়ার রহমানকে আটক করে। আটকের বিষয়টির সত্যতা স্বীকার করে ভুরুঙ্গামারী সার্কেলের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার মোঃ শওকত আলী জানান,ধর্ষকের সহযোগী নুরহুদা,আটককৃত শামসুল ও শফিয়ার রহমানের বিরুদ্ধে ধর্ষন মামলা এবং শালিসকারীদের বিরুদ্ধেও আইনগত ব্যবস্থাসহ আটককৃতদের জেলহাজতে প্রেরণ করা হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *