উৎসর্গ- জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে
কবিতা কাব্য
“ মুজিব থেকে জাতির জনক হয়ে ওঠার গল্প”
কবি-নাজমুল হুদা পারভেজ
প্রথম পর্ব
“স্মৃতিতে অম্লান শেখ মুজিবুর রহমান”
হৃদি, আজ ১৫ আগষ্ট। তোমাকে একটা গল্প বলব,
একজন সাধারণ মানুষ কীভাবে-
জাতির জনক হয়ে উঠলেন, সেই গল্প।
তুমি শুনে সত্যি অবাক হবে,
অবাক হওয়ার মতো একটা গল্প,
বঙ্গ বন্ধুর ধানমন্ডির ৩২ নম্বরের বাড়িটা দেখেছ কখনো?
সাদা দেয়ালে লেগে থাকা একফোঁটা রক্তের দাগ?
দেখে মনে হবে, তাজা রক্ত।
এই মাত্র রক্তের ফোঁটা ছিটকে লেগেছে দেয়ালে।
এই রক্ত, কোন সাধারণ মানুষের রক্ত নয়,
এই রক্তের সাথে মিল খুঁজে পাবে-
নবাব সিরাজ-উদ-দৌলা ,
নেতাজী সুভাষ বসু, তিতুমীর ,
সূর্য সেন কিংবা ক্ষুদিরামের রক্তের ।
যারা যুগে যুগে বাঙালীর মুক্তির কথা বলেছে-
বলেছে অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা ও চিকিৎসার কথা।
যারা প্রতিবাদ করেছে, শোষণ-নিপীড়ন,
অন্যায়, জুলুম এর বিরুদ্ধে
প্রতিবাদ করতে গিয়ে বুকের তাজা রক্ত ঢেলে দিয়ে
মাতৃকার ঋণ শোধ করেছে।
এই রক্তের দাগ একজন মহামানবের বুকে
বুলেটের আঘাতে ক্ষতবিক্ষত শরীরের রক্ত।
এ রক্ত একজন মহামানব জাতির জনক
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের রক্ত।
হৃদি, আজ তোমাকে একটা গল্প বলব বলে এখানে ডেকেছি-
ব্রহ্মপুত্র নদের ডান ক্লোজারের পাড়ে বসে তুমি, নদের নির্মল জল দেখছ
দেখছো পড়ন্ত বিকেলে সূর্যটাকে পশ্চিম দিগন্তে ঢলে পরার অপূর্ব দৃশ্য।
এই নদের জলে একদিন রক্তের লহর বয়ে গেছে- বয়ে গেছে অসংখ্য মৃত লাশ।
তুমি বাংলার শেষ স্বাধীন নবাব সিরাজ-উদ-দৌলার কথা শুনেছ নিশ্চয়ই,
বেইমান সেনাপতি মীরজাফরের কথা?
মীরজাফরের বেইমানির কারণে ১৭৫৭ সালে বাংলার স্বাধীনতার সূর্যটা-
নবাবের বুকের লাল রক্ত দিয়ে রাঙিয়ে, অস্তমিত হয়েছিল পশ্চিম দিগন্তে।
তারপর, এই মাটিতে দু’শত বছর বাঙ্গালীদের শোষণ ও নির্যাতনের
নির্মম ইতিহাস রচনা করেছিল ইংরেজরা। ঠিক সেই সময়-
গোপালগঞ্জের বাইগার নদীর তীরে সবুজে ঘেরা টুঙ্গিপাড়া গ্রামে
১৯২০ সালের ১৭ মার্চ জন্ম নিয়েছিলেন শেখ মুজিবুর রহমান।
যিনি এ গ্রামেই শৈশব, কৈশোর, ও যৌবন পাড়িয়ে,
একজন সাধারণ মানুষ,
কি করে মুজিব থেকে বঙ্গ বন্ধু
অতঃপর বাঙ্গালী জাতির জনক হলেন?
সে কথাই আজ বলব তোমাকে।
দেয়ালের এই রক্তের দাগটি সেই মহাপুরুষের। যা-
মীরজাফরের মতো স্বজনদের বেইমানি আর ষড়যন্ত্রের হাত ধরে
বিপথগামী কিছু সেনা সদস্যের নিষ্ঠুর নির্মমতার সাক্ষী হয়ে আছে আজও।
দেয়ালে লেগে থাকা এই লাল রক্তের দাগ।
ধানমন্ডির ৩২ নম্বর বাড়ির দেয়ালে- সিঁড়িতে শুধু নয়,
ছড়িয়ে গেছে সমস্ত বাংলায়।
কৃষকের নাঙ্গলের ফলায় আর রাখালের বাঁশির করুণ সুরে।
সবুজ শ্যামল এই বাংলার লাল সবুজের পতাকায়-
ছড়িয়ে গেছে বাংলার মানচিত্রে- কোটি মানুষের হৃদয়ে।
চিরদিনের জন্য নিথর নিশ্চুপ হয়ে গেছে দৃঢ়তার একটি আঙুল
আর আগুন ঝরানো কণ্ঠস্বর।
যে কণ্ঠস্বর আজও বাতাসে ভাসে, আজও বাঙালীর স্মৃতিতে অম্নান-
বঙ্গ বন্ধুর ৭ই মার্চের সেই অগ্নিঝরা ঐতিহাসিক ভাষণ।
(চলবে)