ইশরাত জাহান চৌধুরী, মৌলভীবাজার ঃ
হাস্যকর ও প্রহসনে পরিণত হয়েছে মৌলভীবাজার জেলার কমলগঞ্জ উপজেলাকে বাল্যবিয়েমুক্ত ঘোষনার লাখোকন্ঠে শপথ গ্রহণ। প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে পড়েছে কমলগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে জেলার শ্রেষ্ঠ উপজেলা নির্বাহী অফিসার নির্বাচিত করার বিষয়টিও। একটি বাল্যবিয়ে সংঘটনকে কেন্দ্র করে এমনই প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে জনমনে।
জানা গেছে- মৌলভীবাজার জেলার বাল্যবিয়ে মুক্ত কমলগঞ্জ উপজেলার ১নং রহিমপুর ইউনিয়নের ৭নং ওয়ার্ড মেম্বার বুলবুল আহমদ ওয়াতির এর উপস্থিতিতে ধর্মপুর গ্রামের মতিন মিয়ার কিশোর পুত্র রিপন মিয়ার সাথে জসমতপুর গ্রামের লোকমান মিয়ার কিশোরী কন্যা জলি বেগমের বিয়ে সম্পন্ন হয় গত ২১ আগষ্ট সোমবার কনের নানাবাড়ীতে। স্থানীয় একজন সাংবাদিক বাল্যবিয়ের বিষয়টি উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে অবহিত করলে তার নির্দেশে পুলিশ ফোর্সসহ কমলগঞ্জ থানার এসআই ইকবাল ঘটনাস্থলে যান। কিন্তু, তিনি ওই বাল্যবিয়ে বন্ধে কোন ব্যবস্থা না নিয়ে ফিরে যান। খবর পেয়ে এ প্রতিনিধিসহ ৫ জন সাংবাদিক সরেজমিন বিয়ের অনুষ্ঠানস্থল কনের নানাবাড়ীতে গিয়ে জানতে পারেন বিয়ে সম্পন্ন হয়ে বর-কনেকে বিদায় দেয়া হয়েছে। এসময় সাংবাদিকরা বরের পিত্রালয়ে গিয়ে উপস্থিত লোকজনের সম্মুখে বর ও কনেকে দেখেন এবং বর, কনে, উপজেলা নির্বাহী অফিসার, কমলগঞ্জ থানার এসআই ইকবাল ও ওয়ার্ড মেম্বার বুলবুল আহমদ ওয়াতিরের বক্তব্যসহ বাল্যবিয়ের সচিত্র সংবাদ পরিবেশন করেন। এ কারণে ওয়ার্ড মেম্বার বুলবুল আহমদ ওয়াতির তার ওয়ার্ডের বাসিন্দা একজন সাংবাদিককে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ ও হুমকি ধমকি প্রদর্শন করে চলেছেন। অপরদিকে, কমলগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার জানিয়েছিলেন- পরদিনই এ বাল্যবিয়ের বর ও কনের অভিভাবক, বিয়ে নিবন্ধনকারী নিকাহ রেজিষ্ট্রার ও মেম্বার বুলবুল আহমদ ওয়াতিরের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবেন। এমতাবস্থায় পরদিন ২২ আগষ্ট বরের পক্ষ থেকে উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবর লিখিতভাবে ওয়ার্ড মেম্বার বুলবুল আহমদ ওয়াতিরের বিরুদ্ধে ওই বাল্যবিয়ে সংঘটনের অভিযোগ দায়ের করা হয়। কিন্তু, এ সংবাদ পরিবেশন পর্যন্তও উপজেলা নির্বাহী অফিসার ওই বাল্যবিয়ের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেননি।
অথচ, বাল্যবর রিপন মিয়া নিজেই সাংবাদিকদেরকে জানিয়েছিল- আমি এ বিয়েতে রাজী নই। আমার বড় দুই ভাই এখনও বিয়ে করেনি। আমাকে জোর করে বিয়ে করানো হয়েছে। বাল্যবধু জলি বেগম জানিয়েছিল- আমি ৪ বছর আগে আনন্দ স্কুলের ফোর-এ পড়তাম। ১নং রহিমপুর ইউপির নিকাহ রেজিষ্ট্রার সহকারী আনোয়ার হোসেন জানিয়েছিলেন তিনি জন্ম নিবন্ধন সনদের ভিত্তিতে ওই বিয়ে লিপিবদ্ধ করেছেন। এ ব্যাপারে বিস্তারিত ওয়াতির মেম্বারের জানা আছে এবং তার উপস্থিতিতে তারই নিশ্চিতকরণ সাপেক্ষে আমি ওই বিয়ে লিপিবদ্ধ করেছি। মৌলভীবাজারের একজন আইনজীবী সহকারী নজরুল ইসলাম জানিয়েছেন- দুটি ছেলেমেয়ের বয়স ২২ ও ১৮ বছর মর্মে এফিডেভিট করার জন্য একব্যক্তি রিপন মিয়া ও জলি বেগমকে নিয়ে আমার কাছে এসেছিল। কিন্তু, কাংখিত বয়স সংক্রান্ত কোন প্রমানপত্র না থাকায় আমি তাদেরকে ফিরিয়ে দিয়েছিলাম। সর্বোপরী, সাংবাদিকদের অনুসন্ধানকালে মুন্সিবাজার কালী প্রসাদ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক লিখিতভাবে প্রত্যয়ন করেন বাল্যবধু জলি বেগম ২০১৫ সালে তারই বিদ্যালয়ের ৬ষ্ট শ্রেনীর ছাত্রী ছিল। এককথায়- রিপন মিয়া ও জলি বেগমের বিয়েটি যে বাল্যবিয়ে তা সর্বপ্রকারে নিশ্চিত সত্তেও কমলগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার অদ্যাবধি কোন আইনী ব্যবস্থা না নেয়ায় কমলগঞ্জ উপজেলাকে বাল্যবিয়েমুক্ত ঘোষনার লাখোকন্ঠে শপথ গ্রহণ পরিণত হয়েছে হাস্যকর ও প্রহসনে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *