কাউনিয়া (রংপুর) প্রতিনিধি:
রংপুরের কাউনয়ায় শিশুদের টিকাদানের পর টাকার বিনিময়ে ইপিআই টিকা কার্ড দেয়ার অভিযোগ উঠেছে আব্দুল মবিন নামের এক স্বাস্থ্য সহকারির বিরুদ্ধে। অপরদিকে স্বাস্থ্য বিভাগ থেকে পর্যাপ্ত টিকা কার্ড সরবরাহ থাকলেও উপজেলায় গত ছয় থেকে আট মাসে জন্ম নেওয়া অধিকাংশ শিশু টিকাদানের পর মিলছে না টিকা কার্ড।
অভিযোগ উঠেছে, কতিপয় স্বাস্থ্য সহকারিরা টিকা কার্ডের সংকটের সৃষ্টি করে শিশুদের অভিভাবকের নিকট আর্থিক ফায়দা নেওয়ার পাঁয়তারা করেছে। অন্যদিকে শিশুদের টিকাদানের পর টিকা কার্ড না পাওয়ায় জন্মনিবন্ধনে বিড়ম্বনায় পড়েছে৷ নবজাতকের অভিভাবকরা।

উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ইপিআই (সম্প্রসারিত টিকাদান কর্মসূচি) মেডিকেল টেকনোলজিষ্ট রশিদুল ইসলাম জানান, উপজেলার ছয়টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভার বিভিন্ন কেন্দ্রে শূন্য থেকে ১৫ মাস বয়সী শিশুদের টিকা দেওয়া হয়। সে জন্য মাসে ৪৬৫টি নতুন টিকা কার্ডের প্রয়োজন হয়। চাহিদা অনুযায়ী প্রতিমাসে স্বাস্থ্য সহকারিদের ইপিআই টিকা কার্ড সরবররাহ করা হয়।
ইপিআই মেডিকেল টেকনোলজিষ্ট রশিদুল ইসলাম বলেন, যে কোনো শিশুর পরিচয়ে জন্মনিবন্ধন সনদ না পাওয়া পযর্ন্ত দালিলিক প্রমাণ হলো ইপিআই (সম্প্রসারিত টিকাদান কর্মসূচি) টিকাকেন্দ্র থেকে পাওয়া হলুদ কার্ড। প্রত্যেক শিশুর জন্য জন্মনিবন্ধনের এই কার্ড অপরিহার্য। স্বাস্থ্য বিভাগ থেকে কাউনিয়া উপজেলায় পর্যাপ্ত টিকা কার্ড সরবরাহ রয়েছে। এরপরও শিশুদের টিকাদানের পর টিকা কার্ড না পাওয়ার অভিযোগ উঠেছে। এমনকি টাকার বিনিময়ে ইপিআই টিকা কার্ড দেয়ার অভিযোগ উঠেছে এক স্বাস্থ্য সহকারির বিরুদ্ধে। বিষয়টি উপজেলা স্বাস্থ্য প্রধান কর্মকর্তাকে অবগত করা হয়েছে।
হারাগাছ পৌর এলাকার সারাই মধ্যপাড়ার বাসিন্দা মিমি বলেন, তাঁর কন্যা শিশুর বয়স দুই মাস। একই এলাকার ইসলামের বাড়ীতে গত বুধবার (২২ ফেব্রুয়ারী) ইপিআই কেন্দ্রে তাঁর শিশুর তৃতীয় ডোজ টিকা গ্রহণ করেন। টিকাদানের পর কেন্দ্রের দায়িত্বে থাকা স্বাস্থ্য সহকারি আব্দুল মবিন তাকে জানান, টিকা কার্ডের সরবরাহ নেই। কার্ড নিতে হলে একশত টাকা দিতে হবে। পরে তিনি স্বাস্থ্য সহকারিকে টাকা দিয়ে টিকা কার্ড নেয়।
সারাই মধ্যপাড়ার বাসিন্দা ভোলা আসমানী বেগম বলেন, তাঁর শিশুর বয়স তিন মাস। একই এলাকার ইপিআই টিকাদানের পর এখনো কার্ড পাননি তিনি। তাই সন্তানের এখনো জন্মনিবন্ধনও করাতে পারেননি।
শনিবার (২৫ ফেব্রুয়ারী) উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কথা হয় বেশ কয়েকজন নবজাতকের অভিভাবকের সাথে।রাজিব গ্রামের পারভিন আকতার জানায়, তাঁর শিশুর বয়স দুই মাস। রাজিব এলাকায় ইপিআই টিকাদানের পর এখনো কার্ড পাননি তিনি। টিকা কার্ড নাকি টাকা দিয়ে কিনে নিতে হবে জানিয়েছেন ইপিআই কেন্দ্রে দায়িত্বরত।

বিনোদমাঝী গ্রামের ইসমি আরা বলেন, তাঁর শিশুর বয়স আট মাস। ইপিআই টিকাদানের পর তাকে টিকা কার্ড দেওয়া হয় নাই। স্বাস্থ্য সহকারিরা জানিয়েছেন, টিকা কার্ড সরবরাহ নাই তাই সাদা কাগজেই লিখে দেওয়া হচ্ছে পরবর্তী টিকাদানের তারিখ।
শহীদবাগ বল্লভবিষু গ্রামের বাসিন্দা প্রতিমা রানী বলেন, তাঁর শিশুর চারটি টিকা দেওয়া হয়েছে, কিন্তু কার্ড পাননি এখনো। হাতে সাদা কাগজে স্লিপ দিয়ে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু জন্মনিবন্ধনের জন্য শিশুর ইপিআই টিকা কার্ড চাওয়া হচ্ছে।
এদিকে নবজাতক শিশুর অভিভাবকদের ভাষ্য, টিকা কার্ড সব শিশুর জন্যই গুরুত্বপূর্ণ একটি সনদ। বিশেষ করে জন্মনিবন্ধনের সনদের জন্য কার্ডটি থাকা বাধ্যতামূলক। আর কার্ডটি না পেয়ে জন্মনিবন্ধন করতে গিয়ে ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে তাঁদের। তাই তাঁরা শিশুদের দেওয়া ইপিআই টিকার কার্ড দ্রুত বিতরণের দাবি জানান।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ মীর হোসেন বলেন, ইপিআই টিকা কার্ড পর্যাপ্ত সরবরাহ নাই, সেটি ঠিক নয়। পযাপ্ত টিকা কার্ড আছে এবং চাহিদা অনুযায়ী স্বাস্থ্য সহকারিদের টিকা কার্ড সরকরাহ করা হচ্ছে। টিকাদানের পরও সব নবজাতক শিশুদের টিকা কার্ড দেয়া হচ্ছে। যদি কোন নবজাতকের অভিভাবক ইপিআই টিকা কার্ড না পেয়ে থাকে অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেয়া হবে। এছাড়া এক স্বাস্থ্য সহকারির বিরুদ্ধে টাকার বিনিময়ে নবজাতকের অভিভাবককে ইপিআই টিকা কার্ড দেয়ার আমরা মৌখিক অভিযোগ পেয়েছি।
জেলা সিভিল সার্জন ডাঃ শামীম আহমেদ বলেন, শিশুমৃত্যুর হার কমাতে শূন্য থেকে ১৫ মাস বয়সী শিশুদের সাতটি টিকা দেওয়া হয়। সম্প্রসারিত টিকাদান কর্মসূচি (ইপিআই) বিনা মূল্যে টিকা কার্ড সরবরাহ করার নিয়ম। যদি কোন স্বাস্থ্য সহকারি টাকার বিনিময়ে টিকা কার্ড সরবরাহ করে থাকে তাঁর বিরুদ্ধে ছবি সহ নিউজ করেন।
আর রংপুর বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডাঃ এ.বি.এম আবু হানিফ বলেন, টিকা কার্ড প্রদানের বিষয়টি সংশ্লিষ্ট উপজেলা স্বাস্থ্য কমর্কর্তা দেখভাল করে। ইপিআই কার্যক্রম সফলতায় মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এয়ার্ড পেয়েছেন। আর সরকারের ইপিআই কার্যক্রম কোন স্বাস্থ্য সহকারি বিঘিœত করতে টিকা কার্ড সরবরাহ না করা এবং টাকার বিনিময়ে টিকা কার্ড সরবরাহ করার যে অভিযোগ উঠেছে সংশ্লিষ্ট উপজেলা স্বাস্থ্য কমর্কর্তাকে খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেওয়া নির্দেশ দেয়া হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরো পড়ুন