তৈয়বুর রহমান, কুড়িগ্রামঃ
আওয়ামী লীগ নেতার হাতে শিক্ষক লাঞ্ছিত হওয়ার রেশ না কাটতেই এবার বিএনপি নেতার হাতে কুড়িগ্রাম সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের সিনিয়র শিক্ষক লাঞ্চিত হলেন। এ ঘটনায় শিক্ষক ও সচেতন মহলে তোলপাড় শুরু হয়েছে । আহত শিক্ষক তার নিরাপত্তা ও ন্যায় বিচার চেয়ে ইতোমধ্যে ৪ জনকে অভিযুক্ত করে কুড়িগ্রাম সদর থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন সদর থানা অফিসার ইনচার্জ খান মোঃ শাহরিয়ার।
নেক্কারজনক এ ঘটনাটি ঘটেছে, রোববার দুপুর ১২ টার দিকে ঐ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের কার্যালয়ে।
প্রত্যক্ষদর্শী সুত্রে জানাগেছে,রোববার দুপুরে কুড়িগ্রাম জেলা বিএনপি’র বর্তমানে সহ- ছাত্রবিষয়ক সম্পাদক ও জেলা ছাত্রদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মাসুদ রানা তার কয়েকজন সহযোগী সহ প্রধান শিক্ষকের কার্যালয়ে যান।সেখানে মাসুদ রানা তার সন্তানের ভর্তি বাতিল সংক্রান্ত বিষয়ে বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতা নিয়ে ওই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিক জিয়াসমিন আরা হকের সাথে বাকবিতন্ডায় জড়িয়ে পড়েন।
এ খবর ওই বিদ্যালয়ের সিনিয়র শিক্ষক মোঃ আব্দুল হাই সিদ্দিকীর কাছে পৌছিলে তিনি দ্রুত স্কুলে ছুটে আসেন এবং উত্তপ্ত পরিস্থিতি শান্ত করার চেষ্টা করেন। এ সময় অভিযুক্ত বিএনপি নেতা সহ তার সাঙ্গোপাঙ্গরা মিলে প্রধান শিক্ষকের কার্যালয়ে সহকারী শিক্ষক আব্দুল হাই সিদ্দিকীর উপর চরাও হন এবং তাকে এলোপাতাড়ি ভাবে মারধর করে আহত করেন। পরবর্তীতে উপস্থিত লোকজন ও অন্যান্য শিক্ষকদের হস্তক্ষেপে সিনিয়র শিক্ষক আব্দুল হাই সিদ্দিকী তাদের হাত থেকে রক্ষা পান। আহত শিক্ষক প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে ওই দিনই ঘটনার সাথে জড়িত
জেলা বিএনপি’র ছাত্র বিষয়ক সম্পাদক মাসুদ রানা, তার সহযোগী রুমন মিয়া, আমিনুর রহমান ও বিদ্যুৎ চার জনের নাম উল্লেখ করে সদর থানায় লিখিত অভিযোগ করেন।
এদিকে সিসি ক্যামেরায় ধারণ কৃত শিক্ষককে লাঞ্চিত করা দৃশ্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে জেলাজুড়ে সচেতন মহল ও শিক্ষকদের মাঝে তোলপাড় শুরু হয়।
নির্যাতনের শিকার শিক্ষক মোঃ আব্দুল হাই সিদ্দিকী জানান, বিদ্যালয়ের একজন পিয়নের মাধ্যমে খবর পাই কয়েকজন অভিভাবক তাদের সন্তানদের ভর্তি বাতিল সংক্রান্ত বিষয়ে প্রধান শিক্ষকের সাথে বাকবিতন্ডা হচ্ছে । আমি দ্রুত সেখানে পৌঁছে তাদের শান্ত করার চেষ্টা করলে মোল্লাপাড়ার ব্যবসায়ী আব্দুল আজিজ মিয়ার ছেলে জেলা বিএনপি নেতা মাসুদ রানা প্রথমে আমার ওপর চড়াও হয়। এরপর ধাক্কাতে ধাক্কাতে প্রধান শিক্ষকের রুমের এক কোনায় নিয়ে অকথ্য গালাগাল দিতে থাকে। এক পর্যায়ে তার সহযোগীরা সবাই মিলে কিলঘুষি মেরে শরীরের বিভিন্ন স্থানে ফুলা যখন করে। বর্তমানে আমি মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছি ও নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি।
অভিযুক্ত মাসুদ রানা জানান, আমার সন্তানকে গত ১৮ ডিসেম্বর স্কুলে ভর্তি করাই। পরে গত ২৮ ডিসেম্বর স্কুলের নোটিশ বোর্ডের মাধ্যমে জানতে পারি আমার সন্তানসহ ৪২ জন শিক্ষার্থীর ভর্তি বাতিল করা হয়েছে। সে ব্যাপারে কয়েকজন অভিভাবকসহ প্রধান শিক্ষককে দরখাস্ত দিয়ে কপি গ্রহণ করি। এ সময় কথা বলার এক পর্যায়ে একজন শিক্ষক উত্তেজিত হয়ে পড়লে তার সঙ্গে আমার কথা-কাটাকাটি হয়। আমি কাউকে মারধর করিনি।
সরকারি উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জিয়াসমিন আরা হক ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, স্কুলে ভর্তির বিষয়ে অভিভাবকগণ শিক্ষার্থীদের নামে একাধিক আবেদন করায় ঢাকায় মন্ত্রণালয় থেকে ৪২ জন শিক্ষার্থীর ভর্তি বাতিল করেন। এ নিয়ে কিছু অভিভাবক কথা বলতে গিয়ে আমার সঙ্গে অসৌজন্যমূলক আচরণ করে। এরই প্রতিবাদ করায় সিনিয়র সহকারী শিক্ষক আব্দুল হাই সিদ্দিকীর ওপর চড়াও হন অভিভাবক মাসুদ রানা। তিনি অকথ্য ভাষায় কথা বলতে বলতে তাকে ধাক্কাতে ধাক্কাতে এক কোনায় নিয়ে যান এবং কিলঘুষি মেরে আহত করে। এ ব্যাপারে মাসুদ রানাসহ কয়েকজনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা আরও কয়েকজনের নামে কুড়িগ্রাম সদর থানায় অভিযোগ দায়ের করা হয়। আমরা এর সুষ্ঠু বিচার চাই।
কুড়িগ্রাম সদর থানার অফিসার খান মোঃ শাহরিয়ার বলেন, এ ঘটনায় অভিযোগ পেয়েছি। তদন্ত করে প্রয়োজনীয় আইনি পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে হবে।