হুমায়ুন কবির সূর্য, বার্তা পরিবেশক, কুড়িগ্রাম:
কুড়িগ্রামে প্রধান প্রধান নদ-নদীর পানি কিছুটা কমলেও সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির কোন উন্নতি ঘটেনি। বিশেষ করে ধরলা তীরবর্তী মানুষ এখনো ঘরে পানিবন্দী অবস্থায় দিন কাটাচ্ছে। শনিবার দুধকুমার নদীর পানি সোনাহাট ব্রীজ পয়েন্টে ২২ সেন্টিমিটার কমে গিয়ে বিপৎসীমার ৩২ সেন্টিমিটার এবং ধরলা নদীর পানি সেতু পয়েন্টে ৫ সেন্টিমিটার কমে গিয়ে বিপৎসীমার ১৮ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। অপরদিকে কাউনিয়া ব্রীজ পয়েন্টে তিস্তা নদীর পানি ১৮ এবং ব্রহ্মপূত্র নদের পানি চিলমারী পয়েন্টে ২৫ সেন্টিমিটার নীচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। গত ৪/৫দিন ধরে বন্যার পানি অবস্থান করায় পানিবন্দী মানুষ শুকনো খাবার ও বিশুদ্ধ পানির সঙ্কটে ভুগছে। দেখা দিয়েছে গো-খাদ্য ও তীব্র জ¦ালানী সঙ্কট। বন্যার কারণে স্যানিটেশন ব্যবস্থা ভেঙ্গে গেছে। জরুরী ভিত্তিতে এসব মানুষের প্রয়োজন শুকনো খাবারের।
এদিকে বন্যায় ৪৫ ইউনিয়নের ১৮৫টি গ্রাম প্লাবিত হওয়ায় লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দী হয়েছে। এতে নদী ভাঙনের কবলে পরেছে প্রায় ২ হাজার মানুষ।
কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল্লাহ আল মামুন জানান, আগামি ২/৩দিরে মধ্যে পানি নেমে যাবে বলে আশা করা হচ্ছে। তবে বাংলাদেশের উজানে অতিরিক্ত বৃষ্টিপাত হওয়ায় তার প্রভাবও পরতে পারে।
কুড়িগ্রাম ত্রাণ ও পুনর্বাসন কেন্দ্রের প্রচারিত তথ্যে জানা গেছে জেলায় ৭৬টি ইউনিয়নের মধ্যে ৪৫টি ইউনিয়ন পানিবন্দী হয়ে ১৮৫টি গ্রাম ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এতে নদী ভাঙন ও বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ৬২ হাজার ৮৮০জন মানুষ। এছাড়ও ৫টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সম্পূর্ণ ও ২টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের আংশিক ক্ষতি হয়েছে।
কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার ভোগডাঙ্গা ইউনিয়নের নন্দ দুলালের ভিটার কছিরন, সাহাব আলী ও আইনুল জানান, এখানে দেড়শ’ পরিবার পানিবন্দী হয়ে আছে। গতকাল ডিসি স্যার ইউএনও স্যার একশজনকে শুকনো খাবার দিয়েছেন। বাকীরা না পেয়ে হতাশ।
সদরের মোগলবাসা ইউনিয়নের গাড়িয়ালপাড়া ও মুন্সিপাড়া গ্রামের মহব্বত আলী ও সেকেন্দার জানান, বন্যায় গত৫/৬দিন ধরে পটলক্ষেত, পাটক্ষেত, বীজতলা ও সবজি ক্ষেত তলিয়ে গেছে। যোগাযোগর রাস্তাঘাট তলিয়ে যাওয়ায় মানুষ বাড়ি থেকে বের হতে পারছে না।
হযরত আলী বলেন, পানি ঘরে ঢুকে পড়ায় খাট তলিয়েগেছে। রান্নার চুলা পানির নীচে। ঘরে চাল থাকলেও আগুন জ¦ালানোর কোন উপায় নেই। ফলে উপস করতে হচ্ছে। প্রয়োজ শুকনো খাবার। কিন্তু ঘর থেকে বাইরে বের হওয়ার উপায় নেই। একই অবস্থা বিরাজ করছে বন্যাদুর্গত এলাকায়।
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সাইদুল আরীফ জানান, প্লাবিত অধিবাসীদের সহযোগিতা করতে সদাশয় সরকারের কাছ থেকে ৬৫০ মেট্রিকটন চাল, ১০ লক্ষ নগদ টাকা ও ২ হাজার শুকনো খাবার বরাদ্দ পেযেছি। তারমধ্যে আমরা ২৭৫ মেট্রিকটন চাল, ৯ লাখ টাকা ও শুকনো খাবার বিতরণ করেছি। এর বাইরেও বিভিন্ন সংস্থা ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠান সহযোগিতার হাত বাড়িয়েছে। আমাদের ৩৬১টি অস্থায়ী এবং ১৮টি স্থায়ী আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রয়েছে। এছাড়াও বানভাসীদের উদ্ধারের জন্য আমাদের ৪টি রেসকিউ বোটসহ ২৭৫টি শ্যালো নৌকা প্রস্তুত রয়েছে। আমরা যে কোন ধরণের জরুরী পরিস্থিতি মোকাবেলা করার জন্য প্রস্তুত রয়েছে।