কুষ্টিয়া প্রতিনিধিঃ
কুষ্টিয়ার মিরপুরে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে আওয়ামী লীগের দুই পক্ষের সংঘর্ষে যুবলীগের নিহত কর্মী শাহাবুদ্দিন আহমেদের লাশ নিয়ে বিক্ষোভ করেছেন নেতা-কর্মীরা। গতকাল সোমবার সকালে কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে ময়নাতদন্ত শেষে দুপুরে তাঁর মৃতদেহ আমলা বাজারে নেওয়া হয়। এ সময় সেখানে আগে থেকে জড়ো হওয়া নেতা-কর্মীরা লাশ নিয়ে বিক্ষোভ মিছিল করেন। আমলা বাজারের পাঁচ শতাধিক দোকানপাট বন্ধ রয়েছে।
খুনের ঘটনায় গতকাল সন্ধ্যায় এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত মামলা হয়নি। তবে রোববার রাতে আমলা এলাকায় অভিযান চালিয়ে হত্যায় জড়িত সন্দেহে পুলিশ তিনজনকে আটক করেছে। অভিযান অব্যাহত রয়েছে বলে পুলিশ জানিয়েছে।
গত রোববার বিকেলে উপজেলার আমলা বাজারে স্থানীয় আওয়ামী লীগের দুই পক্ষের সংঘর্ষে যুবলীগ কর্মী শাহাবুদ্দিন আহমেদ নিহত ও তিনজন আহত হন। আহত ব্যক্তিদের মধ্যে সাইদুল ইসলাম ঢাকার একটি বেসরকারি হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিউ) ভর্তি আছেন। তাঁর অবস্থা আশঙ্কাজনক। বাকি দুজন কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান কামারুল আরেফিন এবং উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও আমলা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান আনোয়ারুল ইসলামের বিরোধে তাঁদের সমর্থকদের মধ্যে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে এ সংঘর্ষ হয়।
এদিকে খুনের ঘটনার প্রতিবাদে উপজেলা আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতারা প্রতিবাদে মাঠে নেমেছেন। তাঁরা এ ঘটনার জন্য কামারুল আরেফিনকে দায়ী করছেন। গতকাল দুপুরে শাহাবুদ্দিনের মৃতদেহ আমলা বাজারে নিয়ে আসা হয়। এরপর নেতা-কর্মীরা লাশ নিয়ে বাজার এলাকায় বিক্ষোভ করেন। মিছিলে কামারুলসহ তাঁর অনুসারী কয়েকজন নেতার নাম উল্লেখ করে বিভিন্ন স্লোগান দেওয়া হয়। এতে নেতৃত্ব দেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবদুল হালিম, কুষ্টিয়া জেলা যুবলীগের আহ্বায়ক রবিউল ইসলাম, মিরপুর পৌরসভার মেয়র আওয়ামী লীগ নেতা এনামুল হক ও উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আনোয়ারুল ইসলাম। মিছিল শেষে সংক্ষিপ্ত এক সমাবেশে নেতারা সংঘর্ষ ও খুনের বিষয়ে কামারুলকে সরাসরি দায়ী করে বক্তব্য দেন। তাঁরা অবিলম্বে কামারুলকে দল থেকে বহিষ্কার ও গ্রেপ্তারের দাবি জানান।
সমাবেশ শেষে কয়েক হাজার নেতা-কর্মী আমলা বাজারে কুষ্টিয়া-মেহেরপুর সড়কের দুই পাশে দাঁড়িয়ে মানববন্ধন করেন। এ সময় তাঁরা হত্যার সুষ্ঠু তদন্ত ও দোষী ব্যক্তিদের ফাঁসির দাবি জানান। বিকেলে শাহাবুদ্দিনের লাশ গ্রামের বাড়ি শাহাপুরে দাফন করা হয়।
আমলা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, গত ৬ মে কুষ্টিয়া শহরে বৈঠকে সব বিরোধ মিটমাট করিয়ে দেওয়া হয়। তারপরও সংঘর্ষে একটা তাজা প্রাণ চলে গেল। এ খুনের দায় কামারুল আরেফিনকেই নিতে হবে।
মিরপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রফিকুল ইসলাম বলেন, এ ঘটনায় জড়িত সন্দেহে রাবিজ আরেফিন, সোহাগ হোসেন ও ফিরোজ হোসেন নামে তিনজনকে আটক করা হয়েছে। থানায় এখনো মামলা হয়নি। যে-ই জড়িত থাকুক, তদন্ত করে সবার বিরুদ্ধে আইনানুগ কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
কুষ্টিয়া জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সদর উদ্দীন খান বলেন, তদন্তে দলের কোনো নেতার বিরুদ্ধে যদি সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পাওয়া যায়, তবে দল থেকে তাঁর বিরুদ্ধে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।