মনজুর হোসেন ঈসাঃ
বাংলাদেশ জাতীয় মানবাধিকার সমিতি কুষ্টিয়া শাখা ও ভয়েস অফ কুষ্টিয়া যৌথ আয়োজনে কুষ্টিয়ায় ঐতিহ্যবাহী তিন দিনের লাঠি খেলা উৎসব শুরু হয়েছে। কুষ্টিয়া সদর উপজেলার বটতৈল ইউনিয়নের কবুরহাট ওস্তাদ সামছদ্দিন স্মরনে ওস্তাদ শের আলীর পরিচালনায় (৪ অক্টোবর) সকালে স্থানীয় বালিমাঠে আনুষ্ঠানিক লাঠি খেলার উদ্বোধন করেন বটতৈল ইউনিয়ন আ’লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা আবু বক্কর সিদ্দিক। এসময় উপস্থিত ছিলেন, বাংলাদেশ জাতীয় মানবাধিকার সমিতি কুষ্টিয়া জেলা শাখার সিনিয়র সহ-সভাপতি সাংবাদিক অর্পণ মাহমুদ, সাধারণ সম্পাদক শাহারিয়া ইমন রুবেল, কুষ্টিয়া সদর উপজেলা শাখার সভাপতি আবু মনি সাকলায়েন এলিন প্রমূখ।
উদ্বোধনের পর শুর হয় ঢাক-ঢোল আর লাঠির তালে তালে নাচা নাচি। অন্য দিকে প্রতিপক্ষের হাত থেকে আত্মরক্ষার কৌশল অবলম্বনের প্রচেষ্টা সম্বলিত টান টান উত্তেজনা,প্রতিপক্ষকে লাঠি দিয়ে ঘায়েল করার যেনো এক যুদ্ধস্থান এই কৌশলটাই লাঠি খেলায় বিনোদনের প্রান ফিরে পেয়ে থাকেন উপস্থিত দর্শকরা।
কবুররহাট কদমতলার লাঠিয়াল দল গ্রামীণ সংস্কৃতির একটি অংশ ঐতিহ্যবাহী এই খেলাটি এখনো ধরে রাখার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। আবহমানকাল ধরে কুষ্টিয়ারর বিভিন্ন এলাকায় এক সময় বিনোদনের খোরাক জুগিয়েছে এই লাঠি খেলা। কিন্তু কালের বির্বতণে মানুষ আজ ভুলতে বসেছে এই খেলাটি। তবুও বিনোদন প্রেমি মানুষের বিনোদনের খোরাক জোগাতেই এই লাঠি খেলার আয়োজন করা হয়েছে বলে জানান আয়োজকরা।
উদ্বোধনের আগে এক সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে বীর মুক্তি যোদ্ধা আবু বক্কর সসিদ্দিক বলেন, গ্রামীন ঐতিহ্য রক্ষায় সরকারি-বেসরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় গ্রামবাংলার হারিয়ে যাওয়া গ্রামীণ ঐতিহ্য সব খেলা রক্ষার উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন রয়েছে। আর মাদক থেকে যুব সমাজকে দূরে রাখতে এই সমস্ত খেলার কোন বিকল্প নেই। তিনি যত দিন বেচে থাকবেন এই এলাকার এই লাঠিয়াল দলের সার্বিক সহযোগিতা করবেন বলে আশ্বস্ত করেন।
আয়োজক সাংবাদিক অর্পণ মাহমুদ জানান, গ্রামবাংলার ঐতিহ্যবাহী লাঠিখেলা। মাদক, জঙ্গিবাদ, অপসংস্কৃতি থেকে রক্ষা, সৌহার্দ্য-সম্প্রীতি বৃদ্ধি ও দেশীয় সংস্কৃতি তুলে ধরতে এলাকাবাসী সার্বিক সহযোগিতায় গ্রামীণ মানুষদের নিয়ে কয়েক বছরে লাঠি খেলার আয়োজন করে আসছে।
প্রতি বছরের তিন দিনের এই খেলা দেখতে বিভিন্ন থেকে শত শত নারী-পুরুষ, বৃদ্ধ-শিশু ভিড় জমান। খেলার মাঠ পরিণত হয় এলাকার মানুষের মিলন মেলায়।
খেলায় অংশ নেওয়া প্রবীণ লাঠিয়ালরা জানান, তারা প্রায় ২০ বছর ধরে বিভিন্ন এলাকায় লাঠি খেলে থাকেন। তবে এই খেলার সঙ্গে জড়িতরা প্রায় সবাই গরিব। তারা দুঃখ-দৈন্যে জীবনযাপন করেন। তাদের জন্য সরকারিভাবে কোনো সুযোগ-সুবিধার ব্যবস্থা নেই। তেমন কোনো ব্যবস্থা হলে নিয়মিত চর্চা ও প্রশিক্ষণের মাধ্যমে তারা এই খেলাকে আরও বড় পরিসরে মানুষের সামনে তুলে ধরতে পারবেন বলে আশাবাদি।
এবারের এ লাঠিখেলায় কুষ্টিয়াসহ, চুয়াডাঙ্গা, মেহেরপুর, ঝিনাইদহের খেলোয়াড়রা তাদের লাঠি খেলা প্রদর্শন করছেন। চলবে আগামী মঙ্গলবার রাত পর্যন্ত।