মমিনুল ইসলাম বাবু কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি:
কুড়িগ্রামের উলিপুরে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর দারিদ্র হ্রাসকরণ প্রকল্পে গরু বিতরণের নামে শুরুতেই অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। ইতোমধ্যে একটি ইউনিয়নে গরু বিতরণ করা হয়েছে। এতে একই পরিবারের একাধিক ব্যক্তি, স্বচ্ছল ও ধনাঢ্য পরিবার গরু পেয়েছেন। প্রতি উপকারভোগিকে ৪০ হাজার টাকার গরু দেয়ার কথা থাকলেও তা ২২ থেকে ২৮ হাজার টাকার ছোট ও রোগাক্রান্ত গরু দেয়া হয়েছে। তবে দু-একজনকে গরুর সাথে উদ্বৃত্ত ৩ থেকে ৪ হাজার টাকা দেয়া হয়েছে। আর এসব গরু বাড়িতে নিয়ে যাওয়ার পর চরম বিপাকে পড়ছেন সুবিধাভোগিরা। কারো গরু মারা গেছে, আবার অনেকে গরুকে চিকিৎসা করাতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছেন।
জানা গেছে, কুড়িগ্রাম ও জামালপুর জেলার প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর দারিদ্র হ্রাসকরণ শীর্ষক প্রকল্প হাতে নিয়েছে সরকার। এ প্রকল্পে কুড়িগ্রামে সম্পদ হস্তান্তর গরু বিতরণ প্রকল্পে প্রায় ৫০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে বগুড়ার বে-সরকারি সংস্থা পল্লী উন্নয়ন একাডেমি (আরডিএ)। কিন্তু এরই মধ্যে বাস্তবায়নকারী সংস্থার নামে উঠেছে নানা অনিয়মের অভিযোগ।
নীতিমালা অনুযায়ী উপকারভোগি বাছাই প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে স্থানীয় সংসদ সদস্যকে প্রধান উপদেষ্টা ও উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যানকে উপদেষ্টা করে উপজেলা নিবার্হী অফিসার সভাপতি, উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকতার্ সদস্যসচিব ও সংম্লিষ্ট ইউপি চেয়ারম্যানগণকে সদস্য করে কমিটি করার কথা থাকলেও এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট চেয়ারম্যানগণ কিছুই জানেন না। ইউপি চেয়ারম্যানদের বাদ দিয়ে সুবিধাভোগির তালিকা প্রণয়ন, গরু ক্রয় ও বিতরণ কার্যক্রম চলছে। বাস্তুভিটা ছাড়া কোন কৃষি জমির মালিকানা নেই এমন দরিদ্র ব্যক্তিদের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করার কথা থাকলেও অনেক স্বচ্ছল, পাকা ঘরসহ নিজস্ব একাধিক গরু ও আবাদি জমির মালিকও তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়েছেন।
বাস্তবায়নকারী সংস্থা পল্লী উন্নয়ন একাডেমি (আরডিএ) বগুড়ার তথ্যমতে জানাযায়, কুড়িগ্রামের উলিপুর, নাগেশ্বরী, রাজারহাট ও চিলমারী উপজেলায় এ প্রকল্পটি হাতে নেয়া হয়েছে। এতে প্রায় ১২ হাজার ৪১০ জন সুবিধাভোগি গরু পাবেন। এরমধ্যে উলিপুরে পাবেন ৪ হাজার ১১০ জন। আর এসব সুবিধাভোগিকে গরু লালন-পালনের জন্য ওষুধ বাবদ এককালীন ৩৫০ টাকা এবং প্রতিমাসে ৫০০ টাকা (৬ মাস) দেয়ার কথা। ইতোমধ্যে উপজেলার থেতরাই ইউনিয়নে ৩১৫জন সুবিধাভোগির মাঝে গরু বিতরণ করা হয়েছে। এছাড়াও এ প্রকল্পের মাধ্যমে বিভিন্ন বিষয়ে প্রশিক্ষণ দিয়ে উপজেলায় ১ হাজার ৩২৬জন দক্ষ জনশক্তি তৈরি করা হবে।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, উপজেলার থেতরাই ইউনিয়নের ১ নং ওয়ার্ডে সুবিধাভোগি আফরোজা বেগম (ক্রমিক নং-৩)ভুয়া ঠিকানা দিয়ে নিবার্চিত করা হয়েছেন। ২ নং রামনিয়াসা ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য রফিকুল ইসলামের স্ত্রী সুফিয়া বেগম (ক্রমিক নং১৫),ছেলে সাইফুল ইসলাম (ক্রমিক নং৩৫), একই বাড়িতে থাকেন মেম্বারের আপন বোনের স্বামী হায়দার আলী (ক্রমিক নং ৩৩) বড় ভাই আয়ুব আলী (ক্রমিক নং ৯) তারাও পেয়েছেন প্রকল্পের গরু। এছাড়াও সুবিধাভোগি ৫নং ওয়ার্ডে আপন দুইভাই শামসুল আলম ও সাইদুল ইসলাম,স্বচ্ছল ৪নং ওয়ার্ডের মিন্টু মিয়া, ৬ নং ওয়ার্ডের দোলেনা বেগম, ৮ নং ওয়ার্ডের লায়লা গরু পেয়েছেন। ১ নং ওয়ার্ডের গোড়াইপিয়ার গ্রামের ধনাঢ্য ব্যক্তি কায়সার আলী গরু পেলেও,অসুস্থ হয়ে তার গরুটি মারা গেছে।
থেতরাই ইউপি চেয়ারম্যান আইয়ুব আলী বলেন, আমার ইউনিয়নে গরু বিতরণ করা হলো আমি জানলাম না। যদিও আমি কমিটির সদস্য। তিনি আরো বলেন, যারা গরু পেয়েছে তাদের বেশির ভাগই স্বচ্ছল মানুষ।
উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা আব্দুল আজিজ প্রধান বলেন, গরু ক্রয়ে সামান্য ক্রুটি বিচ্যুতি থাকতে পারে। এজন্য আগামীতে ডিজিটাল স্কেল দিয়ে ক্রয়ের কথা ভাবা হচ্ছে।
প্রকল্পের উপ-পরিচালক শেখ মেহেদী মোহাম্মদ মোবাইল ফোনে কথা হলে তিনি বলেন, গরুর দাম নিয়ে স্থানীয় অনেকে দ্বিমত পোষণ করেছেন। বিষয়টি আমি ঊর্ব্ধতন কর্তৃপক্ষকে অবগত করেছি।
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নূরে-এ-জান্নাত রুমি বলেন, তালিকা কিভাবে হয়েছে সেটা আরডিএ জানেন। তবে অনিয়ম পেলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এসব অভিযোগ শুনে ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস দিয়েছেন স্থানীয় সংসদ সদস্য অধ্যাপক এমএ মতিন। তিনি আরো বলেন, সরকারের এ প্রকল্প দরিদ্র হ্রাসকরণের জন্য। এখানে কোন ধরণের অনিয়ম মেনে নেয়া হবেনা।