হুমায়ুন কবির সূর্য্য, কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি”
ব্রহ্মপুত্র, ধরলা ও তিস্তাসহ কুড়িগ্রামের সবকটি নদ-নদীর পানি বেড়ে আবারও সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। নতুন করে তিন শতাধিক গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। পানিবন্দী হয়েছে প্রায় ৩ লাখ মানুষ। দুর্গত এলাকা পরিদর্শনে বৃহস্পতিবার দুপুরে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী ডা: এনামুর রহমান এমপি ও সিনিয়র সচিব শাহ কামাল কুড়িগ্রামে বিকেল ৪টা পর্যন্ত অবস্থান করেন। এসময় তারা দুপুরে কুড়িগ্রাম সার্কিট হাউজ কনফারেন্স কক্ষে জেলা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির সভায় অংশ নেন। পরে চিলমারী উপজেলায় বন্যা কবলিত এলাকায় পরির্দশন ও দুর্গত মানুষের মাঝে ত্রাণ বিতরণ করেন।
ধরলা নদীতে নতুন করে পানি বৃদ্ধির ফলে আবারো বাঁধে, উঁচু বাড়িতে ও আশ্রয়কেন্দ্রে অবস্থান নিয়েছে বন্যা কবলিতরা। সদর উপজেলার হলোখানা ইউনিয়নের সারডোব, ছাটকালুয়া, চর হলোখা, বারোঘরিয়া, আঠারোঘরিয়া, মাস্টারের হাট গ্রাম, পৌরসভা এলাকার ভেলাকোপা ও চর ভেলাকোপা, ভোগডাঙ্গা ইউনিয়নের নন্দদুলারের ভিটা, মাধবরাম, সর্দারপাড়া, পাছগাছী ইউনিয়নের দক্ষিণ নওয়াবশ, কদমতলা, চৌধুরীপাড়া, মোগলবাসা ইউনিয়নের চর সিতাইঝাড়, মুন্সিপাড়া, তেলীপাড়া, গাড়িয়ালপাড়া, বালাবাড়ীসহ প্রায় তিন শতাধিক গ্রামের মানুষ আবারো দুর্ভোগে পরেছে।
কুড়িগ্রাম শহরে পানি উন্নয়ন বোর্ডের টি-বাঁধে আশ্রয় নেয়া মশিউর, কামাল ও আঞ্জুয়ারা জানান, পরশু দিন পানি নেমে গিয়েছিল। আমরাও উঠান ও আশপাশ ঝাড়– দিয়েছি বাড়িতে ওঠার জন্য। কাল (বুধবার) থেকে আবারো হু-হু করে পানি বৃদ্ধি পেয়ে বাড়ীঘরে ঢুকে পরেছে। আবার সবাই এখানে এসে আশ্রয় নিয়েছি।
সদরের মাধবরাম এলাকার নজির, মহুবর ও দানেশ জানান, মানুষের খাবার তো শ্যাষ। সেই সাথে গরু-বাছুরের খাবারো জোগার করা কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। এক আটি খড়ের মূল্য দশ টাকায় চলে গেছে। ভাত খাই কি আর গরুক খাওয়াই কি! খুব সমস্যায় আছি আমরা।
বন্যা আর বৃষ্টিতে কাহিল ধরলা ব্রীজের পূর্বদিকে আশ্রয় নেয়া শেফালী জানান, ‘বৃষ্টির জন্যে খোলা আকাশে রান্নাবান্না করা যাচ্ছে না। রেড ক্রিসেন্ট থাকি তাবু পাইছি। রাতে বৃষ্টির ফলে তাবু দিয়ে পানি পরায় সারারাত জাগি আছলাম।’ একই অবস্থা এখানে আশ্রয় নেয়া অর্ধশতাধিক মানুষের।
বৃহস্পতিবার দুপুরে সেতু পয়েণ্টে ধরলা নদীর পানি বিপৎসীমার ৭৩ সেন্টিমিটার ও চিলমারী পয়েন্টে ব্রহ্মপুত্রের ৩৬ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। তিস্তার পানিও কাউনিয়া পয়েন্টে বিপৎসীমা ছুঁই ছুঁই করছে। ডুবে গেছে ঘর-বাড়ি, রাস্তাঘাট ও ফসলি জমি। পানির প্রবল চাপে বেশ কয়েকটি এলাকায় বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ঝুঁকির মধ্যে পড়েছে। চিলমারী, রৌমারী ও রাজীবপুর উপজেলা শহরে আবারও পানি ঢুকে প্লাবিত হয়েছে উপজেলা সদর।
এ ব্যাপারে জেলা প্রশাসক মোছা: সুলতানা পারভীন জানান, জেলা প্রশাসন থেকে সবধরণের প্রস্তুতি নেয়া আছে। বিভিন্ন দপ্তরগুলো সার্বক্ষণিকভাবে মনিটরিং করছেন। আজ (বৃহস্পতিবার) গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী ডা: এনামুর রহমান এমপি বন্যা কবলিতদের ত্রাণ সহায়তার পাশাপাশি দুর্গত এলাকা পরিদর্শন করছেন। খুব দ্রæতই এই পরিস্থিতি কাটিয়ে উঠতে পারবে এখানকার মানুষ।