কুড়িগ্রাম থেকে মোঃ রফিকুল ইসলাম
দেশের সবচেয়ে দরিদ্র মানুষের বসবাস যে জেলায় তার নাম কুড়িগ্রাম। উত্তর জনপদের সবচেয়ে অনুন্নত জেলা হিসেবে কুড়িগ্রাম সারা দেশে একটা পরিচিতি পেয়েছে। রাজনৈতিক সদিচ্ছার কারণে এমনিতেই কুড়িগ্রামের তেমন একটা উন্নয়ন হয় না। ব্যাপক কর্মসংস্থানের অভাবের কারণে এমনিতেই সাধারন মানুষ জনকে প্রতিনিয়ত না খেয়ে দিন যাপন করতে হয়। আর একারণেই চিলমারীর বাসন্তীদের জালপরিহীতা ছবি পত্রিকায় স্থান পায়। রাজনৈতিক দুর্বৃত্তায়নের কারণে কুড়িগ্রামের তেমন একটা উন্নয়ন দীর্ঘদিন ধরেই হচ্ছে না। হামার ছাওয়াল এরশাদ এই হুজুগ এই মাতোয়ারা কুড়িগ্রাম জনপদের সাধারণ মানুষ। এরশাদ প্রীতির কারণে এ অঞ্চলের মানুষ অযোগ্য জনপ্রতিনিধিদের নির্বাচিত করে সংসদে পাঠিয়ে থাকে। যে কারণে সাধারণ জনগণকে প্রতিনিয়ত হয়রানির শিকার হতে হচ্ছে। বিএনপি অথবা আওয়ামী লীগ কোনো আমলেই কুড়িগ্রামের তেমন একটা উন্নয়ন হচ্ছে না। বর্তমান সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার ঐকান্তিক প্রচেষ্টার কারণে কিছুটা হলেও অবকাঠামোগত উন্নয়ন হচ্ছে। অবকাঠামোগত উন্নয়ন দিয়ে কখনো মানুষের কর্মসংস্থান গড়ে ওঠে না। এর জন্য প্রয়োজন শিল্পাঞ্চল গড়ে তোলা। প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুত শিল্পাঞ্চল আজও আলোর মুখ দেখেনি। শিল্পাঞ্চল গড়ে তুলতে এখানকার এমপি-মন্ত্রীদের তেমন একটা ভূমিকা কখনও নজরে আসে না। চলতি বন্যায় কুড়িগ্রামে প্রায় আড়াই লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। পানিবন্দি মানুষ কে ? বাঁচাতে সরকারি উদ্যোগ সীমিত আকারে পরিলক্ষিত হচ্ছে। দায়সারা গোছের ত্রাণ সহায়তা কার্যক্রম কোনোভাবেই মানুষের দুর্ভোগ কমাতে পারছে না। ১৬ টি নদ নদী দ্বারা বেষ্টিত কুড়িগ্রাম জেলা। ১৪ জুলাই মঙ্গলবার সকাল ছয়টায় ধরলা নদীর পানি বিপদসীমার ১০০ সেন্টিমিটার, ব্রহ্মপুত্র নদীর পানি চিলমারী পয়েন্ট ৮৫ সেন্টিমিটার, দুধকুমার নদীর পানি ১০ সেন্টিমিটার এবং তিস্তা নদীর পানি ১৩ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। গত ২৪ ঘন্টায় ব্রহ্মপুত্র নদীর পানি চিলমারী পয়েন্ট ৪০ সেন্টিমিটার, ধরলা নদীর পানি ১৮ সেন্টিমিটার, দুধকুমার নদীর পানি ৪৪ সেন্টিমিটার এবং তিস্তা নদীর পানি ১৩ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়েছে। এ তথ্য নিশ্চিত করেছে স্থানীয় পানি উন্নয়ন বোর্ড।
কুড়িগ্রাম জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা মোঃ আব্দুল হাই সরকার জানান, কুড়িগ্রাম জেলায় উপ বরাদ্দের পরিমাণ জিআর চাল ১শ’ ৭০ মেট্রিক টন, জি আর ক্যাশ ৪ লক্ষ টাকা, শুকনা খাবার ২ হাজার প্যাকেট, শিশুখাদ্য ২ লক্ষ টাকা, গো-খাদ্য ২ লক্ষ টাকা, ভিজিএফ ৪ হাজার ২শ’ ৮৫ মেট্রিক টন। জেলায় মজুদের পরিমান জিআর চাল ২শ’ ৩০ মেট্রিক টন, জি আর ক্যাশ ৪ লক্ষ টাকা, শুকনা খাবার ২ হাজার প্যাকেট রয়েছে।

মঙ্গলবার রাজিবপুর সদর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান কামরুল ইসলাম বাদল, কোদালকাটি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হুমায়ুন কবির, মোহনগঞ্জ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন, রৌমারী সদর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শহিদুল ইসলাম শালু, যাদুর চর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সরবেশ আলী এ প্রতিবেদককে জানায়- চলতি বন্যায় প্রতিটি ইউনিয়নের প্রায় সিংহভাগ মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। সরকারি সীমিত বরাদ্দের কারণে বন্যা দুর্গত মানুষদের পর্যাপ্ত পরিমাণ সহায়তা দেয়া সম্ভব হচ্ছে না।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *