মারুফ সরকার ,ঢাকা :
এবার নতুন করে নির্দেশনা। রাজনীতির নতুন খেলা। কঠোর হস্তে নিজ দলের নারী কর্মীদের শাসিয়ে বলা হল, কোনমতেই যেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রিয় কার্যালয়ে না যাওয়া হয়। এমন বক্তব্য শুনে হতবাক ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ এর অঙ্গ সংগঠন মহিলা লীগ এর সকল নেত্রী ও কর্মী বৃন্দ।
বৃহস্পতিবার বিকেলে তথা ২জুন ২০২২ ইং তারিখে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু এভিনিউ-এ মহিলা আওয়ামী লীগের নতুন কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত সভায় মহিলা লীগের সভাপতি সাফিয়া খাতুন ও সাধারণ সম্পাদকের পক্ষ থেকে মাহমুদা বেগম কৃক এমন ঘোষণা দেন।
এদিকে চাউর আছে মেধাবী ও ত্যাগী নেত্রীদের নেতৃত্বে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের অন্যতম অঙ্গ সংগঠন মহিলা আওয়ামী লীগ পরিচালিত হচ্ছে না। সূত্রমতে, জাতীয় পর্যায়ে নেতৃত্ব দেয়ার মত মেধাবী কিংবা প্রতিভাধর নারী নেত্রী বর্গ থাকলেও সংগঠনটির বিষয়ে উদাসীন দলের নীতি নির্ধারণী পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ। ২০১৭ সালে মহিলা আওয়ামী লীগের কমিটি করা হলেও সাংগঠনিক ব্যর্থতায় এই অঙ্গ সংগঠনটি যথাযথভাবে এগোতে পারছে না বলে মত রাজনৈতিক ধারাভাষ্যকারদের। উপরন্ত কঠোর হস্তে দমন করা হবে যে কেহ দলের ধানমন্ডিস্থ অফিসে গেলে, তা নিয়ে এই সংগঠনের নেতৃত্বের দেওলিয়াপানা ফুটে উঠেছে।
সূত্রমতে ২০১৭ সালে নানা বিতর্ক কে সঙ্গী করে হাইব্রিড পর্যায়ের কথিত নারী নেত্রীদের সুযোগ দিয়ে এবং বড় বড় নেতাদের সুপারিশে মহিলা আওয়ামী লীগের নতুন কমিটি দেয়া হয়। যাদের মধ্যে অধিকাংশদের জায়গা পাওয়া নিয়ে প্রশ্ন ছিল। জ্যেষ্ঠ ও ত্যাগী নেত্রীদের বাদ দিয়ে ক্লাব- সমিতি চালানোর মত যোগ্যতাধারীদের দ্বারা এই সংগঠনটিকে চালানোর উদ্যোগে যাওয়া হয়। ১৫১ সদস্য বিশিষ্ট ওই কমিটির নতুন সভাপতি ও সাধারন সম্পাদক হিসাবে দায়িত্ব পান সাফিয়া খাতুন ও মাহমুদা বেগম কৃক। গেল চার বছরে মহিলা আওয়ামী লীগের এই দুই শীর্ষ নেতাই ব্যর্থ হয়েছেন বলে মত রেখেছেন মহিলা আওয়ামী লীগের কেন্দ্রিয় কমিটির প্রায় অধিকাংশ নেতৃবৃন্দ।
মাহমুদা বেগম কৃক, যার হাত ধরেই ফলত দলটি পরিচালিত হচ্ছে— তার নিজস্ব রাজনীতি, পছন্দ-অপছন্দের প্রভাব সংগঠনে পড়েছে। সাংগঠনিক পর্যায়ে গণতান্ত্রিক অনুশীলনের মাধ্যমে মহিলা লীগের কার্যক্রম এগোচ্ছে না—এমন বক্তব্য প্রায় সকলের হলেও স্বৈরাচারী হয়ে তিনি সংগঠন পরিচালনা করছেন। এমন কি মহিলা যুবলীগকে জাতীয় রাজনীতিতে সোচ্চার হতে দেখা গেলেও মহিলা আওয়ামী লীগ নিজেদেরকে প্রমাণ করতে পারছে না, এমন দাবী নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বেশ কয়েকজন সহসভাপতির।
তাদের দাবী, সাংগঠনিক পর্যায়ে বিরোধী শিবির কে দমন করা দূরে থাক, টেলিভিশন টক শোতে যেয়ে মত প্রদানের যোগ্যতাও সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের নেই। রাজনৈতিক লেখাপড়া না থাকার দরুন, তাঁরা সংগঠন কে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারছে না বলে কথিত আছে। অন্যদিকে গুঞ্জন রয়েছে, সাংগঠনিক ব্যর্থতার দায় নিয়ে আসন্ন নতুন কাউন্সিল তথা সম্মেলনে মহিলা আওয়ামী লীগের কমিটিতে নতুন নেতৃত্ব পাওয়া যাবে।
এই প্রসঙ্গেই রাজনৈতিক ধারাভাষ্যকার ইউসুফ আলী বলেন, “ বাংলাদেশের রাজনৈতিক বাস্তবতায় মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একজন নারী হয়েও বিশ্বকে দেখিয়ে দিয়েছেন, তিনি বিশ্বমানের নেত্রী। একইভাবে দেশের সংসদীয় গণতন্ত্রের ধারাবাহিকতায় স্পীকার হিসাবে শিরিন শারমিন চৌধুরী তাঁর জাত চেনাতে সক্ষম হয়েছেন। অন্যদিকে সৎ রাজনীতিক মতিয়া চৌধুরী কিংবা দীপু মনির মত উন্নত চিন্তার বিরল প্রতিভাধর নারী নেত্রীও তো জন্ম নিয়েছেন এই দেশে। অথচ বাংলাদেশের শ্রেষ্ঠ রাজনৈতিক দলের নারী উইং এর এমন বেহাল দশা কেন হবে ? যারা এই দলের বর্তমান নেতৃত্বে রয়েছেন, তাঁদেরকে দেখে কেন নতুন প্রজন্ম রাজনীতিতে আসবে? কেন নারীরা ঘর ছেড়ে বের হয়ে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে বুকে ধারণ করবে?
এই দলের সাধারণ সম্পাদক মাহমুদা বেগম কৃক এর অন্যের অর্থে দেশ ও বিদেশে ভ্রমণ, পকেট কমিটি করে তাঁর বিরুদ্ধে অর্থ আদায় করার অভিযোগও আছে। তাঁর দল পরিচালনা করাটার আদলটা ক্লাব সমিতির মত করে। কিন্তু কেন এমন হবে? আওয়ামী লীগের মত দলের হয়ে কাজ করতে হলে অতি অবশ্যই তাঁদেরকে বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ও তাঁর তনয়ার নেতৃত্বকে তুলে ধরে দেশবাসীর নারীকুলের কাছে গ্রহণযোগ্য পদক্ষেপ নিতে হবে। যা এরা পারেনি। তাঁরা সেলফি তুলে ছবি পোষ্ট করতে ব্যস্ত, রাজনীতি কি তা নিজেরাও শিখছে না, অন্যদেরকে শিক্ষিত করার তো কোন প্রশ্নই নেই।”
অপরদিকে ২০১৭ সালে অনুষ্ঠিত জাতীয় সম্মেলনের প্রায় সাড়ে চার মাস পর পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করে মহিলা আওয়ামী লীগ। ২২ জুলাই, ২০১৭ সালে আওয়ামী লীগ সভাপতির ধানমন্ডির রাজনৈতিক কার্যালয়ে সংগঠনের সভাপতি সাফিয়া খাতুন ও সাধারণ সম্পাদক মাহমুদা বেগম কৃকের হাতে পূর্ণাঙ্গ কমিটির তালিকা তুলে দেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে ২১ জন সহসভাপতি, ৮ জন যুগ্ম সম্পাদক ও ৮ জনকে সাংগঠনিক সম্পাদক করা হয়। যে কমিটি মুলত সুপারিশের ভিত্তিতে প্রদান করা হয়।
বর্তমান কমিটিতে দেশ বরেণ্য নারীবাদী নেত্রীদের জায়গা নেই, নেই তেমন জাতীয় পর্যায়ে ঝড় তোলা রাজনীতিকও, তবে নারী সংরক্ষিত আসনের সাবেক ও নতুন মিলিয়ে কিছু সাংসদ আছেন।কমিটিতে বেশ কয়েকজন ত্যাগী, সাংগঠনিক ও মেধাবী নারী নেত্রীও আছেন, যারা আবার শীর্ষ দুই পদে জায়গা পান নাই। যাদের মধ্যে মিনা মালেক, জান্নাত আরা হেনরি, আসমা জেরিন, এডভোকেট সেলিনা আক্তার, রোকেয়া প্রাচী, ব্যারিস্টার ফারজানা বেগম, সীমা করিমদেরকে নেতৃত্বে আনা গেলে বদলে যেতে পারে মহিলা আওয়ামী লীগ।
মহিলা আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরে অনেকদিন ধরেই টানাপড়েন রয়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে সেই টানাপড়েন কে খেলায় রুপান্তরিত করলেন বর্তমান কমিটি। যে কমিটি স্পষ্টভাবে পদ হারানোর শংকায় আইন করতে চাইলেন এই মর্মে যে, দলের জ্যেষ্ঠ পর্যায়ের নেতাদের সাথে ত্যাগী নেত্রীদের যেন দেখাই না হয়। সূত্র বলছে, বিভিন্ন সভায় কৃ্ক অশ্রাব্য ভাষায় গালমন্দ করে বোঝাতে চান, তিনি ক্ষমতাধর এবং যা ইচ্ছে করবেন। এমন বাস্তবতায় মহিলা আওয়ামী লীগ রাজনীতি করতে পারছে না, সকলেই বন্দী কৃ্ক এর খেলার কাছে!