মোঃ নুরনবী ইসলাম, খানসামা (দিনাজপুর) প্রতিনিধি:
দিনাজপুরের খানসামা উপজেলায় গরু চাষী ও খামারীদের মাঝে আতঙ্ক ছড়াছে এলএসডি বা লাম্পি স্কিন রোগের ভাইরাস। ইতিমধ্যে এ রোগে আক্রান্ত হয়ে প্রায় অর্ধ শতাধিক গরু মারা গেছে। যদিও এর নির্দিষ্ট কোন তথ্য উপজেলা প্রাণী সম্পদ অফিসে পাওয়া যায় নি। খামার ও গৃহস্থের বাড়িতে পালিত গবাদিপশু এ রোগে প্রতিনিয়ত আক্রান্তের সংখ্যা বাড়তে থাকায় খামারি ও গরু পালনকারী আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন। অর্থনৈতিক ধসের শঙ্কায় পড়েছে খামারিরা। তবে এসব গবাদিপশুকে বাঁচাতে ও জনসচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে মাইকিং না করলেও উপজেলা প্রাণী সম্পদ অফিস বিভিন্ন এলাকায় ক্যাম্পেইন ও টিকাদান কর্মসূচি পালন করছে।
উপজেলা প্রাণীসম্পদ অফিস সূত্রে জানা যায়, লাম্পি স্কিন রোগটি গবাদিপশুর নুতন একটি রোগ যার প্রতিষেধক বেসরকারিভকবে বিভিন্ন কোম্পানির পাওয়া গেলেও সরকারীভাবে এখনো আসে নি। এ রোগে আক্রান্ত পশুর প্রথমে সামনের পা ফুলে যায়। তাপমাত্রা বেড়ে গিয়ে শরীরে বড় বড় গুটি দেখা দেয়। এক সপ্তাহ পরে গুটিগুলো গলে গিয়ে স্থানে স্থানে ঘা হয়। ঘা থেকে অনবরত তরল পদার্থ নিঃসৃত হতে থাকে। কখনো সিনার নিচে বড় থলির মতো হয়ে পানি জমে থাকে। তখন কিছুই খেতে চায় না বলে গবাদিপশু শুকিয়ে যায়। সংক্রমণ বেশি হলে পশু মারাও যেতে পারে। তবে এতে মৃত্যুহার তুলনামূলক কম। আর এ রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়ার সঠিক তথ্যও সরবরাহ করা হয় নি।
খামারীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, লাম্পি ষ্কিন রোগে (এলএসডি) আক্রান্ত গরু প্রথম দিকে কিছুই খেতে চায় না। শরীরে জ্বর আসে। দাঁড়িয়ে থাকতে পারে না। জ্বরের সঙ্গে সঙ্গে নাক-মুখ দিয়ে লালা বের হয়। পা ফুলে যায়। এরপর সারা শরীরে দেখা দেয় প্রচুর গুটি বা চাকা। এতে লোম উঠে যায় এবং ক্ষতের সৃষ্টি হয়। আর এই ক্ষত শরীরের চতুর্দিকে ছড়িয়ে পড়ে। অনেক খামারী স্থানীয় পশু চিকিৎসার সঙ্গে সম্পৃক্তদের পরামর্শে স্থানীয় বাজার থেকে ইঞ্জেকশনসহ এন্টিবায়োটিক ও প্যারাসিটামল ট্যাবলেট কিনে এনে আক্রান্ত গরুগুলোকে খাওয়াচ্ছেন। আবার একই সঙ্গে কাঁচা হলুদের রস, খাবার সোডা ও করপুর মিশিয়ে গরুর শরীরে মালিস করছেন বলে জানায়।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গত কয়েকদিনে চকরামপুর গ্রামে আহিমুল ইসলামের একটি, আঙ্গারপাড়া গ্রামের হাসানুর রহমানের দুইটি, সুবর্ণখুলী গ্রামে এহিয়া ইসলামের একটি, সহজপুর গ্রামের রবিউল ইসলামের একটি সহ প্রায় প্রতিটি গ্রামে ২/১ টি করে গরু মারা গেছে। আক্রান্ত হয়েছে শত শত গরু ও গরুর বাছুর। তবে মারা যাওয়ার গরু গুলোর মধ্যে বাছুরের সংখ্যাই বেশি।
পল্লী চিকিৎসকদের সাথে কথা বলে জানা যায়, বর্তমানে এ রোগটি উপজেলায় মহামারী আকার ধারন করেছে। প্রায় প্রতিটি গ্রামে শত শত গরু এ রোগে আক্রান্ত হয়েছে। তারা দিন-রাত গরুর চিকিৎসা দিতে হাঁপিয়ে যাচ্ছে। তারা উপজেলা প্রাণী সম্পদ অফিসের সাথে যোগাযোগ করেই চিকিৎসা ও পরামর্শ দিচ্ছেন বলে জানান।
এ বিষয়ে উপজেলা প্রাণীসম্পদ কর্মকর্তা হুমায়ুন কবির জানান, ল্যাম্পি স্কিন রোগ বর্তমানে নিয়ন্ত্রণের মধ্যে রয়েছে। খামারীদের আতঙ্কিত হওয়ার কারন নেই। কিছু নিয়মকানুন মেনে চললেই এ রোগ নিরাময় সম্ভব হবে এবং এ সংক্রান্ত বিভিন্ন পরামর্শ খামারীদের দেওয়া হচ্ছে। আবার তারা উপজেলা পশু সম্পদ দপ্তরে (পশু হাসপাতালে) আনলে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। এ রোগটি বিশেষ করে মশার কাপড়ে ও আক্রান্ত প্রাণীর লালা হতে ছড়ায়। গরুর মালিকদের গোয়াল ঘর পরিষ্কার করা ও মশা মাছি নিয়ন্ত্রণ করতে ক্যাম্পেইন ও টিকাদান কর্মসূচি পালন করছি। অফিসে গরু দেখার পাশাপাশি গরু মালিকদের বাড়ি বাড়ি যেয়ে আক্রান্ত গরুর অ্যান্টিবায়োটিক ইঞ্জেকশান, ব্যাথানাশক ট্যাবলেট ও অ্যান্টিহিস্টামিন দিয়ে চিকিৎসা চলছে। তবে এ রোগে গরুর মৃত্যুর হার একেবারেই কম।