মোঃ নুরনবী ইসলাম, খানসামা (দিনাজপুর) প্রতিনিধিঃ কম্পিউটারে পর্নোছবি দেখিয়ে বলাৎকারের পর হত্যা করা হয় দিনাজপুরের খানসামা উপজেলার কায়েমপুর গ্রামের অপহরণের স্বীকার ৮ বছরের শিশু আরিফুজ্জামান ইসলামকে। বিকৃত রুচির পরিসমাপ্তি করে শ্বাসরোধে হত্যার পর তার পিতার কাছে মুক্তিপণ দাবি করে কিলার একই এলাকার শরিফুল ইসলাম (২২)। অপহরণের ৩ দিন পর মাটিতে পুঁতে রাখা বস্তাবন্দি শিশু আরিফুজ্জামানের মরদেহ উদ্ধারের পর দিনাজপুরের পুলিশ সুপার শাহ্ ইফতেখার আহমেদ এসব কথা জানান।

দিনাজপুরে জেলা পুলিশ সুপার কার্যালয়ে প্রেস ব্রিফিং-এ পুলিশ সুপার শাহ্ ইফতেখার আহমেদ জানান, গত ২ ডিসেম্বর শুক্রবার বিকেল ৪টায় খানসামা উপজেলার ৪ নং খামারপাড়া ইউপির কায়েমপুর গ্রামের ডাক্তার পাড়া থেকে আরিফুজ্জামানকে ফুসলিয়ে নিজের বাই সাইকেলের ক্যারিয়ারে উঠিয়ে নিয়ে যায় কিলার শরিফুল ইসলাম (২২)। ভাড়া মেসে নিয়ে গিয়ে কম্পিউটারে পর্ণ ছবি দেখিয়ে বলাৎকারের পর বিকেল ৫ টায় হত্যা করে শিশুটিকে। হত্যার পর রাত সাড়ে ৮ টায় শিশুটির পিতা আতিউর রহমানের কাছে, মুক্তিপণ দাবি করে শরিফুল ইসলাম। তার বাবার কাছে নগদ তেমন টাকা না থাকায় সন্তানকে বাঁচাতে প্রথম দফায় ৫ হাজার ৪০০ টাকা বিকাশ করে। বিকাশ থেকে ওই টাকা তুলে খোন্তি ক্রয় করে পাকেরহাটে  ভাড়া মেসের আঙ্গিনা খুঁড়ে হাত-পা বুকের সাথে বেঁধে শিশুটির মরদেহ বস্তায় ভরে মাটিতে পুঁতে রাখে। আমরা জনার পর থেকেই  অপহৃত শিশু রক্ষায় আমাদের জোর প্রচেষ্টা ছিল।

তিনি আরো বলেন, মুক্তিপণের ৫৪০০ টাকা দেওয়ার পর শিশুটির বাবা আতিউর রহমান রাতেই শিশু নিখোঁজ এর সাধারণ ডায়েরি করার পরেই আমরা মামলা নথিভুক্ত করে এঘটনায় সন্দেহভাজন তিন যুবককে আটক করি। আটককৃত কায়েমপুর মাস্টারপাড়া গ্রামের আব্দুল মালেকের ছেলে শরিফুল ইসলাম (২২), গফুর উদ্দীন শাহপাড়া গ্রামের ওবায়দুরের ছেলে শামীম (২২) ও একই এলাকার মো. রিয়াজুলের ছেলে শাহিনুর।

অপহরণ ঘটনায় জড়িত থাকার বিষয়ে তারা অস্বীকৃতি জানালেও কৌশলে তাদের কাছ থেকে তথ্য নিয়ে উদ্ধার কাজ পরিচালনা করে পুলিশ। অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম এন্ড আপস) মো. আসলাম উদ্দিনের নেতৃত্বে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (বীরগঞ্জ সার্কেল) খোদাদাদ হোসেন ও অফিসার ইনচার্জ চিত্তরঞ্জন রায়, ওসি (তদন্ত) তৌহিদুল ইসলামের সমন্বয়ে একটি টিম শিশুটি উদ্ধার পরিচালনা করে।

গত রবিবার (৪ ডিসেম্বর) দিবাগত রাত প্রায় ১টায় উপজেলার পাকেরহাটস্থ বোর্ডেরহাট সড়ক সংলগ্ন জিকরুলের মিলের পার্শ্বে জনৈক আব্দুস সালামের বাড়ির আঙ্গিনা খুঁড়ে বস্তাবন্ধী হাত-পা বাঁধা অবস্থায় শিশু আরিফুজ্জামানের মরদেহ উদ্ধার করা হয়।

শিশু আরিফুজ্জামান বাড়ির অদূরে চেহেলগাজী মাদ্রাসার ২য় শ্রেণির ছাত্র ছিলেন। মাটিতে পুঁতে রাখা হাত-পা বাঁধা শিশু আরিফুজ্জামানের বস্তাবন্দি মরদেহটি মিলেছে কায়েমপুরস্থ তাদের বাড়ি থেকে ৭ কিলোমিটার দূরে।

বাড়ির মালিক আঃ সালাম চাকরিসূত্রে ঠাকুরগাঁও এ অবস্থান করায় তিনি দীর্ঘদিন বাড়িটিতে ভাড়াটিয়া রেখেছেন। তারমধ্যে ভাড়াটিয়া অপহরণকারি শরিফুল ইসলাম ৪০০ টাকা ভাড়ায় মেস হিসেবে একটি রুম নিয়ে ৩ মাস ধরে ছিলেন। শরিফুল সেখানে একটি রুম মেস হিসেবে ভাড়া নিয়ে একটি কম্পিউটার রেখেছিলেন। নিজে মাদ্রাসায় ফাজিল পাশ করার পর গ্রাফিক হিসেবে বিভিন্ন জনকে প্রশিক্ষণ করাত তিনি।

গ্রেপ্তারকৃত কিলার শরিফুল ইসলামকে আদালতের মাধ্যমে জেলে পাঠানো হয়েছে। অধিকতর তদন্তের জন্যে আদালতের কাছে কিলার শরিফুলের রিমান্ডের আবেদন করেছে পুলিশ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *