মোঃ আবু হাসান,, বিভাগীয় প্রতিনিধি,,খুলনা।
খুলনায় নির্মম কায়দায় শিশু রাকিব হাওলাদারকে হত্যার ঘটনায় দুই আসামি ওমর শরিফ ও মিন্টু খানের সাজা কমিয়ে যাবজ্জীবন কারাদন্ড ও ৫০ হাজার টাকা করে জরিমানার রায় দিয়েছে হাই কোর্ট।
বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন সেলিম ও বিচারপতি মো. জাহাঙ্গীর হোসেনের হাই কোর্ট বেঞ্চ মঙ্গলবার আলোচিত এ মামলার রায় ঘোষণা করে।
বিচারক বলেন, “আমরা চেষ্টা করেছি, দুই পক্ষের তথ্য-প্রমাণ বিচার করে যথার্থ রায় দেওয়ার। যারা অফেন্ডার, তাদের মধ্যে ভিকটিমকে বাঁচানোর একটা চেষ্টা ছিল। এটা তথ্য প্রমাণে এসেছে।”
রায়ে বলা হয়, জরিমানার অর্থ রাকিবের পরিবারকে দিতে হবে। তা না হলে দুই আসামিকে আরও দুই বছর করে কারাদন্ড ভোগ করতে হবে।
তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় রাকিবের বাবা নূরুল আলম হাওলাদার এই রায়ে হতাশা প্রকাশ করেছেন। এই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করার কথা বলেছেন তিনি।
আসামিপক্ষের আইনজীবীরাও আপিল করবেন বলে জানিয়েছেন। তাদের ভাষায়, হাই কোর্টের রায়ে তারা ‘আংশিক ন্যায়বিচার’ পেয়েছেন।
১২ বছর বয়সী রাকিব এক সময় খুলনা নগরীর টুটপাড়া কবরখানা মোড়ে শরীফের মোটর ওয়ার্কশপে কাজ করত। কাজ ছেড়ে দেওয়ায় ক্ষিপ্ত হয়ে ২০১৫ সালের ৩ অগাস্ট তাকে হত্যা করেন শরীফ ও তার দূর সম্পর্কের চাচা মিন্টু।
ওই ওয়ার্কশপে আটকে মোটরসাইকেলে হাওয়া দেওয়ার কমপ্রেসারের মাধ্যমে মলদ্বারে বাতাস ঢোকানো হলে রাকিবের পেটের ভেতরের নাড়ি, মলদ্বার, মুত্রথলি ফেটে রক্তক্ষরণে তার মৃত্যু হয়।
বর্বর ওই ঘটনায় সারা দেশে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। খুলনা মহানগর দায়রা জজ আদালত ওই বছরই ১৮ নভেম্বর শরীফ মোটর্সের মালিক ওমর শরীফ ও মিন্টুর ফাঁসির রায় দেয়।
বিচারিক আদালতের সেই মৃত্যুদন্ডাদেশের অনুমোদন এবং আসামিদের করা আপিলের শুনানি শেষে মঙ্গলবার হাই কোর্ট দুই আসামির সাজা কমানোর সিদ্ধান্ত জানায়।
রায়ের পর এ আদালতের ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল জহিরুল হক জহির বলেন, “ঘটনার পর আসামিরা রাকিবকে বাঁচানোর চেষ্টা করেছিলেন, তাকে হাসপাতালে নিয়ে গেছিলেন। এসব বিবেচনায় আদালত দুই আসামির সাজা কমিয়ে যাবজ্জীবন দিয়েছেন।”
এই রায়ে সন্তুষ্ট কি না জানতে চাইলে রাষ্ট্রের এই আইন কর্মকর্তা বলেন, “এটা সন্তুষ্টি-অসন্তুষ্টির বিষয় না। রায়ের কপি পেলে বিচার বিশ্লেষণ করে পরবর্তী পদক্ষেপ নেব।”
রাকিবের পরিবারের পক্ষে হাই কোর্টে এ মামলা লড়েন বাংলাদেশ মানবাধিকার বাস্তবায়ন সংস্থার অ্যাডভোকেট সালমা সুলতানা।
রায়ের পর তিনি সাংবাদিকদের বলেন, “পায়ুপথে বাতাস ঢোকালে যে কোনো মানুষের মৃত্যু হবে এটা কমন সেন্সের বিষয়। তারা দেখেছে যে রাকিবের পেট ফুলে যাচ্ছিল।
“আদালত একদিকে বলেছেন, এটা নিষ্ঠুর-অমানবিক; আবার অন্যদিকে বলেছেন, আসামিরা রাকিবকে বাঁচানোর চেষ্টা করেছিল। আদালতের এমন বক্তব্য সাংঘর্ষিক। আমরা এ রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করব।”
আসামি শরীফের আইনজীবী গোলাম মো. চৌধুরী আলাল রায়ের পর সাংবাদিকদের বলেন, “আমরা আংশিক ন্যায়বিচার পেয়েছি। এ রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করব।”
এর ব্যাখ্যায় তিনি বলেন, “রাকিবের মৃত্যু ছিল অনিচ্ছাকৃত, তাকে হত্যার কোনো পরিকল্পনা ছিল না। ঘটনার পর আসামিরা পালানোর চেষ্টা করেনি, ভিকটিমকে হাসপাতালে নিয়ে গেছে, রক্ত দিয়েছে।”
শরীফের মা বিউটি বেগমকেও এ মামলার অভিযোগপত্রে আসামি করা হয়েছিল। তবে অপরাধে জড়িত থাকার প্রমাণ না পাওয়ায় তাকে খালাস দেয় জজ আদালত।