আব্দুল সাত্তার চট্টগ্রাম

প্রেমের সম্পর্ক স্থাপন করে ব্যক্তিগত মুহুর্তের ছবি ও ভিডিও ধারন করে ব্ল্যাকমেইল এবং শর্তে রাজি না হলে পরবর্তীতে তা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়ার হুমকি প্রদান করা এক সাইবার প্রতারক’কে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব-৭, চট্টগ্রাম।জনৈক ভুক্তভোগী ভিকটিম একজন গার্মেন্টেস কর্মী। সে র‌্যাব-৭, চট্টগ্রাম বরাবর অভিযোগ করেন যে, মোঃ রিয়াজ প্রকাশ জুবায়ের (২৮) নামক একজন টেইর্লাস কর্মীর সাথে তার পরিচয় হয়। তারপর হতে তার দোকানে ভিকটিম তার ব্যবহিত সকল সেলাই করত। এইভাবে দীর্ঘদিন যাবৎ কাজ করতে করতে একদিন মোঃ রিয়াজ ভিকটিমকে প্রেমের প্রস্তাব দেয় এবং ভিকটিমকে রাস্তাঘাটে ও কর্মস্থলে যাওয়া আসার পথে প্রেমের প্রস্তাবের রাজি হওয়ার জন্য বিভিন্ন রকম কৌশল অবলম্বন করে। একপর্যায়ে তাদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক হয়। ভিকটিমের অফিস ছুটিকালীন সময়ে ভিকটিমকে নিয়ে বিভিন্ন জায়গায় সে বেড়াতে নিয়ে যায়। গত ০২ মাস পূর্বে হঠাৎ করে মোঃ রিয়াজ প্রকাশ জুবায়ের ভিকটিমের বর্তমান বাসায় যায় এবং সেখানে আলাপচারিতার একপর্যায়ে বাসায় নিরিবিলি পরিবেশ দেখে রিয়াজ ভিকটিমকে নগ্ন ছবি তুলার জন্য প্রস্তাব দেয়। ভিকটিম তার প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় রিয়াজ প্রেমের সর্ম্পক ছিন্ন করবে বলে হুমকি দেয়। ভিকটিম প্রেমের সর্ম্পক টিকিয়ে রাখার জন্য নিরবতা পালন করলে সে সময় রিয়াজ তার মোবাইল দিয়ে ভিকটিমের অনেকগুলো নগ্ন ছবি তোলে। তারপর হতে ভিকটিমের সাথে শারীরিক সর্ম্পক করার প্রস্তাব দেয়। ভিকটিম তার প্রস্তাবে রাজি না হলে তখন রিয়াজ তার মোবাইলে থাকা নগ্ন ছবিগুলি ভিকটিমের অফিসের বিভিন্ন কর্মচারিদের দেখায়। এমনকি ভিকটিম যদি তার সাথে শারীরিক সর্ম্পক না করি তবে রিয়াজ তার মোবাইলে থাকা নগ্ন অবস্থায় তোলা ছবি ইন্টারনেটের মাধ্যমে ছড়িয়ে দেবে বলে হুমকি দেয়। ভিকটিম রিয়াজের এসব কথায় রাজি না হলে তখন সে ভিকটিমকে বলে তাকে ২০,০০০/- টাকা দিলে তার মোবাইলে থাকা সকল নগ্ন ছবি মুছে ফেলবে এবং টাকা না দিলে নগ্ন ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আপলোড করে ভাইরাল করে দিবে। ভিকটিম তখন বাধ্য হয়ে বিকাশের মাধ্যমে রিয়াজ’কে ২০,০০০/- দেয়। রিয়াজ টাকা পাওয়ার পর ভিকটিমের নগ্ন ছবি মুছে ফেলার কথা থাকলেও তা না করে সে পুনরায় ভিকটিমের সাথে শারীরিক সর্ম্পক করার জন্য চাপ দিতে থাকে। ভিকটিম একপর্যায়ে তার নগ্ন ছবি রিয়াজ এর মোবাইল হতে মুছে ফেলার জন্য তার সাথে মিশতে থাকে ও বিভিন্ন জায়গায় বেড়াতে যাওয়ার জন্য বাধ্য হয়।

পরবর্তীতে হঠাৎ একদিন রিয়াজ ভিকটিমকে ফুসলিয়ে জন্মদিন পালনের কথা বলে শহরের একটি হোটেলে নিয়ে জোড়পূর্বক ধর্ষন করে। এছাড়াও সে ভিকটিমকে বিয়ে করার প্রলোবন দেখিয়ে ০২ বছর ধরে শারীরিক সম্পর্ক করেছে। কিছু দিন যাবৎ রিয়াজ ভিকটিমের সাথে যোগাযোগ বিচ্ছিন্নসহ বিয়ে না করার জন্য এরিয়ে চলতে শুরু করে। তখন ভিকটিম বাধ্য হয়ে রিয়াজের পরিবারের কাছে বিষয়টি খুলে বললে রিয়াজের পরিবার ভিকটিমকে কোনো প্রকার সাহায্য না করে অপমান অপদস্থ করে গভীর রাতে বাসা থেকে বের করে দেয়।

ভিকটিমের এরুপ অভিযোগের বিষয়টি র‌্যাব-৭, চট্টগ্রাম মানবিকতার সহিত আমলে নেয়। এরই প্রেক্ষিতে র‌্যাব-৭, চট্টগ্রাম এর একটি আভিযানিক দল বর্ণিত প্রতারক আসামীকে গ্রেফতারের লক্ষ্যে গত ১৮ মে ২০২২ইং তারিখ রাত আনুমানিক ১০০৫ ঘটিকায় চট্টগ্রাম মহানগরীর পাঁচলাইশ থানাধীন আল মাদানী রোডস্থ একটি প্যাশন টেইলার্স এর ভিতরে অভিযান পরিচালনা করে আসামী মাঃ রিয়াজ প্রকাশ জুবায়ের (২৮), পিতা- মোঃ সিরাজ, সাং- চর কালাচাঁন, থানা- লালমোহন, জেলা- ভোলা এ/পি- ইদ্রিস কলোনী, দক্ষিণ শুলকবহর, থানা- পাঁচলাইশ, চট্টগ্রাম মহানগর‘কে আটক করতে সক্ষম হয়।

ধৃত প্রতারক আসামী রিয়াজ (২৮) পেশায় একজন দর্জি যার কাছে বিভিন্ন নারীরা পোষাক তৈরির জন্য আসে এবং প্রয়োজনীয়তার তাগিদেই তাদের মোবাইল নাম্বারসহ বিভিন্ন তথ্যাদি দর্জিকে প্রদান করতো। এছাড়াও রিয়াজ স্মার্টফোন ব্যবহারে দক্ষ হওয়াও অনলাইলে বিভিন্ন সাইটসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের বিভিন্ন সফটওয়্যার ব্যবহার (হ্যাকিং সহ) সম্পর্কে জানা আছে তার। সে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ অন্যান্য ওয়েবসাইট ব্যবহার করে উঠতি বয়সি মেয়েদেরকে ফাঁদে ফেলে প্রথমে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তুলতো এবং পরে অনলাইনে ভিডিও কলিং/রেকর্ডিং সহ অন্যান্য পন্থায় তাদের থেকে ব্যক্তিগত মুহুর্তের বা অশ্লীল ভিডিও ক্লিপস নিজের জিম্মায় নিয়ে নিতো। পরবর্তীতে সেই সকল ভিডিও ক্লিপস সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়ার হুমকির মাধ্যমে তাদের সাথে আর্থিক লেনদেন, অনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনে বাধ্য করা সহ বিভিন্ন ভাবে বøাকমেইলিং করতো। আটককৃত রিয়াজ একজন বহুগামী পুরুষ যে একই সাথে বিভিন্ন নারীর সাথে সম্পর্ক রাখতো এবং সম্পর্কের এক পর্যায়ে তাদের মধ্যে ঘনিষ্ঠতার মাধ্যমে শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন করত। উক্ত নারীর অজান্তেই স্পর্শকাতর মূহুর্তের ভিডিও ও ছবি তুলে রাখতো পরবর্তীতে উক্ত নারীর সাথে আবারো সম্পর্ক স্থাপন করার জন্য ব্ল্যাকমেইল করত। রিয়াজের মোবাইল পরীক্ষা করে বিভিন্ন নারীর সাথে তার সম্পর্কের প্রমাণ পাওয়া যায়। এছাড়াও তার মোবাইল পরীক্ষা করে ব্যক্তিগত মুহূর্তের কিছু ছবি ও ভিডিও উদ্ধার করা হয় এবং তার মোবাইল দেখা যায় সে ব্যক্তিগত মুহূর্তের ঐ সকল ভিডিও এবং বিভিন্ন নারীর নগ্ন ছবি বিভিন্ন ব্যক্তিবর্গের মোবাইলে ছড়িয়ে দিয়েছে।

পরবর্তীতে উপস্থিত স্বাক্ষীদের সম্মুখে আসামীকে জিজ্ঞাসাবাদে ধৃত আসামী উল্লেখিত ঘটনার কথা অকপটে স্বীকার করে। সে কৌশলে নারীদের এর সরলতার সুযোগে নগ্ন ছবি তুলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরালসহ বিভিন্ন সময়ে হোয়াটসএ্যাপে ও ম্যাসেঞ্জারে বিভিন্নভাবে হুমকি ও ভয়ভীতি দেখিয়ে তাদের সাথে শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন করত বলে জানা য়ায়।

গ্রেফতারকৃত আসামীর সংক্রান্তে পরবর্তী আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহনের নিমিত্তে সংশ্লিষ্ট থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *