বিশেষ প্রতিনিধি
চট্রগ্রাম থেকে
কর্নফুলী চরপাথরঘাটায় যত্রতত্র ভুয়া জন্ম নিবন্ধন সনদ ও জাতীয়তা সনদ পত্রের ছড়াছড়ি চলছে বলে অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে। বিভিন্ন কম্পিউটারের দোকান থেকে হুবহু এসব ভুঁয়া সনদ সংগ্রহের পাশাপাশি চরপাথরঘাটা ১নং( খ) ইউনিয়ন পরিষদ থেকে টাকার বিনিময়ে পাচ্ছে সীল স্বাক্ষর সহ সব ধরনের সনদ।
এ প্রক্রিয়ায় ইউনিয়নে রয়েছে সচিব সহ একটি শক্তিশালী প্রতারক চক্র। দীর্ঘদিন ধরে তারা এই প্রতারণা করে বিপুল টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে বলে জানান ভুক্তভোগীরা। এমনকি মোটা অংকের বিনিময়ে এসব সনদ রোহিঙ্গাদের সরবরাহ করে বিভিন্ন সরকারি গুরুত্বপূর্ণ কাজ আদায় করে নিচ্ছে বলেও অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে।
সচেতন মহলের অভিযোগ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এসব অবৈধ কর্মকান্ড জেনেও কোন আইনী ব্যবস্থা না নেওয়ায় এসব প্রতারক চক্র আর ইউপি সচিব নজরুল বেপরোয়া হয়ে উঠেছে দিনেদিনে।
চরপাথরঘাটার এক শিক্ষক বলেন,সম্প্রতি প্রথম শ্রেণিতে ভর্তি করানোর জন্য শিশুদের জন্ম নিবন্ধন বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। সে হিসেবে অনেকে জন্ম নিবন্ধন সনদ আনছে তা পরীক্ষা নিরীক্ষা করে দেখা গেছে। অনেক জন্ম নিবন্ধন সনদ ভূয়া, আসল জন্ম নিবন্ধন সনদের সাথে মিল করে দেখা গেছে অসংখ্য ভূয়া জন্ম নিবন্ধন সনদ স্কুলে যাচ্ছে।
কিছু সনদে বেসরকারি ভাবে নির্বাচিত চেয়ারম্যান হাজি ছাবের আহমদ স্বাক্ষরিত,আর কিছু সনদে জাল স্বাক্ষর বলে নিশ্চিত করেন স্থানীয় যুবক সেলিম। পরে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ভোলা জেলার এক যুবক নাজমুল হাসানকে কর্নফুলীতে স্থানীয় বাসিন্দা ও জম্মসুত্রে চরপাথরঘাটা ৪নং ওয়ার্ডের নাগরিক বলে জম্মসনদ দেন। যার নং ২০১২১৫১৬১২৭১০১৬৪০, কি আজব বিষয় টাকার বিনিময়ে তা আবার অনলাইন ও করে দেন সাথে সাথে।
অন্যদিকে ৪নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য আবু তাহের এর উপরোক্ত বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি ভোলার কোন নাগরিককে জম্ম সনদে প্রদান সহযোগিতা করেনি বলে মোবাইল ফোনে নিশ্চিত করেন। এবিষয়ে জানতে ইউপি সচিব নজরুল ও বিষয়টি অস্বীকার করেন।
বর্তমানে গণহারে রোহিঙ্গাদের এসব জন্ম নিবন্ধন সনদ ও জাতীয়তা সনদ সরবরাহ করছে বলে গুরুতর অভিযোগ পাচ্ছে যাচ্ছে। আরো জানা যায়, প্রতিটি জন্ম নিবন্ধন সনদের জন্য ৪০০/৮০০ টাকা করে নিচ্ছে। এলাকার স্কুল শিক্ষকদের অভিযোগ পুরো এলাকায় যতসব ভুয়া জাতীয়তা সনদ, জন্ম নিবন্ধন সনদ, আইডি কার্ড আছে বেশির ভাগ ভুয়া এবং এলাকার সবাই জানে এসব কাজ কারা করে কিভাবে করে তাও সকলে অবগত বলে মন্তব্য করেন।
আশে পাশের মিলকারখানায় এসব ভুয়া জম্মসনদ ও ভুয়া আইডির ছায়া কপি দিয়ে চাকরি নিচ্ছে অহরহ এমন তথ্য জানা যায়। সরকারি এক কর্মকর্তা জানান, এলাকায় বর্তমানে জন্ম নিবন্ধন সনদের ব্যাপক চাহিদা বেড়েছে। তাই কিছু প্রতারক চক্র কম্পিউটার থেকে হুবহু নকল করে সনদ বের করে। সীল স্বাক্ষর মেরে তা বিভিন্ন জায়গায় ব্যবহার করে কাজ আদায় করে নিচ্ছে এবং যারা ভুঁয়া সনদ নিচ্ছে তারা বেশির ভাগ রোহিঙ্গা যেহেতু তাদের পূর্বে সঠিক কাগজ পত্র নেই তাই তারা প্রতারকদের আশ্রয় নেয়। আর প্রতারকরাও টাকার জন্য রাষ্ট্রদ্রোহিতার মত এসব জঘন্য কাজ করছে বলে জানা যায়।
স্থানীয়সুত্রে জানা যায়, এসব ভুয়া সনদ বাণিজ্য চলছে বহুদিন ধরে,জনগনের মতে চরপাথরঘাটা ইউনিয়ন কর্তৃপক্ষও এসব বিষয়ে কিছুটা জানে। তবে এ পর্যন্ত কোন আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়নি। তাই তারা আরো বেপরোয়া হয়ে পড়েছে। তাদের অভিযোগ রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ কাজ যেমন পাসপোর্ট তৈরি করা, যে কোন মামলা করা, বা মামলা জানি নেওয়া, জমি নামজারী করা, ড্রাইভিং লাইসেন্স করা, স্কুল কলেজে ভর্তি হওয়াসহ অসংখ্য সরকারি সুযোগ-সুবিধা ভোগ করাতে এসব ভুয়া সনদ ব্যবহার করছে। তবে এটাও ঠিক কোন প্রতিষ্ঠানে তাৎক্ষণিক আসল বা নকল সনদ যাচাইয়ের কোন ব্যবস্থা নেই। কথা হচ্ছে যদি এসব বিষয় কর্তৃপক্ষ জানে তবে কেন তারা ব্যবস্থা নিচ্ছে না।
তারা আরো বলেন শুধু কর্নফুলীতে নয় এসব সনদ বিভিন্ন জেলাতে এবং আন্তর্জাতিক কাজেও ব্যবহার করা হচ্ছে। তাই দেশের নিরাপত্তা ও ভাবমূর্তির বিষয়ে নজর দেওয়া দরকার। এ ব্যাপারে আলাপকালে সাবেক এক জনপ্রতিনিধি বলেন,এ ধরনের কাজ রাষ্ট্রদ্রোহীতার শামিল। যেসব প্রতিষ্ঠান এ ধরনের সনদ পাবে তারা যদি প্রশাসনকে অবহিত করে তাহলে সরকার অবশ্যই ব্যবস্থা নেবে।
অন্যদিকে চরপাথরঘাটা ৭নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য সাইফুল হক ও মহিলা সদস্যা নুরতাজ বেগম বলেন ভিন্ন কথা,তারা নির্বাচিত হয়েও কোন বাজেট পাচ্ছেন না অথচ যারা এখনো শপথ গ্রহনও করেনি তারা কাবিকা,টিআর সহ নানা কর্মসূচী সুযোগ সুবিধা পাচ্ছে। এটা কোন নিয়মে অনিয়ম হচ্ছে তারা বুঝতে পারছেনা বলেও জানান প্রতিবেদককে।
তথ্যসুত্রে জানা যায়,চরপাথরঘাটা ইউনিয়নে এখনো সরকারি নিয়মে কোন চেয়ারম্যানের শপথ গ্রহন হয়নি।কেননা মহামান্য হাইকোর্টে রিট মামলায় ঝুলিয়ে রয়েছে। তারপরেও বিভিন্ন কাজে পুর্বের চেয়ারম্যান হাজি ছাবের আহমদ সব ধরনের সনদ,সার্টিফিকেট, ওয়ারিশ সনদ সহ জম্মসনদ প্রদান কোন নিয়ম বা আইন লঙ্গন কাজ কিনা কেহ জানেনা বলে জানান।
পটিয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসারের দায়িত্ব থাকা সহকারি কমিশনার ভূমি গৌতম বাড়ৈ বলেন ,কারা এ ধরনের জন্ম নিবন্ধন সনদ দিচ্ছে অবশ্যই খতিয়ে দেখবে, অতি শীঘ্রই এসব প্রতারণার বিরুদ্ধে অভিযানে নামবে বলেও জানান তিনি।