নিজস্ব প্রতিনিধিঃ
রাজশাহী-১ আসনের (তানোর-গোদাগাড়ী) সংসদ সদস্য ওমর ফারুক চৌধুরীর ভাতিজা পরিচয় দিয়ে বিভিন্ন দপ্তরে সরকারী চাকরি দেয়ার প্রলোভন দিয়ে প্রায় তিন কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ উঠেছে থিম ওমর প্লাজার প্রশাসনিক কর্মকর্তা নাহিদুজ্জামান পাপ্পুর নামে।
মঙ্গলবার(২৮ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে প্রতারণার শিকার ৩০ থেকে ৪০ জন যুবক ও তাদের পরিবারের সদস্যরা রাজশাহী নগরীর বিসিক এলাকার ম্যাচ ফ্যাক্টারির সামনে পাপ্পুর বাসা ঘেরাও করে। খবর পেয়ে সন্ধ্যায় পুলিশ গিয়ে পাপ্পুকে আটক করে থানায় নিয়ে যায়। নাহিদুজ্জামান পাপ্পু এমপি ওমর ফারুক চৌধুরীর শপিংমল থিম ওমর প্লাজার প্রশাসনিক কর্মকর্তা। তার বাড়ি নগরীর কাদিরগঞ্জ এলাকায়।
তবে তিনি নগরীর সুপুরা ম্যাচ ফ্যাক্টারির সামনে ফ্লাট কিনে সেখানে বসবাস করেন।
বোয়ালিয়া মডেল থানার ওসি সোহরাওয়ার্দী বলেন, খবর পেয়ে পুলিশ গিয়ে জনরোষানল থেকে পাপ্পুকে উদ্ধার করে থানা হেফাজতে নেয়া হয়, পরে ভুক্তভোগীদের অভিযোগে মামলা নেওয়া হয়। পরে আটক পাপ্পুকে প্রতারণার দায়ে কোটের মাধ্যমে জেলহাজতে প্রেরণ করা হয়েছে।
ভুক্তভোগিরা জানান, পাপ্পু নিজেকে এমপি ওমর ফারুক চৌধুীর ভাতিজা পরিচয় দিতেন। তিনি এমপিকে দিয়ে চাকরি নিয়ে দেবেন এমন আশ্বাসও দেন। চাকরি নিয়ে দেয়ার নাম করে ২৫ থেকে ৩০ জনের কাছ থেকে তিনি প্রায় তিন কোটি হাতিয়ে নিয়েছে। কিন্তু কারও কপালে চাকরি জোটেনি। বরং পাপ্পুর কাছে টাকা ফেতর চাইলে উল্টা চাঁদাবাজির মামলার দিয়ে পুলিশে দেয়ার হুমকি-ধামকি দিতো।’’ তারা আরও জানান, ‘‘টাকার জন্য চাপ দিয়ে অনেকেই চাকরির ভুয়া নিয়োগপত্র দেয়া হয়। ভুয়া ওই নিয়োগপত্র নিয়ে চাকরিরস্থলে যোগদান করতে গিয়ে অনেকেই হয়রানির শিকার হয়েছেন।’’ প্রতারণার শিকার আলমগীর হোসেন জানান, এমপি ওমর ফারুক চৌধুরীর ভাতিজা পরিচয় দিয়ে পাপ্পু আমাকে রাজশাহী সিটি করপোরেশনে স্বাস্থ্য সহকারী পদে চাকরি দেয়ার কথা বলে। এ জন্য আমার কাছ থেকে তিনি ২ লাখ টাকা নেয়। চাকরি পাওয়ার পর আরও তিন লাখ টাকা দেয়ার কথা ছিল। তিনি আরও বলেন, সিটি করপোরেশনের স্বাস্থ্য সহকারী পদে চাকরি দেয়ার কথা বলে আরও আটজনের কাছ থেকে দুই লাখ করে টাকা নিয়েছে। কিন্তু টাকা নেয়া দীর্ঘদিন হয়ে গেলেও কাউকে চাকরি দিতে পারেনি পাপ্পু। একাধিকবার টাকা ফেরত চাইলেও টাকা দেয়নি। সম্প্রতি টাকা চাইতে গেলে আমাকে চাঁদাবাজির মামলায় ফাঁসিয়ে দেয়ার হুমকি দেয়।’’
চাকরি প্রার্থী ইমন আলী জানান, রেলে চাকরি দেয়ার নামে তার কাছে থেকে ১১ লাখ টাকা হারিয়ে নেয় পাপ্পু। গত বছর তাকে রেলে চাকরি দেয়ার কথা ছিল। রেলে চাকরি দেয়ার কথা বলে আমিসহ আরও ১০ জনের কাছ থেকে এক কোটি টাকার বেশী হাতিয়ে নিয়েছে। তিনি বলেন, আমাদের ভুয়া নিয়োগপত্রও দেয়া হয়। আমরা ১০ জনই নিয়োগপত্র পাওয়ার পর চট্টগ্রাম রেলের দপ্তরে যাই যোগদান করতে। সেখানে গিয়ে জানতে পারি
আমাদের নিয়োগপত্র ভুয়া। পরে তারা ফিরে এসে পাপ্পুকে বিষয়টি জানালে তিনি ক্ষিপ্ত হয়ে যান। তারা টাকা ফেরত চাইলে গড়িমশি শুরু করেন পাপ্পু। এক পর্যায়ে টাকা ফেরত দিবে বলে দেয়নি। কিন্তু সময় গড়ালেও তিনি আর টাকা ফেরত দেননি।
পুলিশের এসআই পদে চাকরি নিয়ে দেয়ার নামে ফায়সাল হোসেন নামের এক যুবকের কাছ থেকে ১৬ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে পাপ্পু। এই টাকা নিয়েছেন এমপি ফারুক চৌধুরীর নামে। এমপি ফারুক চৌধুরী তাকে চাকরি নিয়ে দিবে বলে তার কাছ থেকে এ টাকা নেয়া হয়। ফায়সাল জানান, আমার সাথে চুক্তি হয় ২০ লাখ টাকা। কিন্তু বছর গড়ালেও পুলিশের চাকরি পায়নি। টাকা ফেরত চাইতে গেলে তিনি এমপির ভয় দেখান। হুমকি ধামকি দেন। আবার বলেন, এমপি টাকা
নিয়েছেন তার কাছে গিয়ে টাকা ফেরত নেন।
তবে গত ২৮ ফেব্রুয়ারীতে যখন ভুক্তভোগীরা পাপ্পুর বাসা ঘেরাও করেন, তখন পাপ্পুর দ্বিতীয় স্ত্রী পরিচয়ে এক নারী সাংবাদিকদের বলেন, সব টাকা এমপি ফারুক চৌধুরী নিয়েছে। তার কাছে গিয়ে টাকা নেন।
উল্লেখ্য, এমপি ওমর ফারুক চৌধুরী’র বিরুদ্ধে মাদক, শিক্ষক নিয়োগ, দলীয় কোন্দল সৃষ্টি সহ নানা সময় নানা অনিয়ম দুর্নীতি ও বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের জড়িত হওয়ার সংবাদ প্রকাশ হয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে রাজশাহী-১ (তানোর-গোদাগাড়ী)
আসনের এমপি, ওমর ফারুক চৌধুরীকে একাধিকবার ফোন দেওয়া হলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি। তাই তার বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরো পড়ুন