নাজমুল হুদা পারভেজ চিলমারী থেকে-
গত এক সপ্তাহ ধরে একটানা বৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি জলের ঢলে কুড়িগ্রামের চিলমারী উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চল গুলি প্লাবিত হয়েছে নদের জলে।ব্রহ্মপুত্র নদের পানি বৃদ্ধপেলেও আজ বিকাল ৫টা পর্যন্ত বিপদসীমার ১০৬ সেঃমিঃ নীচে অবস্থান করছিল। তবে নদে পানি বৃদ্ধির কারণে উপজেলার নিম্নাঞ্চলে শত শত একর জমির পাট, বোরো ধান , পিঁয়াজ ও মসলা জাতীয় রাঁধুনি ফসল পানির নীচে তলিয়ে যাওয়ায় দিশেহারা হয়ে পরেছে কৃষি নির্ভর পরিবারসহ প্রান্তিক কৃষকরা।
সরেজমিনে উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়ন গুলি পরিদর্শন কালে দেখা যায় নিম্নাঞ্চলের শত শত একর জমির ধান, পাট , পিঁয়াজ ও মসলা জাতীয় রাঁধুনি ফসল পানির নীচে তলিয়ে গেছে। উপজেলার রাণীগঞ্জ ইউনিয়নের ২ নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য বাচ্চু মিঞা জানান, তার ওয়ার্ডের চর উদিনায় ১৫ থেকে ২০ একর জমির পাট ও বোরো -২৮,২৯ ধান গত দুই দিনের পাহাড়ি ঢলে তলিয়ে গেছে। তিনি বলেন,দুই-এক দিনের মধ্যে পানি নেমে না গেলে এই সকল তলিয়ে যাওয়া ফসল কৃষকরা ঘরে তুলতে পারবে না। এদিকে একই ইউনিয়নের মাগুড়ার বিলের সাব গেট বাধের পশ্চিমে প্রায় ৩০০ একর জমির ধান ও পাট এখন পানির তলে। উক্ত এলাকার প্রান্তিক কৃষক মোঃ বক্তার আলী ( সাবেক ইউপি সদস্য) বলেন, ধান কেটে ঘরে তুলে আনার মতো শ্রমিক সংকট দেখা দিয়েছে।তিনি আরও জানান, ক্রমাগত পানি বৃদ্ধি এবং ধান কাটা শ্রমিকদের সংকট দেখা দেয়ায় শ্রমিকরা ১ বিঘা জমির ধান শুধু কেটে দিতেই চুক্তি ভিত্তিক ১২ হাজার টাকা এবং জমি থেকে ধান কেটে কৃষকের বাড়িতে এনে ধানের আঁটি থেকে পিটিয়ে ধান মারে দিতে ১৪ হাজার টাকা নিচ্ছে। এছাড়াও কৃষককে ২০জন শ্রমিককে এক বেলা খাওয়াতেও হচ্ছে।
উপজেলার নয়ারহাট ইউনিয়নের বজরা দিয়ারখাতা,বাতাসু কাজল ডাংগা, হাতিয়াবাবদ, ৪ থেকে ৫ একর জমির ধান সম্পূর্ণ পানিতে তলিয়ে গেছে। উক্ত ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ডের বাসিন্দারা জানান, তাদের এলাকার প্রায় ৬০ একর জমির পাট পানিতে তলিয়ে গেছে। উক্ত ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মোঃ আব্দুর রশিদ এর সাথে কথা বলে জানাগেছে, সেখানে ১ বিঘা জমির ধান শুধু কেটে দিতেই শ্রমিকরা ৬ হাজার টাকা চুক্তি নিয়ে কাটছে। ধান কেটে জমির মালিকের বাড়িতে পৌঁছে দিয়ে পিটিয়ে ধান ঝেড়ে দিলে নিচ্ছে ৮ থেকে ১০ হাজার টাকা। একই ইউনিয়নের দক্ষিণ খেরুয়ার বাজার পাড়া, এলাকায় প্রায় দশ একর জমির পাট ও সমপরিমাণ জমির ধান, খেরুয়ার মধ্যের চর এলাকায় ২০ একর জমির পাট ও ১০ একর জমির ধান এবং পূর্ব খেরুয়ায় প্রায় ২৫ একর জমির পাট ও প্রায় ২০ একর জমির বোরোধান পানির নীচে তলিয়ে গেছে। উক্ত এলাকার প্রান্তিক কৃষক ইমান আলী (৫৫) এ প্রতিনিধিকে বলেন, একটি ধান কাটা শ্রমিক দলে ২০ জন শ্রমিক থাকে। তারা জনপ্রতি ৭০০টাকা নেয় এক বিঘা জমির ধান ঘরে তুলে দিতে এছাড়াও তার এলাকার শ্রমিকদেরকে কে দু বেলা খাওয়াতে হচ্ছে গৃহস্থকে। রাণীগঞ্জ ও থানাহাট ইউনিয়নের মাঝামাঝিতে অবস্থিত চাঁচলার বিলটিও নদের জলে তলিয়ে যাওয়ায় মধ্যবিত্ত কৃষকরা শ্রমিক সংকটে পরেছে। রাণীগঞ্জ ইউনিয়নের বিজু মেম্বার বলেন বিলটিতে শত শত বিঘা জমির ধান পানির তলে তলিয়ে গেছে। একই ইউনিয়নের জাহাঙ্গীর মেম্বার জানান চর বড়ভিটা এলাকায় প্রায় ৬০ একর জমির ধান ও পাট উজানি জলের ঢলে তলিয়ে গেছে।
সরেজমিনে উপজেলার অষ্টমীরচর ইউনিয়নের ডাটিয়ারচর, জুগিদহ ,খামার বাঁশপাতার ও মুদাফৎ কালিকাপুর এলাকার শত শত বিঘা জমির বোরো ধান, পাট ও রাঁধুনি সজ ফসল পানির নীচে তলিয়ে গেছে। উক্ত এলাকার ইউপি চেয়ারম্যান মোঃ সোহরাব হোসেনর মুখোমুখি হলে তিনি আশংকা করে বলেন নদের পানি গত তিন দিন থেকে ক্রমান্বয়ে বেড়েই চলছে। এভাবে নদে পানি বাড়া অব্যাহত থাকলে বিপর্যয় দেখা দিতে পারে তার ইউনিয়নের কৃষিনির্ভর ৯৫ ভাগ পরিবারকে। তিনি আরও বলেন পানি ২-১ দিনের মধ্যে না নামলে ধান,পাটসহ অন্যান্য ফসল রক্ষা হবে না।
=========