লালমনিরহাট প্রতিনিধি :
উত্তেজনায় গত রাতে ঘুম যেন আসছিল না ৫ম শ্রেণিতে পড়ুয়া আব্দুল্লাহ আল ফয়সাল শিহাবের। আসবেই বা কিভাবে? রাত পোহালেই অনেক দিন পর যে স্কুল খুলছে তার। সেই ছোটবেলা থেকে এমনিতেই কোনো দিন স্কুল মিস করতো না সে। পড়তো লালমনিরহাটের শিবরাম আদর্শ পাবলিক স্কুল এন্ড কলেজে। পুরোনো স্কুল। পড়াশোনায়ও প্রতিযোগিতা বেশ। মা-বাবা কোথাও যেতে চাইলে যেতেও চাইতো না, করতো কান্না। কারণ কোথাও বেড়াতে গেলে যে পড়াশোনায় পিছিয়ে পড়বে সে। আর কান্না করতো বলে মা-বাবার বেড়ানোও হতো না কোথাও। শনিবার বিকেল বেলা। শিহাবের মনে পড়ে যায় তার স্কুল ড্রেসের কথা। প্রায় দেড় বছর হলো ড্রেস পরা হয়নি তার। নষ্ট হয়নি তো ! কারণ সকাল হলেই যে তার স্বপ্নের স্কুল খুলছে। যেতে হবে ড্রেস পরে। মাকে বের করে দিতে বলে সেই ড্রেস, যা সে ১৮ মাস আগে পড়েছিল। বলা মাত্রই বের করে দেন মমতাময়ী মা। পরিধান করে ড্রেসিংটেবিলে নিজেকে দেখে নেয় সে । একি! শার্ট ও প্যান্ট দু’টোই যে একেবারে ছোট হয়ে গেছে তার। কিভাবে বুঝবে ছোট শিহাব? আঠার মাস তো কম সময নয়! এই সময়ের মধ্যেই সে যে বেড়ে উঠেছে বেশ। কখন সকাল হবে? তার প্রিয় স্কুল শিবরামে সে যাবে! ঘুম যে আসছে না তার। এমন নানা ভাবনায় এক সময় পরশ বুলিয়ে দেয় নিদ্রা দেবী মা। ঘুমিয়ে পড়ে সে। ফজরের আজান হয়েছে। মা ডেকে দেয় সকাল সকাল। বাথরুমে ঢুকে পাঁচ মিনিটে স্নান সেরে নেয় সে। তারপর দ্রুত খেয়ে নিয়ে স্কুলের পথে বেড়িয়ে পড়ে শিহাব। আজ চোখে পড়ছে শিক্ষার্থীদের দলবেধে যাওয়ার সেই চিরচেনা রূপ। শিক্ষকদেরও দেখা যায় সকাল সকাল স্কুল, কলেজ ও মাদ্রসায় যেতে। সব মিলে সকল শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের নিকট খোলার আগের রাত এবং আজকের দিনটি একটি অন্যরকম রাত ও অন্যরকম দিন যা পরবর্তী প্রজন্মের নিকট হবে গল্পের খোরাক। শুধু শিহাব নয়, তার মতো লাখ লাখ শিহাব যে দীর্ঘ বন্ধের পর তাদের প্রিয় স্কুলে যেতে উৎসাহিত ছিল বলার অপেক্ষা রাখেনা তা। তারাও হয়তো শিহাবের মতো ঘুমোতে পারেনি স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসায় যাওয়ার উত্তেজনা নিয়ে। হয়তোবা স্কুল ড্রেসও ছোট হয়েছে কারো কারো। বিশেষ করে প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক স্তরে অধ্যয়ন করছে এমন শিক্ষার্থীদের পরিবর্তন হয়েছে শারীরিক গঠন, ছোট হয়েছে তাদের ড্রেস। অনেকের বাবা হয়তো তার প্রিয় সন্তানটির জন্য কিনে দিয়েছেন নতুন পোশাক, অনেক বাবাই হয়তোবা পারেননি। সে যাই হোক, কমতে শুরু করেছে নভেল করোনাভাইরাসের সংক্রমণ। খুলেছে প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক স্তরের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। আবার ফিরেছে শিক্ষার্থীরা তাদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে। প্রাণ ফিরেছে শ্রেণি কক্ষ ও ক্যাম্পাসে। দয়াময় সৃষ্টিকর্তা দূর করে দিবেন করোনাভাইরাস। বন্ধ হবে না আর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, সেই প্রত্যাশা সবার।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরো পড়ুন