কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি:-
কুড়িগ্রামের ভূরুঙ্গামারীতে জন্মের মাত্র ৫ ঘন্টার মধ্যে কন্যা সন্তানকে দত্তক দেন বাবা,কিন্তু বিষয়টি জানাজানির পর প্রশাসেন হস্তক্ষেপে আবার ঐ কন্যা সন্তানকে ফিরিয়ে দেয়া হয়েছে মায়ের কোলে । ঘটনাটি ঘটেছে উপজেলার বঙ্গসোনাহাট ইউনিয়নের বানুরকুটি শঠিবাড়ী নামক গ্রামে। ওই গ্রামের মৃত মোফাজ্জল হোসেনের পুত্র শফিকুল ইসলামের স্ত্রী মরিয়ম বেগম(২৮) শনিবার ভোর পাঁচটার দিকে নিজ বাড়িতে একটি কন্যা সন্তানের জন্ম দেন। ওই সন্তানকে ভরণ পোষণ দিতে না পারার শঙ্কায় জন্মের মাত্র ৫ ঘন্টা পর সকাল ১০টার দিকে দত্তক দেন প্রতিবেশি এক মামাতো বোনের হাতে। এটি ওই দম্পতির পঞ্চম সন্তান। তবে লোক মূখে ছড়িয়েছে অভাবের তাড়নায় ২০হাজার টাকার বিনিময়ে অন্যের হাতে সন্তানকে তুলে দিয়েছেন বাবা শফিকুল ইসলাম। অপর দিকে চার বছর আগে ওই দম্পতি আরেক কন্যা সন্তানকে অজানা লোকের কাছে তুলে দেন।
সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, শফিকুল ইসলাম একজন বন্দর শ্রমিক। তিনি সোনাহাট বন্দরে শ্রমিকের কাজ করেন। তার তিন শতক জমি রয়েছে। তবে থাকার কোন ঘর নাই। ছোট ভাইয়ের ঘরে থাকেন পরিবার নিয়ে। প্রায় ১৩ বছর আগে নাগেশ্বরী উপজেলার বল্লভের খাষ ইউনিয়নের খাষমহল গ্রামের মরিয়ম বেগমকে বিয়ে করেন তিনি। অভাবের সংসারে ইতিমধ্যে জন্মগ্রহণ করেছে ৪টি সন্তান। প্রথম সন্তান মফিজুল ইসলামের বয়স ৯ বছর, দ্বিতীয় সন্তান জান্নাতের বয়স ৭ বছর। এরপর তৃতীয় সন্তান ৪ বছর আগে জন্ম নিলেও নাম রাখা হয়নি। একদিন বয়সে প্রতিবেশী আকলিমার মাধ্যমে রামখানা ইউনিয়নের অজান দম্পত্বির কাছে দত্তক দিয়েছেন। চতুর্থ সন্তান মোস্তফার বয়স ৩বছর। এরপর পঞ্চম সন্তান মুক্তি জন্ম নেয়ার কয়েক ঘন্টার মধ্যে দিয়ে দেন প্রতিবেশী মামাতো বোন নি:সন্তান লাকী বেগম ও আলমগীর দম্পত্বির কাছে।
লাকী ও আলমগীর দম্পত্বির বাড়ি ভূরুঙ্গামারী সদর ইউনিয়নের গোপালপুর গ্রামে। তবে এই দম্পতি ঢাকায় পোশাক শ্রমিক হিসেবে কাজ করে বলে নিশ্চিত করেছেন লাকী বেগমের পিতা আকবর আলী।
স্থানীয় বাসিন্দা নজরুল ইসলাম জানান, শফিকুলের নিজস্ব ঘর বাড়ি নেই। ছোট ভাইয়ের বাড়িতে থাকে। স্থলবন্দরে পাথর ভাঙা শ্রমিকের কাজ করে খুব কষ্ট করে সংসার চালায়। এই লোকের বর্তমানে তিনটি বাচ্চা আছে। এই নিয়ে তিনি দুটি মেয়ে বাচ্চা দত্তক দিয়েছেন।
শফিকুল ইসলাম বলেন, আমি সোনাহাট স্থলবন্দরে পাথর ভাঙ্গা শ্রমিকের কাজ করি। আমার থাকার কোন ঘর নাই। ছোট ভাইয়ের বাড়িতে আশ্রিত থাকি। শ্রমের সামান্য আয় দিয়ে অসুস্থ স্ত্রীর চিকিৎসা, তিন সন্তানের ভরণ পোষণ ও সংসারের খরচ চালানো আমার পক্ষে অসম্ভব হয়ে দাড়িয়েছে। সবসময় অভাবের মধ্যে থাকতে হয়। তাই বাধ্য হয়ে বুকের ধনকে অন্যের হাতে তুলে দিয়েছি। এর আগেও আরেক মেয়েকেও অন্যের কাছে দিয়েছি। সেটার খোঁজ খবর জানিনা। বলতে পারেন অভাবের কারণেই এই পথে হাটা। এছাড়াও ২০ হাজার টাকায় সন্তানকে অন্যের হাতে তুলে দেয়ার কথা সত্য নয় বলে দাবী করে বলেন, এতগুলো সন্তানের মুখে খাবার তুলে দেয়া আমার পক্ষে সম্ভব না। অন্যের কাছে ভালো পরিবেশে আদর যত্নে মানুষ হবে এই ভেবে তাদেরকে দিয়েছি। টাকা নেয়ার প্রশ্নই আসে না।
শফিকুলের স্ত্রী মরিয়ম বেগম জানান, অভাব অনটনের জন্য মেয়েকে অন্যের কাছে দিয়েছি। সন্তানকে বিক্রি বা টাকার বিনিময়ে দেইনি। শিশুকে দত্তক নেওয়া আলমগীর হোসেন জানান, আমরা নিঃসন্তান হওয়ায় শিশুটিকে দত্তক নিয়েছি। টাকা পয়সা দিয়ে কিনে নেয়ার বিষয়টি সত্য নয়। ইউপি সদস্য মনোয়ার হোসেন জানান, পূর্বে একটি সন্তান দত্তক দেওয়ার কথা জেনেছি। আজকের বিষয়টি জানার পর প্রশাসনের নির্দেশনায় ইউপি চেয়ারম্যানের হস্তক্ষেপে দত্তক দেয়া সেই কন্যা সন্তানকে আবার তার বাবা মায়ের কোলে দেয়া হয়েছে।
সোনাহাট ইউপি চেয়ারম্যান মায়নুল ইসলাম লিটন জানান,ভুরুঙ্গামারী উপজেলা নির্বাহী অফিসারের নির্দেশনায় দত্তক প্রদানকারী সেই কন্যা শিশুর পিতাকে সন্তান ফিরিয়ে আনার জন্য বলা হলে কয়েক ঘন্টা পর ইউনিয়ন পরিষদে আনার পর শিশুটিকে তার বাবা মায়ের জিম্মায় দেয়া হয়েছে। তবে শিশুটির পিতা তার সন্তানকে তার মামাত বোনের নিকট দত্তক দেয়ার ইচ্ছা পোষন করলে আমি পরবর্তীতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নির্দেশনায় সরকারী বিধি দত্তক দেয়ার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে। কুড়িগ্রাম জেলা প্রশাসক সাঈদুল আরীফ জানান,বাংলাদেশে অভাবের তাড়নায় সন্তান বিক্রি কথাটি সঠিক নয়। একটি মহল সরকারের সুনাম নষ্ট করতে এমন প্রচারনা চালায়। শিশুটিকে ইতিমধ্যে তার মা বাবার কোলে ফেরত দেয়া হয়েছে। তবে শিশুটির বাবাকে আবেদন করতে বলা হয়েছে ,আবেদন পেলে সরকারীভাবে সহায়তা প্রদান করা হবে।