মনোয়ার হোসেন লিটন, কুড়িগ্রাম
কুড়িগ্রামে জমি নিয়ে বিরোধের জেরে সহোদর ছোট ভাইয়ের আঘাতে বড় ভাই এবং পুত্রের আঘাতে পিতা রক্তাক্ত জখম হয়েছে। স্থানীয়রা আহতদের উদ্ধার করে কুড়িগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করেন।ঘটনাটি
বুধবার (১৯ জুলাই) রাত দশটার দিকে কুড়িগ্রাম জেলা সদরের বেলগাছা ইউনিয়নের ৭নং ওয়ার্ডের আত্মারাম গ্রামের।
বৃহঃপতিবার (২৯ জুলাই) দুপুরে ভিকটিমদ্বয়ের বোন জোসনা বাদী হয়ে পাঁচজনকে আসামী করে মামলা দায়ের করেন।
কুড়িগ্রাম থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোঃ ফরিদ উদ্দিন ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, মামলা রুজু করা হয়েছে। তিনজনকে ঘটনার রাতেই আটক করা হয়েছে। একজন আসামী অসুস্থ্য থাকায় তাকে পুলিশ প্রহরায় কুড়িগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। অপর দুই আসামীকে গ্রেফতার দেখিয়ে আদালতে প্রেরণ করা হয়েছে।

জানা যায়, আত্নারাম গ্রামের বাসিন্দা মৃত মনিরউদ্দিনের ৪ ছেলে মোকাদ্দেস, মোকাল্লেস, মোকলেছুর রহমান বাবু ও মোকছেদুর রহমান ৪ ভাই এবং তাদের ছোট বোন জোৎস্না। মোকলেছুর রহমান বাবু তার প্রথম স্থী মৃত্যু বরণ করার পর দ্বিতীয় বিবাহ করেন। দ্বিতীয় বিয়ে করার পর মোকলেছুর রহমান বাবু প্রথম পক্ষের তিন ছেলে মাইদুল, মিজানুর ও মিলন বাবার দ্বিতীয় বিয়ের কারণে সম্পর্কের অবনতি হয়। এক পর্যায়ে পিতা মোকলেছুর রহমান বাবু তার ৩ ছেলেকে তেজ্য করেন। মাইদুল ও মিলন বিভিন্ন কাজে যুক্ত হলেও মিজানুর রহমান পড়াশোনা করায় বড় চাচা মোকাদ্দেসের কাছে পালিত হন।

এজাহার সুত্রে জানা যায়, বাদী জোসনা, ভিকটিম জনি, মোখলেছুর রহমান ও মোকছেদুর রহমান এবং বিবাদী মোকাদ্দেছ রহমান, মোকাল্লেছ রহমান, তার দুই ছেলে মজিদুল ইসলাম মহান ও মোয়াজ এবং মিজানুর রহমানদের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে জমি নিয়ে বিরোধ এবং মামলা চলে আসছিল। এরই জেরে ঘটনার রাতে বাদী জোসনার জেলে জনি (২২) ব্যক্তিগত কাজ শেষে বাড়ী ফেরার পথে বিবাদী মোকাদ্দেছ রহমানের বাড়ীর সামনে পৌঁছামাত্র আগে থেকে ওত পেতে থাকা বিবাদীগণ জনির পথরোধ করে এবং তার উপর হামলা চালায়। তাকে টেনে-হিঁচড়ে বাড়ীর ভিতরে নিয়ে গিয়ে মারপিট করতে থাকে। জনির আত্মচিৎকারে তার মামা মোখলেছুর রহমান বাবু ও মোকছেদুর রহমান এগিয়ে আসলে বিবাদীগণ তাদের উপরও হামলা চালায় এবং মাথায় আঘাত করে কাটা রক্তাক্ত জখম করে। ভিকটিমদের চিৎকারে স্থানীয়রা এগিয়ে আসলে বিবাদীগণ তাদের উপরও চড়াও হয়। তখন স্থানীয়রা দলবদ্ধভাবে ক্ষিপ্ত হয়ে গণঢোলাই দেওয়ার চেষ্টা করলে বিবাদীগণ দৌড়ে ঘরে ঢুকে দরজা বন্ধ করে গণঢোলাই থেকে রক্ষা পায়। এসময় আহতদের উদ্ধার করে কুড়িগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করায় স্থানীয়রা। খবর পেয়ে পুলিশ গিয়ে অভিযুক্তদের উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসে। মামলা রুজুর পর মসজিদুল ইসলাম মহান ও মোয়েজকে গ্রেফতার দেখিয়ে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে প্রেরণ করে এবং অসুস্থ্য থাকায় মোকাদ্দেছ রহমানকে পুলিশ প্রহরায় কুড়িগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে বলে জানায় পুলিশ।
কুড়িগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের জরুরী বিভাগে দায়িত্বরত চিকিৎসক ডাঃ হাসান মোঃ মোহাইমেমুর খান বলেন, আহত অবস্থায় তিন জনকে হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। তাদের মধ্যে মোকসেদুর রহমানে জখম গুরুতর হওয়ায় তাকে কর্তব্যরত চিকিৎসক রংপুর হসপিটালে রেফার করেণ । অপর দুইজন কুড়িগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।

সরেজমিনে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বিবাদী মোকাদ্দেছ রহমান ও মোকাল্লেছ রহমান এবং ভিকটিম মোখলেছুর রহমান ও মোকছেদুর রহমান পরস্পর সহোদর ভাই। বিবাদী মিজানুর রহমান (২২) ভিকটিম মোখলেছুর রহমানের ঔরসজাত সন্তান তথা পরস্পর পিতা-পুত্র। আবার বিবাদী মজিদুল ইসলাম মহান ও মোয়াজ ভিকটিমদ্বয়ের আপন ভাতিজা এবং ৫নং বিবাদী মোকাল্লেছ রহমানের দুই পুত্র। অর্থাৎ ভাই-ভাতিজা ও মামা মিলে আপন ভাই, ভাগ্নে ও পিতাকে মারপিট করে রক্তাক্ত জখম করে।
স্থানীয় বাসিন্দা নাজমুল হক ও সাবেক স্থানীয় ইউপি সদস্য হানিফ জানান, মৃত মনির উদ্দিনের চারপুত্রের মধ্যে মোকাদ্দেছ ই শুধুমাত্র শিক্ষিত এবং সে কুড়িগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে ঝাড়ুদার পদে চাকুরী করে। তারা ৩০/৪০ বছর আগে থেকে জমি-জমা ভাগবাটোয়ারা করে ভোগ দখল করে আসলেও সম্প্রতি মোকাদ্দেছ বিভিন্নভাবে জাল দলিল করে কিছু জমি বেদখলের চেষ্টা চালায়। সেখান থেকেই পারিবারিক কলহসহ মামলা-মোকদ্দমার সুত্রপাত ঘটে। স্থানীয় মান্যগণ্য ব্যক্তিবর্গ দফায় দফায় আপোষ-মীমাংসার চেষ্টা চালিয়েও ব্যর্থ হয়। মুলত মোকাদ্দেছ রহমান উশৃঙ্খল, বদমেজাজী ও কুটকৌশলী হওয়ায় তাদের পারিবারিক দ্বন্দ্ব আরো বেড়ে যায়। সর্বশেষ মোকাদ্দেছের নেতৃত্বেই এই হামলার ঘটনা ঘটে।
সাবেক ইউপি সদস্য হানিফ আরো বলেন, মোকাদ্দেছ রহমান একজন চতুর্থ শ্রেণির সরকারি কর্মচারী হয়ে কিভাবে অগাধ টাকার মালিক হলেন তা আমার বোধগম্য হচ্ছে না। টাকার গরমে সে নিজের ভাই-বোনদের সঙ্গে বিবাদে জড়িয়ে পড়েন। মোকাদ্দেছ মাদক ব্যবসার সঙ্গে জড়িত আছে বলেও সন্দেহ পোষণ করেন হানিফ।

জ্যোৎস্না বলেন, মোকাদ্দেস,মহান,মিজানুর, মোয়াজ,মোকাল্লেস জমিজমা নিয়ে শত্রুতা বসত আমার ভাই ও ছেলেকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়েছে।
এর মূল নায়ক প্রাক্তন চেয়ারম্যান মাহবুব রহমান। তিনি আমার প্রতিপক্ষকে উস্কানি দেওয়ায় তারা সেই সাহসে এই ঘটনা ঘটিয়েছে।

প্রাক্তন চেয়ারম্যান মাহবুবুর রহমানের সাথে মুঠোফোনে সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ আপোস-মীমাংসার জন্য উভয় পক্ষের কাগজ-পত্র পর্যালোচনার দায়িত্ব আমার উপর ন্যাস্ত করেন। আমি উভয় পক্ষকে সঙ্গে নিয়ে বুধবার উকিলের পরামর্শের জন্য রংপুরে যাই। রংপুরে কাগজ-পত্রের ভিত্তিতে একাধিক উকিলের পরামর্শ নেই। কিন্তু আমরা সিদ্ধান্ত গ্রহণের আগেই মারামারির ঘটনা ঘটে এবং উভয় পক্ষই কম-বেশী আহত হয়। আমি এঘটনার নিন্দা জানাই।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *