জয়পুরহাট প্রতিনিধিঃ
জয়পুরহাটের পাঁচবিবি উপজেলার সোনাকুল গ্রামে সম্পত্তির প্রকৃত মালিক হওয়া স্বত্তেও প্রভাবশালীদের দাপটে তা উদ্ধার করতে পারছেন না বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। আর তাদের ন্যায্য জমা-জমি উদ্ধারে বছরের পর বছর মামলা চালাতে গিয়ে এখন প্রায় নিঃস্ব ভূমিহীনে পরিনত হতে বসেছেন পরিবারটি। ভূক্তভোগীরা হলেন, জয়পুরহাটের পাঁচবিবি উপজেলার সোনাকুল গ্রামের মৃত জয়নাল আবেদিনের ছেলে নূরুল ইসলাম (নূর) ও তার স্ত্রী জাহানুর বেগম।
সরেজমিনে জানা গেছে, ১৯৭৪ সালের দিকে সোনাকুল গ্রামের মৃত গোবরা’র ছেলে বীরসা’র ২ একর ২২ শতকের একটি পুকুর জহুর উদ্দিন মন্ডলের সাথে এওয়াজ বদল হয়। তারপর উত্তরাধীকার সূত্রে ওই সম্পত্তির প্রকৃত মালিক হন জহুর উদ্দিনের কন্যা জাহানুর বেগম। এর আগে জহুরের কন্যা জাহানুর বেগম নাবালক অবস্থায় জহুরুদ্দিন মন্ডলের অনুপস্থিতিতে পার্শ্ববর্তী কুয়াতপুর গ্রামের মৃত সোলেমান আলী আকন্দের ছেলে জহুর আকন্দ নামে অন্য একজনকে ওই ২ একর ২২ শতক সম্পত্তির ভূয়া মালিক সাজিয়ে সেই সম্পত্তির অর্ধাংশ জাল দলিলের মাধ্যমে কোবালা দলিল মূলে ক্রয় করেন সোনাকুল গ্রামের রহিম উদ্দিন মন্ডল (বর্তমানে মৃত) নামে এক ব্যাক্তি। পরে রহিম উদ্দিন মারা গেলে সেই সম্পত্তির দাবীদার তার প্রভাবশালী ৪ ছেলে। তারা হলেন ধনাঢ্য ব্যবসায়ী সাইফুল ইসলাম, হাবিবুর রহমান, সৌদি প্রবাসী আমিরুল ইসলাম ও স্কুল শিক্ষক এনামুল হক। সম্পত্তির প্রকৃত দলিলসহ প্রয়োজনীয় কাগজ-পত্রের মাধ্যমে এলাকার গন্যমান্য ব্যক্তিগনের দফায় দফায় শালিসী বৈঠকে ওই পুকুরটির ওপর জাহানুর বেগমের মালিকানা প্রমানিত হলেও রহিম উদ্দিনের প্রভাবশালী ছেলেরা সেই সম্পত্তির অবৈধ দখলদারিত্ব ছাড়তে নারাজ। পরে আদালতের সরনাপন্ন হন অসহায় জাহানুর বেগম ও তার স্বামী নূরুল ইসলাম নূর।
একই গ্রামের সত্তরোর্দ্ধ বয়সী বৃদ্ধ আয়েন উদ্দীন, আরিফ উদ্দীন, রিয়াজ উদ্দীনসহ এলাকাবাসীরা ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে আরো জানান, এওয়াজ বদলসূত্রে ওই সম্পত্তির প্রকৃত মালিক জহুর উদ্দিন লেখাপড়া জানতেন এবং তিনি সই-স্বাক্ষর করতে পারতেন। কিন্তু ভূয়া মালিক জহুর লেখাপড়া জানতেন না, তাই তার করে দেওয়া ওই দলিলে শুধু টিপসই আছে। এ ছাড়া ভূয়া জহুরের বংশ পরিচয় এবং গ্রামও ভিন্ন। পরবর্তীতে এই ভূয়া দলিল দাতা জহুর দূর্বৃত্তের হাতে নিহত হন। সূচতুর রহিম উদ্দিন প্রমান লোপাট করতেই ভূয়া দলিল দাতা জহুরকে হত্যা করে থাকতে পারেন বলে এলাকাবাসী সন্দেহ করেন।
এদিকে এলাকার গন্যমান্য ব্যক্তিদের শালিস-দরবারে সম্পতির মালিকানা স্বীকৃত হলেও রহিম উদ্দিনের প্রভাবশালী ৪ ছেলের দাপটের কারনে সম্পত্তি ফেরত না পেয়ে আদালতের দারস্থ হন অসহায় জাহানুর বেগম ও তার স্বামী নূরুল ইসলাম নূর। ভূক্তভোগী নূর জানান, এ অবস্থায় তিনি প্রায় ২৬ বছর যাবত একাধিক মামলা চালাতে গিয়ে ইতোমধ্যে ২ বিঘা আবাদি জমি, গরু-ছাগলসহ বাড়ির আসবাব পত্র বিক্রি করে এখন প্রায় নিঃস্ব। এ অবস্থায় ন্যায্য পাওনা ওই ২ একর ২২ শতক পুকুরটি ফেরত পেতে সরকারের তরিৎ পদক্ষেপ কামনা করেন অসহায় জাহানুর ও নূর।
অভিযুক্ত রহিম উদ্দিনের প্রভাবশালী ৪ ছেলের একজন হাবিবুর রহমান বলেন, আদালত যে রায় দেবেন তা তারা মেনে নেবেন। এ ব্যাপারে জাহানুর বেগম ও নুরল ইসলামের আইনজীবি এ্যাড. হাবিবুর রহমান জানান, জমির প্রকৃত মালিকানা জাহানুর ও নুরল ইসলাম আজ হোক কাল হোক সম্পত্তি ফিরে পাবেন বলে বিশ্বাস করি। বিবাদী রহিম উদ্দিনের ৪ ছেলের পক্ষের আইনজীবি এ্যাড. সামছুল ইসলামের সাথে যোগাযোগ করলে তার মোবাইল বন্ধ পাওয়া যায়।