ফারহানা আক্তার, জয়পুরহাট প্রতিনিধি

দেশের সব চেয়ে পুরাতন জয়পুরহাট চিনিকলটিতে প্রায় ১ হাজার শ্রমিক-কর্মচারীর প্রায়
সাড়ে ৭ কোটি টাকা বেতন ভাতা বকেয়া রয়েছে গেল ৫ মাস ধরে। ফলে মানবেতর জীবন যাপন
করছেন তাদের অনেকেই। ঈদের কেনাকাটা করতে পারেনি অধিকাংশ অস্বচ্ছল শ্রমিক-
কর্মচারীরা।
চিনিকল শ্রমিক-কর্মচারী ইউনিয়ন ও প্রশাসনিক কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে,
দূরাস্থাবস্থার শিকার জয়পুরহাট চিনিকলের প্রায় ১ হাজার কর্মকর্তা, কর্মচারী ও
শ্রমিকদের বেতন পাননি গত ডিসেম্বর থেকে এই এপ্রিল মাস পর্যন্ত মোট ৫ মাস।
মোট বেতন ভাতার পরিমান প্রায় সাড়ে ৭ কোটি টাকা। বকেয়া বেতন ভাতা না পাওয়ায়
অচ্ছল শ্রমিক-কর্মচারীদের জীবন-জীবিকা হয়ে পরেছে দূর্বিসহ। এই ১ হাজার পরিবারের
প্রায় ৬ হাজার অসহায় মানুষ রয়েছেন নিদারুন কষ্টে। ছেলে-মেয়েদের লেখাপড়ার খরচ, কারো
বৃদ্ধ মা বাবার চিকিৎসা ব্যায় মেটাতে ধার-কর্জ্জে জর্জড়িত তারা। সর্বশেষ এই রমজান
মাস শেষে নিজের জন্য না হোক নিদেন পক্ষে সন্তানসহ আত্মীয়-স্বজনদের জন্য ঈদের
কেনাকাটা করতে পারেননি অসহায় শ্রমিকদের অনেকেই। তাই অতি স্বত্বর সরকারি
সহায়তা চাইলেন অসহায় শ্রমিক-কর্মচারীরা।
্জয়পুরহাট চিনিকলের সিনিয়ার আর্মেচার ওয়েন্ডার (বৈদ্যুতিক মোটর সংযোজন ও
মেরামত) পদের মাহবুবুর রহমান, সিডিএসপিআইসি পদের খাইরুল ইসলাম, ডিজেল ইঞ্জিন
চালক পদের আব্দুস সালামসহ জয়পুরহাট চিনিকলের সংক্ষুব্ধ ও ভূক্তভোগী অনেক শ্রমিক-
কর্মচারী জানান, তারা খুব কম বেতনের চাকুরী করেন, এই উর্দ্ধগতির বাজারে সেই বেতন-
ভাতাও যদি ঠিকমত পাওয়া যেত তাহলে কোন রকমে দু’ বেলা ডাল-ভাতের ব্যবস্থা হতো।
সর্বশেষ আসন্ন ঈদ উপলক্ষে নিজেদের জন্যও কিছুই কিনতে পারেননি, পুরাতন জামা-কাপড়
দিয়ে কোন ভাবে ঈদ উদযাপন করতে পারলেও নিজেদের স্ত্রী, ছেলে,মেয়ে নাতি, নাতনী, মেয়ে-
জামাইদের জন্যও কিছুই করতে পারছেন না বলে তারা যেমন আর্থিক ভাবে হেনস্থার শিকার
হচ্ছেন, তেমনি সামজিক ভাবেও বিপর্যস্ত ও লজ্জিত হচ্ছেন বলেও ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
বকেয়া বেতন-ভাতা পরিশোধসহ চিনিকলটিকে লাভজনক পর্যায়ে নিতে আসতে নানা
পরামর্শ দিয়েছেন চিনিকলটির শ্রমিক- কর্মচারীরা। পাশাপাশি ঈদকে সামনে রেখে
বকেয়া বেতন-ভাতার দাবী করেন তারা। এ অবস্থায় কল-কারখানার প্রান শ্রমিকদের এ পাওনা
পরিশোধ করতে সরকারের হস্তক্ষেপও কামনা করেন জয়পুরহাট চিনিকল শ্রমিক ইউনিয়ন
নেতৃবৃন্দ।
জয়পুরহাট চিনিকল শ্রমিক ইউনিয়ন সাধারন সম্পাদক আহসান হাবিব রুমেল
বলেন, ‘ প্রায় ১ হাজার শ্রমিক-কর্মচারী ছাড়াও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জীবিকার
নিরবিচ্ছিন্ন রাখতে সরকারকে বিকল্প ব্যবস্থা গ্রহন করতে হবে । যেমন, আখ চাষে সহজ
শর্তে ঋনদান, প্রয়োজনে চাষীদের প্রনোদনা প্রদান, উচ্চ ফলনশীল আখ উৎপাদন, চিনিকল
জোনে হাজার হাজার একর জমি বাধ্যতা মূলক আখ চাষের শর্তে ব্যাক্তিগত পর্যায়ে ইজারার
ব্যবস্থা করা, বিদেশী চিনি আমদানী বন্ধ করা, আখচাষীদের যথা সময়ে আখের ন্যায্য মূল্য
পরিশোধসহ যুগোপযোগী ব্যবস্থা গ্রহন করলে চিনিকলটি আবারো আলোর মুখ দেখবে।
আর তা হলে বেতন-ভাতার অভাবে শ্রমিকদের এই বেহাল দশা আর কখনোই দেখতে হবে না।
জয়পুরহাট চিনিকলের ব্যাবস্থাপনা পরিচালক কৃষিবিদ মোঃ আখলাছুর রহমান বাস্তবতা
স্বীকার করে বলেন, ইতোমধ্যে উৎসব ভাতা প্রদানের ব্যবস্থা হতে পারে। তবে বকেয়া বেতন
পরিশোধের জন্য উর্দ্ধতন কতর্ৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *