রাজিবপুর (কুড়িগ্রাম) প্রতিনিধিঃ
জাল দলিল করে দোকানঘর জবর দখলের অভিযোগ উঠেছে আব্দুর রাজ্জাক নামের এক প্রতারকের বিরুদ্ধে। প্রায় ৮ বছর আগে নয়াচর পুরাতন বাজারে নিজের জমিতে চার কক্ষ বিশিষ্ট টিন সেট ঘর তৈরি করে খালেক ব্যাপারী। খালেক ব্যাপারী কুড়িগ্রাম জেলার মোহনগঞ্জ ইউনিয়নের ভোটাং পাড়া গ্রামের বাসিন্দা। বয়সের ভারে ব্যবসা না করে তিনি ঘরগুলো ভাড়া দিয়েছেন চার জনকে। একই গ্রামের বাসিন্দা শেখ জসমত আলীর ছেলে আব্দুর রাজ্জাক সু-কৌশলে সকলের অজান্তে মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে এবং ক্ষমতার দাপটে গত তিন মাস আগে জাল দলিল করে নিজের নামে লিখে নিয়েছেন চার কক্ষের ওই পুরো ঘরটি। এখন ওই ব্যবসা প্রতিষ্ঠাটি দখল নেয়ার জন্য উঠেপড়ে লেগেছেন সহজ-সরল খালেক ব্যাপারীর পিছনে। ঘর ভাড়াটিয়াদের নিকট ঘরের ভাড়াও দাবী করেছেন তিনি। অন্যান্য ভাড়াটিয়া রাজ্জাককে ভাড়া না দেয়ায় খালেক ব্যাপারীর বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করছে ভূক্তভোগী খালেকসহ তার পরিবারের সদস্যদের। বিষয়টি নিয়ে চরম আতঙ্কে দিন পার করছেন তিনি, এমনটাই অভিযোগ করেছেন ভূক্তভোগী খালেক ব্যাপারী।
প্রতারক রাজ্জাক থানায় অভিযোগের পর তদন্তে আসে ঢুষমারা থানা পুলিশ। তখন বাজারের অন্যান্য দোকানদারসহ উৎসুক জনতা রাজ্জাকের জালিয়াতির বিচার চেয়ে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করে এবং রাজ্জাকের সাথে হাতা-হাতির ঘটণা ঘটায়। উৎসুক জনতাই পুলিশের নিকট বিষটি খুলে বলে, রাজ্জাক প্রতারণা করে ঘর লিখে নিয়েছে। পরে পুলিশের তৎপরতায় পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়।
২৩ জুন বুধবার সরেজমিনে দেখা গেছে, ঘরের প্রথম কক্ষ ভাড়া নিয়েছেন পল্লী চিকিৎসক আদিল চন্দ্র রায়, ২য় কক্ষ ভাড়া নিয়েছেন পল্লী চিকিৎসক রাশেল, ৩য় কক্ষ সিরাজুল ইসলাম এবং ৪র্থ কক্ষ ভাড়া নিয়েছেন ফরহাদ ব্যাপারী। তারা চার জনসহ আশ-পাশের দোকানদার এবং বাজার এলাকার অনেকের নিকট জানা গেছে ওই ঘরের প্রকৃত মালিক খালেক ব্যাপারী। তারা সাংবাদিককে জানান, “আমরা খালেক ব্যাপারীর ঘর ভাড়া নিয়েছি। কিন্ত কয়েকদিন যাবৎ রাজ্জাক এসে ঘর ভাড়া চাওয়ার পর জানতে পারি যে, রাজ্জাক জালিয়াতি করে ঘর লিখে নিছে।”
এ বিষয়ে অত্র এলাকার ইউনিয়ন আ’লীগ সভাপতি আব্দুস সালাম তালুকদার, সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল বারী সরকার জানান, “রাজ্জাক একজন প্রতারক, সে বিভিন্ন সময়ে নানা ধরনের প্রতারণা করে থাকে। সে এর আগেও জমি দখল, ডাকাতিসহ বিভিন্ন অপরাধ করে মামলার আসামী হয়েছিল।”
ওই এলাকার ৯নং ওয়ার্ডের বর্তমান ইউপি সদস্য আব্দুল মান্নান জানান, “এই বাজারে একজন জালিয়াতি লোক আঃ রাজ্জাক। যে ঘর নিয়ে সমস্যা ওই ঘরের মালিক খালেক ব্যাপারী। রাজ্জাক জালিয়াতি করে ঘর লিখে নিছে। খালেক ব্যাপারীর নামে মামলাও করছে। এজন্য প্রতারক রাজ্জাকের বিচার হওয়া উচিৎ।” এব্যাপারে বাজার বণিক সমিতির সভাপতি নজরুল ইসলাম জানান, “হাট হওয়ার শুরু থেকেই আমি জানি ওই ঘর খালেক ব্যাপারীর। আমার জানামতে ওই ঘর বিক্রি বা ৩০ বছরের লিজ হয় নাই।”
আব্দুর রাজ্জাক এ বিষয়ে বলেন, “তিন শতক জমিসহ ৩৪ হাত দোকান ঘর আমাকে ৫ লক্ষ টাকায় ৩০ বছরের জন্য লিখে দিয়েছে। আমার কাছে স্বাক্ষী প্রমাণ আছে।”
তবে জাল দলিল বিষয়ে দলিল লেখক এবং স্বাক্ষী নয়াচর নতুন বাজারের স্যার ব্যবসায়ী নুরুন্নবীর নিকট জানতে চাইলে বিষয়টি অস্বীকার করে দু’জনেই।
এ সম্পর্কে ঢুষমারা থানার ওসি ইফতেখারুল মোকাদ্দেম জানান, “বিষয়টির তদন্ত চলমান। সঠিক তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেয়া হবে। তবে বাজারের মধ্যে আইন হাতে তুলে নেওয়া ঠিক হয়নি।