লালমনিরহাট প্রতিনিধি ॥ জেলার ৫টি উপজেলার হাজার হাজার কৃষক পরিবার এনজিও’র ঋণ এর জালে জড়িয়ে কঠিন সংকটের সম্মুখিন হয়েছে। এনজিও’র কিস্তির চাপে সাধারন মানুষ দিসেহারা হয়ে পড়েছে। কিস্তির টাকা পরিশোধ করতে গিয়ে অনেকে সর্বস্ব হারিয়েছেন। শিল্প কারখানা বিহীন জেলার অধিকাংশ লোকজন জীবিকার অন্বেষায় রিকশা, ভ্যান, বিড়ির কারখানাসহ বিভিন্ন পেশার শ্রমিক ও কৃষির উপর নির্ভরশীল। এ জেলার প্রায় ৮০/৯০ ভাগ মানুষ কৃষি কাজের উপর নিয়োজিত থাকায় তাদের প্রয়োজনের তাগিদে বিভিন্ন এনজিও’র নিকট থেকে ঋণ গ্রহন করেন। এই ঋণের টাকা প্রতি সপ্তাহে কিস্তি হিসেবে দিতে হয়। এনজিওরা ঋণ দেয়ার পূর্বে জামানত নিয়ে থাকেন। ১শ জনের নিকট থেকে ১লাখ টাকা জামানত নিয়ে ১০জনকে এই টাকার ঋণ দেয়া হয়। এছাড়াও ঋণ দেয়ার সময় প্রতি হাজারে ১০টাকা অফেরতযোগ্য হিসেবে নেয়া হয়। অর্থাৎ তারা কই এর তেল দিয়ে কই ভাজেন। কোন ব্যক্তি যদি কিস্তির টাকা এক সপ্তাহে দিতে না পারেন তাহলে তাকে নাজেহাল সহ বিভিন্নভাবে নির্যাতনের শিকার হতে হয়। কিস্তির টাকা পরিশোধ করতে পরিবারের লোকজনকে না খেয়ে দিন কাটাতে হয়। রাত গভীর হলেও কিস্তির টাকা না দিয়ে কেউ ঘুমাতে পারবেন না।আবার অনেক নিরীহ ব্যক্তিকে সামান্য টাকার জন্য মামলা দিয়ে হয়রানী করে এনজিওরা। এমন অভিযোগ প্রায়ই সাংবাদিকদের কাছে আসলেও কেউ প্রতিবাদ করার সাহস পায়না বলে জানা গেছে। কারন প্রতিটি এনজিও’র মালিক কোন না কোন রাজনীতির সাথে জড়িতসহ তারা প্রভাবশালীও বটে। তবে বেশি হয়রানী করছে ব্রাক ও নজীরসহ কয়েকটি এনজিও।এইসব এনজিও সাধারন মানুষের সাথে অমানবিক আচরনসহ নিষ্টুর ব্যবহার করছে বলে একাধিক অভিযোগ রয়েছে।অভিযোগ রয়েছে, কৃষির সাথে যারা জড়িত রয়েছে তারা এনজিও’র বেড়াজালে জড়িয়ে পড়ায় কৃষি ক্ষেত্রে আজ অবধি বহুবিধ সমস্যা দেখা দিয়েছে। এনজিওর ঋণের প্রভাবে মহাজনী ঋণ ব্যবস্থা জমজমাট হয়ে উঠেছে। অপর দিকে বিভিন্ন সরকারি ব্যাংকের মাধ্যমে কৃষি ঋণ বিতরনের ব্যাপক প্রচার প্রচারনা থাকলেও কৃষকদের একটি বড় অংশ এই ঋণ সুবিধা থেকে একেবারেই বঞ্চিত রয়েছেন বলে মহেন্দ্রনগরের সৈয়দ আলী নামের এক বৃদ্ধ এ প্রতিবেদককে জানান।তিনি বলেন, কৃষি ব্যাংক হারাটি বন্দর শাখার ম্যানেজার রুহুল আমিনকে প্রতি হাজারে তার চাহিদা মত ঘুষ দিতে না পারলে তার ভাগ্যে কৃষি ঋণ জুটবেনা। কৃষকগন ব্যাংক থেকে ঋণ না পেয়ে মহাজনদের নিকট থেকে প্রতি হাজারে ২০টাকা মাসে সুদ দিয়ে ঋণ নিতে বাধ্য হচ্ছে। আবার অনেকে এনজিওদের কাছ থেকে ঋণ নিয়ে কিস্তির টাকা দিতে হিমশিম খাচ্ছে। এনজিওরা সহজ শর্তে ঋণ দেয়ার আশ্বাস দিলেও প্রতি সপ্তাহের কিস্তির টাকার জন্য কৃষকদের রক্ত মাংস চুষে খাচ্ছে তারা।ব্যাংক ঋণ সুদের চেয়েও এনজিওদের সুদের হার চার গুন বেশি। দারিদ্র দুরীকরনের নামে গ্রামে গঞ্জে এনজিওরা স্ব স্ব সমিতি গড়ে তুললেও এর ফলাফল শুন্য। তারা এনজিও’র ঋণ দেয়ার নামে কই এর তেল দিয়ে কই ভাচ্ছে। গ্রামের সাধারন মানুষ এনজিও’র ঋণ নিয়ে সর্বশান্ত হলেও লাভবান হচ্ছে তারা। এনজিওদের কার্যক্রম মনিটরিং করার জন্য সরকারের বিভিন্ন সংস্থা থাকলেও তারা মাঠ পর্যায়ে না গিয়ে মাসিক সভার মাধ্যমেই সীমাবদ্ধ রয়েছেন। এ ব্যাপারে নজীরের নির্বাহী পরিচালক নুরুল হক বলেন, আমাদের কাজ আমরা চালিয়ে যাবো কোনো সাংবাদিককে আমরা তোয়াক্কা করি না। (চলবে)

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *