ফারহানা আক্তার, জয়পুরহাট প্রতিনিধিঃ

জয়পুরহাটে দোগাছী ইউনিয়নের অর্ন্তগত জয়পুরহাট হতে মঙ্গলবাড়ীগামী পাকা রাস্তায় দোগাছী গুচ্ছগ্রাম মোড় হতে অনুমান ১০০ গজ পূর্ব দিকে পাকা রাস্তা সংলগ্ন জঙ্গলের মধ্যে থেকে এক অজ্ঞাতনামা যুবকের মরদেহসহ হত্যা কাজে একটি চাকু উদ্ধার করে জয়পুরহাট থানা পুলিশ। পরবর্তীতে অজ্ঞাতনামা যুবকের পরিচয় সনাক্ত ও নিশ্চিত করা হয়। এই সংক্রান্তে জয়পুরহাট থানায় মামলা নং-৫৮ তারিখ- ধারা- পেনাল কোড রুজু করা হয়।

পুলিশ সুপার জয়পুরহাট জনাব মাছুম আহাম্মদ ভূঞা,পিপিএম-সেবা মহোদয়ের দিক নির্দেশনায় জনাব মোঃ তরিকুল ইসলাম, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার প্রশাসন ও অপরাধ, এর নেতৃত্বে জনাব মোঃ শাহেদ আল মামুন, ওসি ডিবি এবং ডিবির পৃথক দুটি আভিযানিক চৌকশ টিম অপরাধীদের সনাক্তের জন্য ব্যাপক তৎপরতা শুরু করে। জয়পুরহাট থানায় মামলা রুজু হওয়ার ৪৮ ঘন্টার মধ্যে নিবিড় তদন্ত ও তথ্য প্রযুক্তি বিশ্লেষণ করে মামলার গুরুত্বপূর্ণ তথ্য উদঘাটন করা হয়। উদঘাটিত তথ্যের ভিত্তিতে ভিকটিম শফিকুল ইসলাম-এর ব্যবহ্নত ছিনতাইকৃত সবুজ রংয়ের ইজিবাইক এবং একটি আইটেল মোবাইল ফোন উদ্ধার পূর্বক আসামী- রশিদুল (৩২) পিতা শহিদুল ইসলাম, রুবেল হোসেন (৩৫) পিতা- বাবলু মন্ডল, উভয় সাং-তিলাবদুল পূর্বপাড়া, থানা-ক্ষেতলাল,জেলা-জয়পুরহাটদ্বয়কে গ্রেফতার করা হয়।

গ্রেফতারকৃতদের নিবিড়ভাবে জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, ঘটনার দিন ২৪-১০-২০২১ তারিখ ক্ষেতলাল থানা এলাকার বটতলী বাজারে বিকাল ঘটিকায় আসামীরা একত্রিত হয়ে ইজিবাইক ছিনতাই করার পরিকল্পনা করে। তাদের পরিকল্পনামতে জয়পুরহাট থানাধীন পৃথিবী কমপ্লেক্স এর সামনে বিকাল ৫. ঘটিকায় ইজিবাইক স্ট্যােন্ড অবস্থান করে। এদের মধ্যে একজন আসামী পাঁচুরমোড়ে একটি দোকান থেকে হত্যার কাজে ব্যবহৃত চাকু ৩০/- টাকা দিয়ে ক্রয় করে। পরে আসামীরা ভিকটিম শফিকুলের ইজিবাইক মঙ্গলবাড়ী যাওয়ার উদ্দেশ্যে ২০০/- টাকায় ভাড়া করে রওনা করে মঙ্গলবাড়ী যায়। পরিকল্পনা মতে আসামীরা রাত্রী হওয়ার জন্য কালক্ষেপন করার উদ্দেশ্যে ধামুইরহাট আলতাদীঘি এলাকায় কিছুক্ষণ ঘোরাফেরা করে। এরপর তারা আলতাদীঘি থেকে জয়পুরহাট এর উদ্দেশ্যে রওনা হয়। জয়পুরহাট আসার পথে জয়পুরহাট থানার দোগাছী ইউনিয়নের অর্ন্তগত মঙ্গলবাড়ী হতে জয়পুরহাটগামী পাকা রাস্তায় দোগাছী গুচ্ছগ্রাম মোড় হতে অনুমান ১০০ গজ পূর্ব দিকে রাত্রী অনুমান ০৯.০০ ঘটিকায় নির্জন এলাকা দেখে পূর্ব পরিকল্পনা মতে ইজিবাইকের পিছনে বসে থাকা আসামী মোঃ রশিদুল ইসলাম এবং অপর একজন আসামী ভিকটিমকে রশি দ্বারা পিছন দিক হতে গলায় ফাঁস দিয়ে ধরলে সাথে থাকা গ্রেফতারকৃত আসামী মোঃ রশিদুল ইসলাম ধারালো চাকু দিয়ে ভিকটিমকে গলায় ফ্যাঁস দিয়ে জবাই করে এবং ইজিবাইকের সামনে বসা অপর গ্রেফতারকৃত আসামী মোঃ রুবেল হোসেন ভিকটিমকে ঝাপটে ধরে মৃত্যু নিশ্চিত করে। ভিকটিম এর মৃত্যু নিশ্চিত হলে গ্রেফতারকৃত আসামী মোঃ রুবেল হোসেন এবং অপর আসামী ভিকটিমকে ধরে লোক চক্ষুর আড়ালে রাস্তার পাশে জঙ্গলে ফেলে দেয়। অতঃপর আসামী মোঃ রশিদুল ইজিবাইকটি নিজে চালিয়ে (অপর দুইজন আসামী ইজিবাইকের পিছন সিটে বসে ছিল) খঞ্জনপুর-তেঘর রেলগেট-পাকার মাথা হয়ে ধারকী রাস্তায় গিয়ে ইজিবাইকে এবং আসামীদের শরীরে লেগে থাকা রক্ত পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলে ক্ষেতলাল থানাধীন বটতলী বাজারের জনৈক মোঃ মতিয়ার রহমান-এর গ্যারেজে ইজিবাইকটি রেখে চলে যায়। ঘটনার পরের দিন ইং ২৫/১০/২০২১ তারিখ বিকাল ০৪.০০ টার দিকে ইজিবাইকে ব্যবহৃত ০৫টি ব্যাটারী আসামী মোঃ রশিদুল এবং অপর পলাতক আসামীসহ ক্ষেতলাল থানাধীন বটতলী বাজারস্থ মোঃ জহুরুল ইসলামের ইজিবাইকের ব্যাটারীর দোকানে ২৩,০০০/-টাকায় বিক্রি করে প্রাপ্ত টাকার মধ্যে আসামী মোঃ রশিদুল ৫,০০০/-টাকা, আসামী মোঃ রুবেল হোসেন ৩,৫০০/-টাকা, অপর আসামী অবশিষ্ট ১৪,৫০০/-টাকা ভাগাভাগি করে নেয়।

গ্রেফতারকৃতদের অপরাধ রেকর্ড পর্যালোচনায় জানা যায়, তারা জয়পুরহাট জেলার পাঁচবিবি ও ক্ষেতলাল, দিনাজপুর জেলার ঘোড়াঘাট ও হাকিমপুর এবং গাইবান্ধা জেলার পলাশবাড়ি ও গোবিন্দগঞ্জ এলাকায় সংঘবদ্ধ চুরি/ছিনতাই/ডাকাতি চক্রের সক্রীয় সদস্য। আসামী মোঃ রশিদুল ইসলাম পেশায় একজন ট্রাক ড্রাইভার হিসেবে পরিচয় দেয়। সে ক্ষেতলাল থানার মামলা নং-০২, তারিখ-০৭/১১/২০১৫ইং, ধারা-৩০২/৩৪ পেনাল কোড এর এজাহারে অভিযুক্ত। অপর আসামী মোঃ রুবেল হোসেন ট্রাকের হেলপার হিসেবে পরিচয় দেয়। সে ১। যাত্রাবাড়ী থানার মামলা নং-৩৮, তারিখ-০৯/৫/২০২১ইং, ধারা-২০১৮ সালের মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রন আইন এর ৩৬ সারণির ১৬গ/৩৮, ক্ষেতলাল থানার মামলা নং-০৪, তারিখ-০৭/৪/২০১৯ইং, ধারা-২০১৮ সালের মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রন আইন এর ৩৬১ সারণির ১৯ ক এর এজাহারে অভিযুক্ত। তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে এবং চক্রের অন্যান্য সদস্যদের সনাক্ত ও গ্রেফতারের প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *