মোঃ লৎফর রহমান মন্ডল (মাষ্টার)

ফারহান আক্তার জয়পুরহাট প্রতিনিধিঃ

আপনাদের কাছে আরও একজন মানুষ কে তুলে ধরতে চাই,যিনি ছিলেন ৯০-এর দশকের এক অনন্য মানুষ! রহস্যময় নামঃ-“পাজামার এক ঠ্যাং” যিনাকে ৮নং আওলাই ইউনিয়নের অনেকেই চিনেন এবং জানেন! কিন্তু তাঁর ব্যক্তি জীবনের অনেক অজানা কথা লুকিয়ে আছে যা, আজকে আপনাদের কাছে তুলে ধরলাম।

জন্মঃ-জয়পুরহাট জেলার পাঁচবিবি উপজেলার আওলাই ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ডের কাঁকড়া (পিংলু) গ্রামে তিনি- ৩০শে জুন ১৯৫৩ ইং সালে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ছোট বেলায় বাবাকে হারিয়ে পিতৃস্নেহ থেকে বঞ্চিত হন! তার পর সংসারে এক মাত্র “মা” ছাড়া আপন বলতে আর কেউ ছিলেন না ! সেই সময় সংসারে অনেক অভাব অন্টনের মধ্যে দিয়ে দিন পার হতো!

শিক্ষা জীবনঃ-তিনার বয়স যখন ৫ বছর তখন তাঁর “মা” গ্রামের প্রাইমারি স্কুলে ভর্তি করে দেন তিনি প্রথম শ্রেণী থেকে পঞ্চম শ্রেণী পর্যন্ত🔢প্রথম স্থান অর্জন করেন। তিনার বাবার পৈতৃক সম্পত্তির কোন অংশ না পাওয়ার কারণে,পরিবারে অনেক অভাব-অন্টনের মধ্যে দিনাতিপাত করে থাকেন। তাই অর্থের অভাবে তার পড়াশুনা বন্ধ হয়ে যায়। তখন তিনি পড়াশুনা বাদ দিয়ে রাখালের দায়িত্ব নিলেন এবং মাঠে গরু চড়াতে লাগলেন। এবং তাঁর “মা” ঝিয়ের কাজ করতে লাগলেন! এভাবে কিছু দিন চলার পর,হঠাৎ একদিন নতুন মানুষের আগমন ঘটে,তার নিজ বাড়িতে।

তিনি একজন প্রাইমারি স্কুলের প্রধান শিক্ষক (বাসা বগুড়া জেলার সোনাতলা থানায়) প্রধান শিক্ষক তাঁর প্রতিভা দেখে মুগ্ধ হন। তখন তাঁর মাকে পরামর্শ দিলেন। যে,আপনার ছেলের অনেক মেধা আছে, সে ভবিষ্যতে কিছু করতে পারবে। এভাবে বাড়িতে বসে না রেখে,আপনি তাকে স্কুলে ভর্তি করে দেন। তিনার “মা” তখন বললেন যে, পড়াশুনা করতে নাকি অনেক টাকা খরচ হয়? আমি এতো গুলো টাকা কই পাবো? প্রধান শিক্ষক বললেন-না! না! বেশি টাকা লাগবে না।
হাইস্কুল লেভেলে যত্সামান্য হলেই চলবে। আর আমি তো আছি,টাকা নিয়ে আপনি কোন টেনশন করবেন না। এই বলে মাস্টার মশাই নিয়ে গেলেন নিকড়দিঘী হাইস্কুলে।
সেখানে তিনাকে ভর্তি করে দেন ৬ষ্ঠ শ্রেণীতে।
তাঁর ভর্তি রোল নম্বর ছিল-৮৪। তিনি ৬ষ্ঠ থেকে ১০ম শ্রেণী পর্যন্ত ফাস্ট হয়েছেন। সেখান থেকে তিনি ১৯৬৯ সালে ফাস্ট ডিভিশন নিয়ে ম্যাট্রিক পাশ করেন।
তার পর তিনি বগুড়া আজিজুল হক কলেজে আই,এস,সি তে ভর্তি হন। ১৯৭২ সালে তিনি আই এস সি পাশ করেন। পরবর্তীতে তিনি জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডিগ্রি পাশ করেন। তিনি ১৯৮২ সালে রাজশাহী টিটি কলেজ থেকে বি,এড করেন। এবং ২০০৭ সালে দারুল ইহসান বিশ্ববিদ্যালয় (জয়পুরহাট শাখা) থেকে এম,এড করেন। তিনি তাঁর জীবনের বেশিরভাগ অংশ পড়াশুনাতে ব্যয় করেছেন।

কর্ম জীবনঃ-তিনি ১৯৮২ সালে পিয়াড়া ছাতিনালী দ্বিমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক পদে যোগদান করেন। সেই থেকে তাঁর সুদিন ফিরিয়ে আসে,কিছু দিন চাকরি করার পর তার সংসারে সচ্ছলতা ফিরে আসে,তখন তিনাকে আর কারো মুখাপেক্ষি হতে হয় না। পরবর্তীতে তিনি ২০০১ সালে নিকড়দিঘী দ্বি-মুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক পদে যোগদান করেন। এবং তিনি সেখানে দক্ষতার সহিত শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করেন। তিনি সেই প্রতিষ্ঠানের অনেক উন্নয়ন মূলক কাজ করেছেন। তিনি শিক্ষার্থীদের জন্য বিনামূল্যে স্কুল ড্রেস দিয়েছেন এবং দূরের ছাত্রদের জন্য বাই সাইকেল ক্রয় করে দিয়েছেন। এবং ছাত্র/ছাত্রীদের জন্য টয়লেট বাথরুমের ব্যবস্থা করে দিয়েছেন,প্রতিটি ক্লাস রুমে ফ্যানের ব্যবস্থা করে দিয়েছেন। তিনি আরও এক মহত্ত্বের কাজ করেছেন,যা এ পর্যন্ত অন্য কেউ করতে পারেননি!তিনি নতুন ৮ জন সহকারী শিক্ষক নিয়োগ দিয়েছেন একদম বিনা পয়সায়! এবং তিনি ২০১৩ সালে নিকড়দিঘী দ্বি-মুখী উচ্চ বিদ্যালয় থেকে অবসর নেন।

লেখকঃ-তিনি লেখক ও বটে,তাঁর জীবনের অতীত, বর্তমান এবং ভবিষ্যৎ এই তিন কাল নিয়ে তাঁর জীবনের একটি গল্পের বই লিখেছেন। গল্পের নাম হচ্ছে-“পাজামার এক ঠ্যাং”এই বইটি তে অনেক রহস্যমূলক কাহিনী রয়েছে।

বৈবাহিক জীবনঃ-তিনি ১৯৮৫ সালে নিজ গ্রামে আত্মিয়র মধ্যে মামা-তো বোন কে বিয়ে করেন। এবং তিনার ২ ছেলে ও তিন মেয়ে।

ধর্মীয় আইনঃ-ইসলামের ৪ নম্বর স্তম্ভ হচ্ছে “হজ্ব” তিনার উপর এই “হজ্ব” ফরজ ছিল। তাই তিনি ২০১৫ সালে হজ্জব্রত পালন করেন।

বয়সঃ-বর্তমান তিনার বয়স চলিতেছে-৬৫ বছর। তিনি শারীরিক ও মানসিক দুই দিকেই সুস্থ রয়েছেন।

️রাজনৈতিক জীবনঃ-তিনি রাজনৈতিক ভাবে কোন দলের সঙ্গে জড়িত ছিলেন না।তিনি সব সময় নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন করে আসছেন। এক কথায়,বলা চলে তিনি একজন প্রখ্যাত রাজনীতিবিদ!
একটু জেনে নিন,তিনি রাজনীতিতে এসে কি করেছেন?

তিনি হলেন সেই ব্যক্তিঃ-
এই ইউনিয়নের ছোট বড় সকলেই তিনাকে এক নামে চিনেন।

তিনি হলেন সেই ব্যক্তিঃ-
ছদ্মনাম-যা আজও কেউ জানেন,না! “পাজামার এক ঠ্যাং” নামঃ-আলহাজ্ব মোঃ লুৎফর রহমান মন্ডল(সাবেক চেয়ারম্যান১৯৯২-২০১১পর্যন্ত)।

তিনি হলেন সেই ব্যক্তিঃ- যিনি-১৯৯২ সালে ৮নং আওলাই ইউনিয়ন পরিষদ এর চেয়ারম্যান পদ প্রার্থী হয়ে নির্বাচন করেন এবং তৎকালীন সময়ে তিনি বিপুল ভোটে বিজয়ী লাভ করেন। এবং সেই থেকে একটানা ১৯বছর ধরে এই ইউনিয়নের চেয়ারম্যান এর দায়িত্ব পালন করে আসছেন।

তিনি হলেন সেই ব্যক্তিঃ-
যিনি “চাকা” মার্কা প্রতীক নিয়ে তিন, তিনবার নির্বাচন করেন,এবং বিজয়ী ও লাভ করেন। কিন্তু বিরোধী দলের নেতারা এই প্রতীক নেওয়ার জন্য অনেক চেষ্টা চালিয়েছিলেন,পরে তাঁরা ব্যর্থ হয়ে যান! শেষে এই “চাকা” মার্কা প্রতীক নেওয়ার জন্য লটারী করা হয়। পরবর্তীতে পছন্দের “চাকা” প্রতীক তিনি পেয়ে যান। ইনি হলেন সেই ভাগ্যবান ব্যক্তি।

তিনি হলেন সেই ব্যক্তিঃ-
যিনি একটানা ১৯ বছর ধরে (১৯৯২-২০১১)সাল পর্যন্ত,এই ইউনিয়নের জনগণের জান ও মালের হেফাজতের দায়িত্ব পালন করে আসছেন,কিন্তু একটি বারের তরেও তিনার কোন মাথা ধরেনি!

তিনি হলেন সেই ব্যক্তিঃ-যিনি ক্ষমতায় থাকা অবস্থায় রাতের অন্ধকারে জনগণ স্বাধীন ভাবে চলাফেরা করেছেন,সেই সময় চোর-ডাকাতের কোন ভয় ছিল না।

তিনি হলেন সেই ব্যক্তিঃ-
শিক্ষার উন্নয়নের জন্য এই ইউনিয়নে তিনি ৬টি হাইস্কুল এবং ৪টি প্রাইমারি স্কুল স্থাপিত করেন। এবং সেই সঙ্গে পুরাতন স্কুল মাদ্রাসা ও কলেজে ভবন নির্মাণ করেন।

তিনি হলেন সেই ব্যক্তিঃ-
যিনি চিকিৎসা সেবার জন্য এই ইউনিয়নে ৪টি কমিউনিটি ক্লিনিক নির্মাণ করেন এবং সেই সঙ্গে ছাতিনালী স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে হাসপাতালটি সংস্কার করেন।

তিনি হলেন সেই ব্যক্তিঃ-
এই ইউনিয়নের বড় বড় ব্রীজ ও কালভার্ট নির্মাণ করেন এবং সেই সঙ্গে পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করেন।

তিনি হলেন সেই ব্যক্তিঃ-
এই ইউনিয়নের লোকাল রাস্তা গুলোতে এনজিওর মাধ্যমে রাস্তার দুই পার্শে গাছ লাগানোর ব্যবস্থা করেন।

তিনি হলেন সেই ব্যক্তিঃ-
এই ইউনিয়নের বড় দুটি হাট শিরট্রি ও ছাতিনালী,এই হাটগুলিতে দোকান বসানোর জন্য টিন শেড এর ছাউনি নির্মাণ করেন এবং সেই সঙ্গে রাস্তা গুলোতে ইট বসিয়ে দেন।

ইনি হলেন সেই ব্যক্তিঃ-
যিনি এই ইউনিয়নে তিন ট্রাম নির্বাচন করেছেন কিন্তু কেউ তিনাকে পরাজিত করতে পারেননি। তিনি, তিনবারই বিপুল ভোটে বিজয়ী লাভ করেন।

ইনি হলেন সেই ব্যক্তিঃ-
তাঁর ব্যক্তি জীবনে কখনো পরাজয় স্পর্শ করে নি! প্রত্যেক কাজে তিনি সফলতা অর্জন করেছেন।

ইনি হলেন সেই ব্যক্তিঃ-
যিনি নিজের অর্থ দিয়ে ছাতিনালী বাজারে ৫০ শতাংশ একটা জায়গা কিনেন,এবং সেই জায়গাতে সরকারি বরাদ্দকৃত অর্থ দিয়ে আওলাই ইউনিয়ন পরিষদে দ্বি-তল বিশিষ্ট একটি ভবন নির্মাণ করেন।

সারমর্মঃ-পরিশেষে আমি বলতে চাই,অতীতে অনেক রাজনীতি বিদ রাজনীতি করেছেন এবং সেই সঙ্গে নির্বাচন ও করেছেন কিন্তু এই রকম কোন নজির নেই যে,পরাজিত না হয়ে,সহজে কেউ এই নরম চেয়ারটি ছেড়ে দিয়েছেন? কারণ,এই নরম চেয়ারটি সহজে কেউ ছাড়তে চান না! এই চিয়ারটি হচ্ছে লোভনীয়! তাই আমি বলবো,সহজে কেউ এই চেয়ার ছেড়ে দিতে চায় না। একবার যে এই চেয়ার এ বসেছেন আজীবন তাঁরা ধরে রাখতে চায়। কিন্তু দুঃখের বিষয় হলো-পরাজিত হয়ে তাদের কে ছেড়ে দিতে হয়! আর ইনিই হচ্ছেন সেই ব্যক্তি, যিনি সেচ্ছায় চেয়ার ছেড়ে দিয়েছেন। তিনি এই নরম চেয়ার ছেড়ে দিয়ে মহান ব্যক্তির পরিচয় দিয়েছেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *