ফারহানা আক্তার, জয়পুরহাটঃ
মাদ্রাসা প্রাঙ্গনে খেলতে গিয়ে জয়পুরহাটে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে এক শিশুর মর্মান্তিক মৃত্যু হয়েছে।

মাদ্রাসার সুপার জোবায়দুল হক এর উদাসীনতার কারণে শিশুটির মৃত্যু হয়েছে বলে এলাবাসি ও পরিবারের অভিযোগ।

ঘটনাটি ঘটেছে জয়পুরহাট সদর উপজেলার ধলাহার ইউনিয়নের ধলাহার সিদ্দিকীয়া দ্বি-মূখী দাখিল মাদ্রাসাতে।

নিহত শিশু ধলাহার গ্রামের আখতারুজ্জামান বাচ্চুর ৫ম শ্রেণী পড়ুয়া ছেলে আহাদ বাবু (১১)।

শিশুটির মৃত্যুতে এলাকায় শোকের মাতম বিরাজ করছে। এলাকার অন্যান্য শিশুর অভিভাবকরাও এখন তাদের শিশুদের নিয়ে আতঙ্কিত।

ছেলের মৃত্যুতে বাবা-মা একবারেই ভেঙে পরেছেন। তাদের আহাজারিতে আশেপাশের গ্রাম থেকেও মানুষ ভির করছে তাদের দেখতে। স্থানীয়রা শিশুটি ও তার পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছেন।

পরিবার ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, উক্ত মাদ্রাসার বিদ্যুৎ সংযোগের লাইন ফল্ট হয়ে পুরো টিনের ছাউনি পূর্বে থেকেই বিদ্যুৎতাপন্ন হয়ে ছিল। সেখানে গত ৮ সেপ্টেম্বর বুধবার দুপুর সারে ১২ টার দিকে অবুঝ শিশু আহাদ বাবু খেলা ধুলা করার এক পর্যায়ে মাদ্রাসার টিনের ছাউনির উপর উঠলে সেখানে বিদ্যুৎপৃষ্ট হয়ে গুরুতর আহত হলে স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে জয়পুরহাট আধুনিক জেলা হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক শিশু আহাদ বাবুকে পরিক্ষা নিরিক্ষা করে মৃত ঘোষণা করেন।

ধলাহার সিদ্দিকীয়া দ্বি-মূখী দাখিল মাদ্রাসাতে সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, প্রায় ৪০০ মিটার দূর থেকে অরক্ষিতভাবে মেইন তার টেনে সেচ পাম্পের বানিজ্যিক বৈদ্যতিক সংযোগ নিয়ে কোন প্রকার ওয়্যারিং ছাড়াই নিজের মনগড়াভাবে তার টেনে অত্র মাদ্রাসায় ঝুঁকিপূর্ণভাবে বিদ্যুৎ ব্যবহার করা হচ্ছে।
ফলে সময় অসময়ে মাদ্রাসার বিভিন্ন শ্রেণী কক্ষের বৈদ্যুতিক ফ্যানের সুইচ বন্ধ থাকলেও শক সার্কিট হয়ে ঘুরতে থাকতো এবং মাদ্রাসার টিনের ছাউনিসহ দরজা-জানালার বিভিন্ন অংশ বিদ্যুৎতাপন্ন হয়ে থাকতো।

মাদ্রাসাটির কয়েকটি শ্রেণী কক্ষ ঘুরে দেখা গেছে, বৈদ্যুতিক লাইনের তারাগুলো জরাজীর্ণ অবস্থা ও তারের বিভিন্ন জায়গায় ফল্ট রয়েছে এবং বিভিন্ন জায়গায় তারের ফল্টগুলোতে টেপ ব্যবহার নাকরে পেপারের কাগজ দিয়ে মোড়ানো রয়েছে। যার কারণে ইতিপূর্বেও অত্র মাদ্রাসার বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী ক্লাস চলাকালীন সময়ে জানালায় হাত দিয়ে বিদ্যুৎপৃষ্ট হলেও তারা প্রাণে রক্ষা পেয়েছে।

ওই মাদ্রাসার কয়েজন শিক্ষার্থী ও ভূক্তভোগী এলাকাবাসী জানান, এ বিষয়ে মাদ্রাসার সুপার জোবায়দুল হক কে একাধিকবার অভিযোগ করলেও তিনি কোন গুরুত্ব না দিয়ে উদাসীন থাকার কারণে অকালে একটা অবুঝ শিশুর প্রাণ ঝড়ে গেলো। আমরা এই সুপারের দৃষ্টান্ত মূলক শাস্তি চাই।

স্থানীয় বাসিন্দা জাহানারা বেগম জানান, ইতিপূর্বে গ্রামের আরও অনেক ছেলেরা বিদ্যুৎ শক খেয়েছে, সেগুলো সবই মাদ্রাসার সুপার জানে কিন্তু তারপরও লোকজন কে কোন সতর্কবার্তা দেওয়া হয়নি। যদি মাইক দিয়ে প্রচার করে দিত মাদ্রাসার টিনের ছাউনি কারেন্ট হয়ে থাকে। এখানে ওঠা বিপদজনক তাহলে কেউ আর সেখানে উঠতনা এবং অকালে এই শিশুটিও মারা যেতনা।

বিক্ষুব্ধ এলাবাসিরা অভিযোগ করে জানান, বিগত ৩ বছরে ৭/৮ টি নিয়োগের মধ্যে প্রতিটি প্রার্থীর কাছ থেকে ১২ থেকে ১৪ লাখ টাকা বাণিজ্য করে সুপার জোবায়দুল হক তার নিকটস্থ আত্মীয় স্বজনদের এই মাদ্রাসার বিভিন্ন পদে নিয়োগ দিলেও সেই অর্থগুলো মাদ্রাসার কোন প্রকার উন্নয়ন মূলক কাজে ব্যয় নাকরে আত্মসাৎ করেছে এবং এই গ্রামের মানুষ মাদ্রাসার জন্য জমি দিয়েছে তারপরও গ্রামের কোন মানুষকে ম্যানেজিং কমিটিতে রাখেনি। এই সুপার খুবই দূর্ণীতিবাজ।

নিহত শিশু আহাদ বাবুর পিতা আখতারুজ্জামান বাচ্চুর সাথে যোগাযোগ করলে তিনি কান্নাবিজরিত কণ্ঠে বলেন, গত ৩ বছর পূর্বে তিনি এই মাদ্রাসার ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করাকালীন বিভিন্ন অনিয়ম ও দূর্নিতি বন্ধ করে মাদ্রাসার উন্নয়নের জন্য চেষ্টা করলে সুপার জোবায়দুল হক তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন ষড়যন্ত্র করে সভাপতি পদ থেকে কৌশলে সড়িয়ে দিয়ে নিয়োগ বাণিজ্য শুরু করেন। শেষ পর্যন্ত সুপার ষড়যন্ত্র করে তার অবুঝ ছেলেটাকে মেরে ফেললো।

তিনি আহাজারি করতে করতে আরও বলেন, তার ছেলের মৃত্যুর খবর সুপারকে ফোন করে অনেকে জানালেও সে তার ছেলেকে একনজর দেখতেও আসেনি, মাটিও দেয়নি। আমি আমার ছেলের মৃত্যুর নায্য বিচার চাই।

শিশু আহাদ বাবুর মৃত্যুর বিষয়ে অত্র মাদ্রাসার মাদ্রাসার সুপার জোবায়দুল হকের সাথে যোগাযোগ করলে তিনি উল্টো ওই নিহত শিশু আহাদ বাবুকে দোষারোপ করে বলেন, ঐ ছেলেটাকে মাদ্রাসার টিনের ছাউনির উপর কে উঠতে বলেছে। সেখানে না উঠলে তার মৃত্যু হতোনা। তিনি আরও বলেন, ঐ গ্রামের লোকজন খুবই খারাপ ও মাদক কারবারি তাই ওরা আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ তুলেছে।

সেচ পাম্প চালানোর বৈদ্যুতিক বানিজ্যিক সংযোগ নিয়ে মাদ্রাসায় বিদ্যুৎ ব্যবহার ও ওয়্যারিং এর নাজুক অবস্থার বিষয়ে জানতে চাইলে সুপার জোবায়দুল হক বিভিন্ন মনগড়া অযুহাত উপস্থাপন করেন।

এ ব্যাপারে মাদ্রাসাটির বর্তমান ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি ও ধলাহার ইউপি চেয়ারম্যান ফয়েজ উদ্দিন আহম্মেদ এর সাথে যোগাযোগ করে মাদ্রাসার এই বেহাল দশার বিষয়ে তিনি কি পদক্ষেপ নিয়েছেন তা জানতে চাইলে তিনি কোন সদুত্তর না দিয়ে বলেন, মাদ্রাসার সুপাররা খুবই ধুরন্ধর ও টাউট প্রকৃতির হয়ে থাকে। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, এ বিষয়ে আপনাদের যা করার আছে করেন।

মাদ্রাসা প্রাঙ্গনে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে শিশু আহাদ বাবুর মৃত্যুর বিষয়ে জয়পুরহাট জেলা শিক্ষা অফিসার (ভারপ্রাপ্ত) মোঃ শাহাদুজ্জামান এর সাথে যোগাযোগ করলে তিনি জানান, এখন পর্যন্ত এ ব্যাপারে উক্ত মাদ্রাসার কর্তৃপক্ষরা ও নিহতের পরিবারের কেউ আমাকে অবগত করেনি। তবে এ সংক্রান্ত অভিযোগ আমার কার্যালয়ে আসলে বিধি মোতাবেক তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরো পড়ুন