ঝালকাঠি প্রতিনিধি :
ঝালকাঠি জেলার বিভিন্ন এলাকায় ছোটখাটো চুরি ও ডাকাতির মতো ঘটনা। প্রায় প্রতিদিনই চার উপজেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে চুরি ও ডাকাতির খবর পাওয়া যাচ্ছে। সম্পত্তি গ্রামে,পাড়া ও মহল্লায় প্রতিরোধে প্রতিটি এলাকার মানুষের রাত জেগে প্রতিরেধে মাঠে থাকলেও ঠেকানো যাচ্ছে না চুরির ঘটনা।
ঝালকাঠি জেলার চারটি উপজেলায় প্রায় চুরি,ডাকাতির ঘটনা ঘটলেও প্রসাশন নিরভ ভুমিকা পালন করছে বলে ভুক্তভোগিদের অভিযোগ। একের পর এক চুরি ও ডাকাতির মত ঘটনা ঘটে গেলেও থানা পুলিশ নিচ্ছেনা মামলা। আবার দুই একটি মামলা হলেও উদ্ধার হচ্ছেনা চুরি যাওয়া মালামাল।
নলছিটি উপজেলায় প্রবাসীর বাড়ীতে দূর্ধর্ষ ডাকাতি ও বারই করণ এলাকায় একটি ঘোয়ালঘরের হেজবলঃ কেটে ৬টি গরু চুরির করে নিয়েছে চোরেরা।
নলছিটি উপজেলার দপদপিয়া ইউনিয়নের অফিসের হাট এলাকায় গত (২৭ মে) শুক্রবার গভীর রাতে প্রবাসী বাবুল মিয়ার ঘরের জানালার গ্রিল কেটে ডাকাত দল প্রবেশ করে মারধর করাসহ মূল্যবান সামগ্রী নিয়ে গিয়েছে ।
ভুক্তভোগি বাবুল মিয়া জানায়, গত শুক্রবার রাত আনুমানিক তিন টার দিকে ডাকাত দল জানালার গ্রিল কেটে ঘরে ঢুকে অস্ত্রের মুখে আমাদের সবাইকে জিম্মি করে নগদ টাকা ও মূল্যবান সামগ্রী লুটে নেয়। এরপর আমার স্ত্রীকে জিম্মি করে উপরের তলায় আমার ভাইয়ের স্ত্রী‘র ঘরে প্রবেশ করে সেখান থেকেও নগদ টাকা, স্বর্ণালঙ্কারসহ মূল্যবান সামগ্রী নিয়ে তারা চলে যায়। ডাকাত দল দুই পরিবার থেকে আনুমানিক বিশ লক্ষাধিক টাকার মালামাল নিয়েছে বলে তিনি জানিয়েছে।এঘটনার খবর পেয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন নলছিটি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা(ওসি) মু: আতাউর রহমান। অন্য দিকে একই রাতে উপজেলার বারই করন এলাকা থেকে রনি তালুকদার নামে এক ব্যাক্তির গোয়াল ঘর থেকে ৬ টি গরু চুরি হয়েছে। ভুক্তভোগী রনি তালুকদার জানায়, তার এই ৬টি গরুর আনুমানিক মূল্যে প্রায় তিন লক্ষাধিক টাকা। তিনি আরো জানায় এই গরু গুলো তিনি ব্যবসার জন্য ক্রয় করেছে। এগুলো পালন করে,
আগামী কোরবানির বাজারে বিক্রি করার কথা ছিলো।
অপরদিকে ঝালকাঠি শহরের আমতলা মিতু সিনেমা হল সড়কে আর এস প্লাজার স্যামসং মোবাইলের শোরুম থেকে ৩১টি ও পাশা-পাশি অপ্পো শোরুমের ১৮টি মূল্যবান মোবাইল চোরেরা চুরি করে নিয়ে যায়। গত (২১/০৫/২০২২ইং) তারিখ শনিবার দিবাগত রাতে এই ঘটনা ঘটে।
এ চুরির ঘটনায় ঝালকাঠি সদর থানায় (গত ২২) মে মামলা নম্বর ১১ দায়ের করে বাদি সৈয়দ এনামুল হক। তিনি সাংবাদিকদের জানান,উক্ত চুরি হওয়া দুইটি দোকানের ৪৯টি মোবাইলের মূল্য ১২ লক্ষ ৯৭ হাজার ৭শত টাকা বলে দাবী করেছে দুটি শো রুমের মালিকরা।
এজাহারে উল্লেখ করেছে, রাতে চোর এই ভবনের প্রবশে দ্বারে সাটার কেটে এবং বিভতরে ১১টি তালা ভেঙ্গে প্রবেশ করেছে। স্যামসং শো রুম থেকে ৭ লক্ষ ৯০হাজার ৫শ টাকা মূল্যের ৩১টি দামী মোবাইল সেট ও অপ্পো শোরুম থেকে ৪ লক্ষ ১২ হাজার ২শত টাকা মূল্যের ১৮টি দামী মোবাইল সেট চুরি করে করে নিয়ে যায়। চোরেরা চুরি করে যাওয়ার সময় সাটারে নতুন তালা লাগিয়ে চলে যায়।
দপদপিয়া এলাকার খলিল হাওলাদার বলেন, প্রতি রাতেই এলাকায় চুরি, ডাকাতি, ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটেছে। এ নিয়ে আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছে এলাকার মানুষ।
ভুক্তভোগিরা এ ব্যাপারে থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছে। থানা এলাকায় মাদকের প্রাদুর্ভাব বৃদ্ধি পাওয়ায় চুরি ডাকাতি আশঙ্কাজনক হারে বেড়ে গেছে। মাদক বিক্রি করলে রাতারাতি অনেক টাকার মালিক হওয়ার লোভে জেলার ৪টি থানা এলাকায় নতুন নতুন মাদক ব্যবসায়ী তৈরি হচ্ছে। আর মাদক সেবনের টাকা জোগার করতেই এলাকার চুরি ডাকাতি করে নেশাখোররা। মাঝে মাঝে প্রশাসনের অভিযানে কিছু মাদক ব্যবসায়ী ধরা খেলো রাঘববোয়ালরা ধরা ছোঁয়ার বাইরে থেকে যাচ্ছেন বলে জানান সচেতন মহল।
বিভিন্ন এলাকায় চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই এখন নিত্যদিনের ঘটনা। এলাকাবাসীর জানায়, চুরি-ডাকাতি রোধে পুলিশি তৎপরতা থাকলেও তাদের চোখের আড়ালে এসব ঘটনা ঘটিয়ে সটকে পড়ছে। এ জন্যই বেড়েছে চুরি , ছিনতাই সহ অপরাধ মুলক কর্মকান্ড।
গত কয়েকদিন আগের ঘটনা ঝালকাঠি সদর হাসপাতালে আউটডোরে দুই নারী ডাক্তার দেখানোর জন্য হাসপাতালের করিডেরে থাকা অবস্থায় দুইটি স্বর্ণের এক ভরি ওজনের চেইন ওনাদের গলায় থাকা অবস্থায় অভিনব কায়দায় চুরি হয়েছে । রোগীদের ভীরের মধ্যে চেচামেচি করলেও কাউকে শনাক্ত করা সম্ভব হয়নি ।এব্যপারে ঝালকাঠি সদর হাসপাতালের তত্বাবধায়ক ডা. মো.জহিরুল ইসলাম জানান,হাসপাতালে সিসি ক্যামেরা না থাকায় ঘটনা হলেও কাউকে সনাক্ত করতে পারছিনা তাই দ্রুত সিসি ক্যামেরা বসানোর ব্যবস্থা করা হবে।
ঝালকাঠিতে পুলিশ সুপার কার্যালয়ের সামনে অর্ধ লক্ষাধিক টাকার মালামাল দু:সাহসিকভাবে চুরি হয়েছে। কাজি শফিকুল ইসলাম শফিক এর রাইজিং ট্রেডার্স প্রতিষ্ঠানে তৃতীয় দফায় চুরি সংঘটিত হয়। সোমবার (১৬ এপ্রিল) মধ্য রাতে (সিসি ফুটেজ টাইম) দোকানের সাটারের তালা ভেঙ্গে গ্যাস ভর্তি ৮ সিলিন্ডার, কম্পিউটার মনিটর, সাউন্ড সিস্টেম, নগদ ৩ হাজার টাকা, মোবাইল রিচার্জ কার্ড, এমবি কার্ড ও মিনিট কার্ড নিয়ে যায়। এ ঘটনায় দোকানের অনুমান ৭৫ হাজার টাকার মালামাল চুরি হয়েছে বলে মালিক শফিকুল ইসলাম জানান। গত ২ বছরের মধ্যে এই দোকানে চুরির এটি তৃতীয় ঘটনা। বিষয়টি ঝালকাঠি থানার পুলিশকে অবহিত করা হয়েছে এবং থানার পুলিশ কর্মকর্তা মো: সাইফুল ইসলাম ঘটনাস্থল পরিদর্শণ করে গেছেন। প্রতিষ্ঠানে থাকা সিসি ক্যামেরায় চুরির সম্পূর্ণ ঘটনা ধারণ করা রয়েছে।
অনেকে এসব বিষয়ে থানা পুলিশের কাছে মামলা দিয়েও প্রতিকার পাচ্ছেনা এবং চুরি হয়ে যাওয়া মালামাল উদ্ধার হচ্ছেনা বলে জানান । এ বিষয়ে নাম প্রকাশ না করার শর্তে পুলিশের এক কর্মকর্তা জানান ডাকাতি ও চুরির সংখ্যা তেমন নয়, পুলিশ সব সময় অপরাধ দমনে কাজ করে যাচ্ছে , এসকল ঘটনার সাথে সাথে থানা পুলিশকে অবহিত করলে বা অভিযোগ দিলে আমাদের কাজ করতে সুবিধা হয় । প্রতিটি ঘটনার বিষয়ে তদন্ত চলছে খোয়া যাওয়া মালামাল উদ্ধার ও ঘটনায় জড়িতদের আটকের জন্য অভিযান অব্যাহত রয়েছে ।