ঝালকাঠি প্রতিনিধিঃ-
ঝালকাঠি জেলা বণিক সমিতির নির্বাচনে নতুন মেরুকরন দেখা দিয়েছে। নির্বাচনে স্বতন্ত্র ও পৃথক দুটি প্যানেল মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন প্রার্থীরা। ৪ দিনের মাথায় স্বতন্ত্র প্রার্থী সামসুল হক মনুকে প্যানেলে ভিড়িয়েছে সাবেক সভাপতি মাহবুব হোসেন’র প্যানেলে। জেলা বণিক সমিতির সদ্য বিদায়ী সভাপতি মাহবুব হোসেন জানান, “আমার প্যানেলের সাথে ব্যবসায়ী সামসুল হক মনু অন্তর্ভূক্ত হয়েছেন। আমরা এ নির্বাচন একত্রেই করছি।” সব মিলিয়ে উৎসাহ উদ্দীপনা দেখা দিয়েছে নির্বাচনকে ঘিরে। গত ৬ জানুয়ারী নির্বাচনে অংশগ্রহণের জন্য সেরা করদাতা সাবিহা ক্যামিকেলস ওয়ার্কস এর পরিচালক সামসুল হক মনু একক ভাবে পরিচালক পদে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র দাখিল করেন। তার মনোনয়নের পর নতুন করে হিসেব নিকাশ কষতে শুরু করেছিল ব্যবসায়ীরা। তার এই উদ্যোগকে স্বাগত জানায় ব্যবসায়ী ও ভোটাররা। ব্যবসায়ী সামসুল হক মনু পিতার মৃত্যুর পর ব্যবসার হাল ধরে বাংলাদেশের একজন সফল ব্যবসায়ী হিসেবে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডে সেরা করদাতাও নির্বাচিত হয়েছেন। ব্যবসায়ী মহলে প্রতিষ্ঠিত হয়েছেন তার যোগ্যতায়। শিক্ষাগত যোগ্যতা, ব্যবসায়ীক কারণে বিদেশ ভ্রমণসহ দেশ বিদেশের অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে তিনি নিজেকে একজন সফল ব্যবসায়ী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে সক্ষম হয়েছেন। তার মত মেধা সম্পন্ন ব্যবসায়ীদের চেম্বারের নেতৃত্বে প্রয়োজন বলে মন্তব্য করেছেন অনেক ভোটাররা। দ্বিতীয় কলকাতা খ্যাত ব্যবসা কেন্দ্র ঝালকাঠি এক সময় শরীয়তপুর, ফরিদপুর, গোপালগঞ্জ, ভোলা, বরগুনা, পটুয়াখালী, পিরোজপুর, বরিশাল, বাগেরহাট ও খুলনার ব্যবসায়ীদের মোকাম হিসেবে ঝালকাঠি পরিচিত ছিল। কিন্তু কিছু সিন্ডিকেট ব্যবসায়ীদের কবলে পড়ে আজ ঝালকাঠির ব্যবসায়িক ঐতিহ্য হারিয়ে ফেলেছে। প্রতিবেদকের সাথে সাক্ষাতকারে সামসুল হক মনু বলেন, বিগত দিনে ঝালকাঠি চেম্বারের ব্যবসায়ী বা ভোটারদের মুল্যায়ন করা হয়নি। স্বনামধন্য ব্যবসায়ীরা চেম্বারের নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করায় চেম্বার অব কমার্স কিছু লোকের হাতে কুক্ষিগত। ঐ সকল নেতারা ব্যবসায়ী সদস্যদের চিত্তবিনোদন, সুযোগ সুবিধাসহ অনেক কিছু থেকে বঞ্চিত রেখেছেন। এ কারনেও অধিকাংশ ব্যবসায়ীরা চেম্বারের নেতৃত্বের পরিবর্তন চাচ্ছেন। আমি নির্বাচিত হলে এসব বিষয় নিয়ে কাজ করতে চাই। কথা প্রসঙ্গে তিনি জানান, ঝালকাঠি চেম্বার অব কমার্স এবং বর্তমান ৫ তলা ভবনের মূল উদ্যোক্তা আমি। তাই আমি একক ভাবে পরিচালক পদে নির্বাচনে অংশগ্রহণের চিন্তা ভাবনা করেছিলাম। আমি নিজেকে যোগ্য মনে করি এই কারণে ঝালকাঠির সন্তান হিসেবে আমার পিতার মৃত্যুর পর কারো কাছ থেকে স্বার্থের বিনিময়ে কিছুই করিনি। কিন্তু এখন দেখা যায় ব্যবসায়ীরা সময় অসময় বিভিন্ন কারণে চাঁদা দিয়ে যাচ্ছেন। কিন্তু তাদের স্বার্থের বেলায় পক্ষে কথা বলার কোন লোক পাওয়া যায় না। আমাকে ভোটাররা উৎসাহ যুগিয়েছেন। চেম্বারের নেতৃত্বের চেয়ারে নতুন লোক আসা উচিত বলে তিনি মনে করে আরো জানান, এই চেয়ারের জন্য ঘুরে ফিরে কয়েক জনের হাতেই শীর্ষ পদটি থেকে যায়। আমাদের ঝালকাঠির সন্তান শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু বলেছেন এবার নির্বাচনের মাধ্যমে নেতৃত্ব নির্বাচিত হবে। তার এই অবস্থানকে আমি এবং সকল ব্যবসায়ীরা স্বাগত জানাই। বিগত দিনে ব্যবসায়ীদের স্বাথে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে সামসুল হক মনু জানান, চেম্বার সদস্যদের কাছ থেকে চাঁদা নেয়া হলেও তাদের স্বার্থে উল্লেখযোগ্য কিছুই করা হচ্ছে না। যেমন ঝালকাঠি শহরে ট্রাক প্রবেশ করতে দেয়া হয় না। বড় বড় শহরের মত রাতের একটি নির্দিষ্ট সময়ে ট্রাক প্রবেশ করতে দেয়া উচিৎ। এ কারণে বাড়তি খরচ ভোক্তাদের মাথায় উঠছে। বিগত দিনে ব্যবসায়ীদের চিত্তবিনোদনের জন্য পিকনিকসহ তেমন কোন উদ্যোগ নিতে দেখিনি। শুধু ভোট চাওয়া, ক্ষমতায় থাকা এবং স্বার্থ নিয়ে ব্যস্ত থাকা কেবল আমাদের দায়িত্ব নয়। তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে জানান, চেম্বার অব কমার্সের ভোটার তালিকায় সঠিকভাবে ভোটার করা হয়নি। নির্বাচনের আগে সাধারণ ব্যবসায়ী ও ভোটারদের স্বার্থে আমি এসব বিষয় নিয়ে আমার বক্তব্য তুলে ধরতে চাই। উল্লেখ্য, ঝালকাঠিতে ২০১৮- ২০১৯ দ্বি-বার্ষিক নির্বাচনে তালিকা অনুযায়ী মোট ভোটার সংখ্যা ৪০৯। আগামী ১০ ফেব্রুয়ারী ঝালকাঠি চেম্বার অব কমার্সের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে।