ফারহানা আক্তার, জয়পুরহাট জেলা প্রতিনিধিঃ
জয়পুরহাটের ক্ষেতলালে ডাব বিক্রেতা থেকে ক্যাপসিকাম চাষে সফল কৃষক আঃ রশিদ ( ৩৮)। রশিদ উপজেলার মাহমদপুর ইউনিয়নের ধনতলা রসুলপুর গ্রামের গহের আলী আকন্দের ছেলে। তিনি এক একর জমিতে ক্যাপসিকাম চাষ করে এক বছরে আয় করেছে আট থেকে দশ লক্ষ টাকা।
সরেজমিনে দেখা গেছে, জয়পুরহাটের ক্ষেতলাল উপজেলার মামুদপুর ইউনিয়নের প্রত্যন্ত গ্রাম ধনতলা রসুলপুর। সেখানে স্ত্রী পুত্রকে নিয়ে অন্যের বাড়ীতে দিনমজুরের কাজ করে দিনাতিপাত করতেন আঃ রশিদ। দারিদ্রতা ঘোচাতে রাজধানী ঢাকার কারওয়ান বাজারে গিয়ে মহাজনের নিকট থেকে ধারে অল্প কমিশনে ফুটপাতে ডাব বিক্রির ব্যবসা শুরু করেন। সে আয়ে তার সংসার চলতনা। নিজে কিছু করার ভাবনা তাকে তারা করত। সেখানে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ইউটিউবে ভিডিও দেখে ক্যাপসিকাম চাষে উদ্বুদ্ধ হন। গত বছর গ্রামে ফিরে অন্যের ২০ শতাংশ জমি বর্গা নিয়ে নিজ উদ্যোগে পরীক্ষামূলক ক্যাপসিক্যাম চাষ শুরু করেন। শুরুতেই সম্ভাবনাময় এ সবজি চাষে লাভের মুখ দেখেন তিনি। চলতি মৌসুমে আবারও তিনি এক একর জমি বর্গা নিয়ে বানিজ্যিকভাবে ক্যাপসিক্যাম চাষ করে প্রায় আট লক্ষ টাকা আয়ের আশা করছেন।
ক্যাপসিক্যাম চাষী আব্দুর রশীদ জানায়, আমাদের এলাকায় অপ্রচলিত এই সবব্জি ক্যাপসিকাম চাষের জন্য গত নভেম্বর মাসে এক লক্ষ ২০ হাজার টাকা দিয়ে এক একর জমি বর্গা নিয়েছি । ওই জমিতে ক্যাপসিকাম চাষের সিদ্ধান্ত নিয়ে স্থানীয় সরকারী কৃষি অফিসের সাথে যোগাযোগ করি। তাদের পরামর্শে বগুড়ার একটি চাড়া উৎপাদন কারী প্রতিষ্ঠান এগ্রো ওয়ান নামক একটি নার্সারীর থেকে প্রতিটি চাড়া সাত টাকা মুল্যে ষোলো হাজার চাড়া গাছ সংগ্রহ করি। চাষের শুরু থেকে রাসায়নিক সার, জৈব সার কিটটনাশক, চাড়াঁ ও লেবার খরচসহ এখন পর্যন্ত প্রায় আড়াই থেকে তিন লক্ষ টাকা ব্যয় হয়েছে। নভেম্বর মাসে এচাঁড়া রোপন করেছি। দুই মাস পরির্চযার পর জানুয়ারীতে ফল সংগ্রহ শুরু হয়। পনের দিন পরপর দু’বার ফল তুলে প্রায় দুই লক্ষ টাকার ক্যাপসিক্যাম বিক্রি করা হয়েছে। বর্তমান বগুড়া শহরে পাইকারী বাজারে ৩২ থেকে ৩৫ শ টাকা মন বিক্রি হচ্ছে। এখনও যে পরিমাণ ফল গাছে রয়েছে তাতে আরও ছয় থেকে আট লক্ষাধিক টাকা বিক্রির আশা করছি।
তিনি আরোও বলেন, জয়পুরহাটের স্থানীয় বাজারে এই সবব্জির আশানুরূপ চাহিদা না থাকায় বাজারজাত করতে ঢাকা ও বগুড়া পাইকারী বাজারে বিক্রি করতে যেতে হয়। এতে অতিরিক্ত পরিবহন খরচ, শ্রম ও অর্থ ব্যয় হচ্ছে। পুষ্টিকর এই সবব্জি ক্যাপসিকাম এ এলাকায় এককভাবে চাষ করার কারনে শহরের পাইকারদের চাহিদা মতো মাল দিতে পারিনা। সেকারনে তারা এখানে কিনতে আসেনা।
স্থানীয় কৃষক কালাম ফকির জানান, প্রথমবার ক্যাপসিকাম চাষ করে ব্যাপক লাভবান হয়েছেন আব্দুর রশিদ। রমজান মাসে বাজারজাত করতে পারলে আরোও বেশি লাভবান হতেন। আগামী বছর আব্দুর রহিমের পাশাপাশি অনেক কৃষক ক্যাপসিকাম চাষের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
এগ্রোয়ানের নার্সারির মালিক সাইম জানান, ক্ষেতলাল উপজেলার কৃষকরা আঃ রশিদ টাইগার জাতের ক্যাপসিকাম চাষ করেছেন। ওই জাতের ক্যাপসিকামের এক কেজি বীজের দাম আড়াই থেকে ৩ লাখ টাকা। এতে কৃষকের উৎপাদন খরচ বেড়ে যায়। তবে তাদের উৎপাদিত টাইগার ক্যাপসিকা জাতের বীজের দাম মাত্র ৩০ হাজার টাকা। এতে কৃষকের উৎপাদন খরচ অনেক কম হবে। এ ছাড়াও টাইগার ক্যাপসিকাম- এর থেকে আবার আগামীতে চাষের জন্য বীজ সংগ্রহ করা যায়। তাই এ জাতের ক্যাপসিকাম চাষে কৃষক লাভবান হবে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা জাহিদুল ইসলাম বলেন, এলাকার বেশিরভাগ কৃষক ধান ও আলু চাষে অভ্যস্থ। কৃষক আব্দুর রশিদের মত অন্যান্য কৃষকরা ক্যাপসিক্যাম চাষে আগ্রহী হলে আমরা সর্বাত্মক সহযোগিতা করবো এবং ধান ও আলুর বাহিরে এ জাতীয় ফসল চাষে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করতে আমরা কাজ করছি।
তিনি জানান, এ বছর তিনি ১ একর জমিতে বাণিজ্যিকভাবে টাইগার ক্যাপসিকাম-চাষ করেছেন। এজাতে রোগ ও পোকা-মাকড়ের আক্রমণ তেমন না হওয়ায় ব্যাপক ফলন হয়েছে। বর্তমানে বাজার দাম কম। দাম ভালো হলে ৬-৮ লাখ টাকা বিক্রি করতে পারবেন।