লালমনিরহাট প্রতিনিধি
তিস্তা নদীর পানির ন্যায্য হিস্যা ও তিস্তা মেগা প্রকল্প অবিলম্বে বাস্তাবায়বের দাবীতে লালমনিরহাটে “জাগো বাহে তিস্তা বাঁচাই” স্লোগানে আগামী ১৭ ও ১৮ ফেব্রুয়ারি তিস্তা নদী তীরবর্তী অঞ্চলে ৪৮ ঘন্টার লাগাতার কর্মসূচীর ডাক দিয়েছেন তিস্তা নদী রক্ষা আন্দোলন কমিটি। বুধবার (৫ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে জেলা শহরের মিশন মোড় হামার বাড়ী কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান তিস্তা নদী রক্ষা আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী, বিএনপি জাতীয় নির্বাহী কমিটির রংপুর বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আসাদুল হাবিব দুলু। এসময় তিস্তা মেগা প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির অন্যান্য নেতৃবৃন্দ ও বিএনপির স্থানীয় নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
সংবাদ সম্মেলনে তিস্তা মেগা প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির প্রধান সমন্বায়ক বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা দুলু বলেন, তিস্তা মেগা প্রকল্প বাস্তবায়নে নদীর দুই পাড়ে স্থায়ীবাদ নির্মাণের লক্ষ্যে দুইদিন দুইরাত মোট ৪৮ ঘন্টার লাগাতার আন্দোলন কর্মসূচির ঘোষণা করেছি। এই আন্দোলনে নিজ নিজ উদ্যোগে যুক্ত থাকবেন তিস্তা তীরবর্তী ৫ জেলা লালমনিরহাট, নীলফামারী, রংপুর, গাইবান্ধা ও কুড়িগ্রামের তিস্তা চরাঞ্চলের মানুষজন। ১৩০ কিলোমিটার নদী তীরবর্তী ১১টি পয়েন্টে লাগাতার এই কর্মসুচী চলবে।
আসাদুল হাবিব দুলু বলেন, ঐতিহ্যবাহী তিস্তা নদীকে ঘিরে এ অঞ্চলে মানুষদের এক সময় ছিলো গোলা ভরা ধান, গোয়াল ভরা গরু, মুখে ছিলো ভাওয়াইয়া গান। তিস্তাপাড়ের মানুষ আনন্দে দিন কাটাতো। তিস্তা নদী ছিল তাদের মায়ের মতো। সেই তিস্তা এখন শুকিয়ে মরুভূমিতে পরিণত হয়েছে। তিস্তা নদী এখন ধু ধু বালু চর। এর প্রধান কারণ, পার্শ্ববর্তী দেশ শুষ্ক মৌসুমে তিস্তা নদীর উজানে বাঁধ নির্মাণ করে পানি আটকে রাখে, আর বর্ষা মৌসুমে বিনা কারণে পানি ছেড়ে দেয়। এর ফলে বন্যার কবলে পড়ে লাখ লাখ পরিবারের বাড়ি-ঘর পানিতে তলিয়ে যায়, হাজার হাজার মানুষ ভাঙনের কবলে পড়ে নিঃস্ব হয়ে বাড়ি-ঘর ছাড়া হচ্ছে। তিস্তা এখন আমাদের দুঃখের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। যে তিস্তা মানুষের জীবন-জীবিকার একমাত্র ভরসা ছিল, সেই তিস্তা এখন বর্ষাকালে অভিশাপ আর শুষ্ক মৌসুমে গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে।

তিনি বলেন, তিস্তার সুষ্ঠু পানি বন্টন ও তিস্তা মহাপরিকল্পনা নিয়ে দীর্ঘদিন বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন আন্দোলন সংগ্রাম করেছে। কিন্তু বিগত সরকার তিস্তাপাড়ের মানুষের সাথে শুধু প্রতারণাই করেনি পরিহাসও করেছে। আমরা মাঝে মাঝেই শুনেছি তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা হবে কিন্তু বাস্তবে কিছুই হয়নি। আমরা এটাও জানি আমাদের বন্ধু পার্শ্ববর্তী দেশ চীন এখানে অর্থায়ন করার জন্য আগ্রহ প্রকাশ করেছিল। একটি স্মারকও স্বাক্ষরিত হয়েছিল। কি কারণে সেটি আলোর মুখ দেখতে পাইনি জানি না। আমরা যতোটুকু জানি সেই স্মারকের মেয়াদও উত্তীর্ণ হয়ে গেছে। এ অঞ্চলের মানুষ আশায় বুক বেধেছিল, মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন হলে তাদের হারিয়ে যাওয়া ঐতিহ্য আর জীবন-জীবিকা ফিরে পাবে। এই অঞ্চলের মানুষের কর্মচাঞ্চল্যতা তৈরি হবে। কিন্তু কিছুই হয়নি। বর্তমানে তিস্তার দিকে তাকালে আমাদের সকলের বুক হাহাকার করে উঠে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *