মমিনুল ইসলাম বাবু কুড়িগ্রাম:
অভাব অনটন নেই আর নেই শব্দটি শুনেই বড় হওয়া ওদের। আশা জাগলেও ইচ্ছা পুরন হয়নি। তবে পিছিয়ে যায়নি ইচ্ছা শক্তিকে কাজে লাগিয়ে এবারে এসএসসিতে করেছে তারা বাজিমাত। আছে ইচ্ছা শক্তি, মেধাতেও নেই কমতি, বারবার পিছু টানে অভাব নামের শব্দটি। হেঁাচট খাওয়া মেধাবীরা চায় এগিয়ে যেতে, চায় ইচ্ছা পুরনসহ দেশের সেবা করতে। শুধু ইচ্ছা শক্তি আর মেধা দিয়ে সংগ্রাম করে জয় করা যায় তাই প্রমান করলো অদম্য ৫ মেধাবী। কোন বাঁধাই আটকাতে পারেনি তাদের। দরিদ্রতার সঙ্গে সংগ্রাম করে বিজয়ী হয়েছে ওরা । বাকি জীবনটাও জয়লাভ করার স্বপ্ন এখন তাদের চোখে। অদম্য ইচ্ছা শক্তি তাদের দুর্লভ সাফল্য এনে দিয়েছে। চলতি এসএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ ও গোল্ডেন পেয়ে সবাইকে অবাক করে দিয়েছে এ অদম্য মেধাবীরা। সৃষ্টি, আয়শা, সিমা, মোস্তারী, রেসমা এরা সবাই উচ্চ শিক্ষা অর্জন করতে চায়। হতে চায় কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ার, প্রকৌশলী, ডাক্তার। এই স্বপ্ন যেন তাদের দুঃস্বপ্ন না হয় এটাই তাদের এখন চাওয়া পাওয়া এবং সহযোগীতা চান সকলের কাছে।
সৃষ্টি আক্তার ঃ
অভাবের সংসারে সাহায্য করতে সৃষ্টি এখন গার্মেন্টসে। ফল প্রকাশের দিনও তাকে শ্রম দিতে হয়েছে। সাদ আছে সাধ্য নেই পিছু ছাড়েনি অভাব। পরীক্ষা ফলাফল ভালো করলেও স্বপ্ন দেখতেও ভয় পায় সৃষ্টি। আশা তার ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার কিন্তু অভাব তাকে ফেলিয়েছে চিন্তায়। বাবা শফিকুল ইসলাম একজন রিকসা চালক। সম্পদ বলতে শুধু বসতভিটা। আয় যা হয় তা দিয়েই সংসার চালানো মুশকিল, এর উপর আরো দুজন ছেলে মেয়ের পড়াশুনা। দুই বোনের মধ্যে সৃষ্টি ছোট। অভাবের কারনে সংসারের হাল ধরতে এই বয়সেই কাজ করতে হচ্ছে সৃষ্টিকে তাই এগিয়ে যাওয়ার স্বপ্ন গুলো যেন বারবার অন্ধকার মনে হয় তার। মা মোসলেমা বলেন হামরা তো এ প্লাস টে প্লাস বুঝিনা তবে অভাব আর কষ্ট বুঝি আর অভাবী সংসার তিন বেলা পেটপুরে খাবার জোগাড় করাই কঠিন। তার ওপর পড়াশুনা যেন পাহাড় ঠেলার সমান। চলতি এসএসসি পরীক্ষায় থানাহাট বালিকা পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় থেকে জিপিএ-৫ পেয়েছে সৃষ্টি। তার বাড়ি উলিপুর উপজেলার তবকপুর ইউনিয়নের বামনারছড়া এলাকায়।
আয়শা সিদ্দিকাঃ
উপজেলার ছোট কুষ্টারী এলাকার লাল মিয়ার ৩য় কন্যা আয়শা সিদ্দিকা। বাবা একজন চা দোকানদার। দরিদ্রতা এবং পারিবারিক নানা সঙ্কট বিকশিত হওয়ার পথকে সঙ্কুচিত করেছে। বারবার অভাব নামের থাবাটা টেনে ধরতে চেষ্টা করেছে কিন্তু অভাব থাকলেও মেধাকে আটকাতে পারেনি কেউ। তার স্বপ্ন এখন ইঞ্জিনিয়ার হওয়া কিন্তু বাধা এখন অভাব। টানাটানির সংসার। শত প্রতিকূলতাকে ডিঙ্গিয়ে চলতি এসএসসি পরীক্ষায় থানাহাট পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে (ভোকেঃ) থেকে জিপিএ-৫ পেয়েছে। ভালো ফল নিয়েও এখন চিন্তার সাগরে তার বাবা মা। তবে হার মানতে নারাজ আয়শা কিন্তু অভাব থামিয়ে দিতে চায় তাকে। হবে কি তার স্বপ্ন পুরন আসবে কি কেউ সহযোগীতা নিয়ে।
সিমা আক্তার সৃষ্টি ঃ
অভাব নামের শব্দটি দমিয়ে রাখতে পারেনি সিমা আক্তার সৃষ্টির মেধার বিকাশ। চলতি এসএসসি পরীক্ষায় বিজ্ঞান বিভাগ থেকে গোল্ডেন সবাইকে তাক লাগিয়ে দিয়েছে। জন্মেও ৩মাস বয়সেই হারাতে হয় বাবা সুজাকে। বাবার মৃত্যুর পর চাচা ও ভাগিদের অত্যাচারে ছাড়তে হয় বাবার ভিটা। কিছুদিন নানার বাড়ি উপজেলার মাচাবান্দা এলাকায় থাকার পর মায়ের সাথে থাকতে শুরু করেন কুড়িগ্রাম সদরে। মা সিলাইয়ের কাজ করে সংসারের হাল ধরে পাশাপাশি মেয়ের লেখাপড়াটাও চালিয়ে নেয়। বাবার মৃত্যু পর ঠঁাই হয়নি বাবার ভিটায় বাধার উপর বাধা সকল বাধা শত অভাব থামাতে পারেনি তার প্রতিভাকে। পায়নি ভালো পোশাক, জোটেনি ভালো খাবার। তবুও থেমে থাকেনি সিমা। শত কষ্টের মধ্যেও এগিয়ে নিয়েছে প্রতিভাকে। সে স্বপ্ন দেখে ডাক্তার হওয়ার স্বপ্ন দেখে মানুষের ও দেশের সেবার করার। কিন্তু বড় বাধা অভাব ? সিমা কুড়িগ্রাম সরকারী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিল।
রেসমা আক্তারঃ
রেসমা চলতি এসএসসি পরীক্ষায় থানাহাট পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় হতে ভোকেশনাল থেকে জিপিএ-৫ পেয়েছে। তার বাবার নিদিষ্ট কোন আয়ের উৎস নেই। সারাদিন ঘুরে বেরান কোথায় ডাক পড়লে রং এর কাজ করেন। দু’বোনের মধ্যে রেসমা ছোট। নেই সহায় সম্বল। আছে শুধু বসতভিটা। এরপরও সংসার খরচ, যোগ হয়েছে পড়ালেখার বাড়তি খরচ। মেয়ের ভালো ফলাফলেও হয়ে পড়েছে হতাশ। মেয়ের ইচ্ছা লেখাপড়া করার, কিন্তু বাবার ইচ্ছা আছে, সাহস নাই। শত অনিশ্চয়তার মাঝেও রেসমা তার জীবনের ইতি টানতে নারাজ এগিয়ে যেতে চায় স্বপ্ন দেখে পড়াশুনা করে একজন ভালো মানুষ হওয়ার। স্বপ্ন দেখে একজন ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার। তার বাড়ি উপজেলার মন্ডলপাড়ায়। বাবার নাম একরামুল।
মোস্তারী খাতুন ঃ মোস্তারী স্বপ্ন দেখে ইঞ্জিনিয়ার হওয়ায়। কিন্তু বড় বাধা অভাব। বাবার পঁুজি নেই, নেই সম্বল অন্যের জমি বর্গা আর দিনমজুর দিয়েই কষ্টে চালান সংসার। অভাব কখনো পিছু হঠে না। শত অভাবের মাঝেও মোস্তারীকে দমে রাখতে পারেনি দারিদ্র। পিছু টান থাকলেও সব বঁাধা পেরিয়ে সে এবারে থানাহাট পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের (ভোকেঃ) থেকে জিপিএ-৫ পেয়েছে। শতবাধা থাকলেও পরীক্ষার ফল খারাপ হতে দেয়নি সকল বাধা। সে একজন সিভিল ইঞ্জিনিয়ার হতে চায়। তার বাড়ি উপজেলার থানাহাট ইউনিয়নের বনবিভাগ নয়াবাড়ি গ্রামে। বাবা মোসলেম বলেন অভাবের সংসার তার, উপর লেখা পড়ার খরচ, বড় মুশকিল, কি ভাবে মেয়ের স্বপ্ন করবে বারবার তাকে চিন্তাটা কুড়ে কুড়ে খাচ্ছে। এমত অবস্থায় সহযোগীতা চান তিনি।