হুমায়ুন কবির সূর্য, কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি:

চলতি বছর এসএসসি পরীক্ষার ফলাফলে দিনাজপুর শিক্ষা বোর্ডে ওয়েবসাইটে দেয়া তথ্য মতে শতভাগ ফেল করা একমাত্র শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের তালিকায় কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার পূর্ব কুমরপুর আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ের নাম। দিনাজপুর শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান প্রফেসর স.ম. আব্দুস সামাদ আজাদ এ তথ্য নিশ্চিত করে জানান, এ বিদ্যালয় থেকে একজন মাত্র শিক্ষার্থী এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিলেও সে পাশ করতে পারেনি।

কিন্তু এ বিদ্যালয়ের শিক্ষক বেলাল হোসাইন এক চমকপ্রদ তথ্য দিয়ে বলেন, পাশ করবে কেমনে ঐ পরীক্ষার্থী তো চতুর্থ পরীক্ষার দিন হলে অসদুপায় অবলম্বনের দায়ে (এক্সফেল) বহিস্কার হয়েছেন। পূর্ব কুমরপুর আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ের দুজন পরীক্ষার্থী মানবিক বিভাগ থেকে ফরম ফিলাপ করে। পরীক্ষার কয়েকদিন আগে একজন অসুস্থ্য হয়ে পড়ায় পরীক্ষায় অংশগ্রহন করতে পারেনি। অপরজন অংশগ্রহন করলেও এক্সফেল হওয়ায় আমরা আগে থেকে ফলাফল জানতাম। তাই এ ফলাফলে আমরা অবাক হইনি।

কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার ভোগডাঙ্গা ইউনিয়নের প্রত্যন্ত গ্রাম পূর্ব কুমরপুর। এখানে ২০০৩ সালে প্রতিষ্ঠা করা হয় পূর্ব কুমরপুর আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ের। শিক্ষক সংখ্যা ৭জন কর্মচারী ৪জন। খাতা কলমে শিক্ষার্থী ২শতাধিক। কিন্তু স্কুলে গড় উপস্থিতি ২০/২৫জন শিক্ষার্থীর। তারপরও কøাস হয়না নিয়মিত। সকাল ১০টায় স্কুলের তালা খুললেও বন্ধ হয় দুপুরে যোহরের নামাজের আজান পড়লে। এরকম অনেক তথ্য নিশ্চিত করেন এ বিদ্যালয়ের অফিস সহায়ক রিয়াজুল হক।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, পূর্ব কুমরপুর আর্দশ উচ্চ বিদ্যালয়টি নন এমপিওভুক্ত। এবছর এসএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে রেজিষ্টেশন করে মাত্র ২জন শিক্ষার্থী। এর মধ্যে আবার ১জন পরিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ নেয়নি। একজন ছাত্রী পরীক্ষায় অংশ নিলেও সেও পাস করতে পারেনি। ২০১৪ সালে একাডেমিক স্বীকৃতি লাভ করে। প্রতি বছর কয়েকজন পরীক্ষার্থী পাশ করলেও এবার শুন্য। এনিয়ে অভিভাবক এবং শিক্ষকদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। এ বিদ্যায়য়ের প্রধান শিক্ষক রিয়াজুল হক ফোন বন্ধ করে রাখায় এবং বাড়িতে না থাকায় কেউ যোগাযোগ করতে পারছেন না।

পূর্ব কুমরপুর আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি আবুল হোসেন সরকার বলেন, আমি একই সঙ্গে ভোগডাঙ্গা আব্দুল করিম বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক। আমার বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক রিয়াজুল হক। একই সঙ্গে রিয়াজুল হক পূর্ব কুমরপুর আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক। সে স্কুলে যেতে পারে না কিন্তু খোজ খবর রাখে। প্রায় ২০বছর থেকে এমপিও না হওয়ায় শিক্ষক কর্মচারীরা হতাশ। পেটের দায়ে নানান কাজের সাথে যুক্ত হয়েছে। নিয়মিত ক্লাসও হয়না। ফলে এমন ফলাফল হয়েছে। ভবিষ্যতে ফলাফল ভালো করার জন্য বিশেষ নজর দেয়া হবে।

জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মোঃ সামছুল আলম জানান, এ স্কুলের বিষয়ে বোর্ড ব্যবস্থা নিয়ে পাঠদান বন্ধ করতে পারেন। তদন্ত করে আমিও লিখব বোর্ড বরাবর। যেহেতু নন এমপিও ভুক্ত প্রতিষ্ঠান কাজেই আমার কিছুই করার নেই। ব্যবস্থা যা নেয়ার তা বোর্ড কর্তৃপক্ষই নিবেন।

উল্লেখ্য, বোর্ড সূত্রে প্রাপ্ত তথ্যে জানাযায়, ৭৩.৪৯ শতাংশ পাশের হার নিয়ে কুড়িগ্রাম জেলার এবারের মোট পরীক্ষার্থীর সয়খ্যা ছিলো ২২ হাজার ৪৩৯জন। এর মধ্যে পাশ করেছেন ১৬হাজার ৪৯০জন। জিপিএ-৫ পেয়েছেন এক হাজার ৫৭৭জন পরীক্ষার্থী। মোট পরীক্ষার্থীর মধ্যে ১০ হাজার ৪৯৪জন নারী এবং ১১ হাজার ৯৪৫জন পরুষ পরীক্ষার্থী ছিলো। দিনাজপুর বোর্ডে এবার পাশের হার ছিলো ৭৬.৮৭ শতাংশ যা গত ৭ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন বলে জানা গেছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *