লালমনিরহাট প্রতিনিধিঃ
জনস্বাস্থ্য বিষয়ে বয়ঃসন্ধিকালের কিশোর-কিশোরীদের যৌন জ্ঞান ও প্রজনন স্বাস্থ্যে সেবা দেশে এখন গুরুত্ব পাচ্ছে। বর্তমান পরিস্থিতিতে কিশোর-কিশোরীদের যৌন ও প্রজনন স্বাস্থ্য অধিকার’-এর ওপর করা সাম্প্রতিক এক সমীক্ষায় এ তথ্য উঠে এসেছে।
কৈশোরকালে মন ও দেহের যে বৃদ্ধি ঘটে, সেই পরিবর্তনের সঙ্গে বয়ঃসন্ধিকালে পৌঁছানো শিশু-কিশোরদের মনো-দৈহিক ও মনো-সামাজিক, আবেগীয় ও বুদ্ধিবৃত্তিক পরিবর্তন ঘটে। বয়ঃসন্ধিকালে শিশু-কিশোরদের নিজের দেহ ও মন নিয়ে অনেক প্রশ্ন থাকে। আর এই প্রশ্নের সঠিক জবাব না পেলে বিভ্রান্তি থেকে নানারকম ক্ষতি হতে পারে। একজন শিশু যখন বয়ঃসন্ধিকালে পৌঁছে, তখন সেই শিশুর জন্য শারীরিক ও মানসিকভাবে বিশেষ মনোযোগ প্রয়োজন।
পরিবার ও সমাজ যৌনজীবন ও প্রজনন স্বাস্থ্য নিয়ে কোনো আলোচনাকে গ্রহণ করে না। বরং এই বিষয়ক আলোচনাকে ঘরে-বাইরে, এলাকায়, স্কুলে এখনও ঠেকানোর চেষ্টা করে থাকে।
ওই সমীক্ষায় বলা হয়, কিশোর-কিশোরীদের স্বাস্থ্যসেবা বিষয়ে সরকার গৃহীত বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণে নানা প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গিয়ে দেখা গেছে, ২০১৭-২০২২ কিশোর-কিশোরীদের স্বাস্থ্যসেবা সংক্রান্ত অপারেশন প্ল্যানে বয়ঃসন্ধিকালের সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে বিভিন্ন প্রকল্প থাকলেও, বাবা-মা, অভিভাবক, স্কুল-কলেজ, ধর্মীয় গুরু, সমাজকর্মী, স্থানীয় মোড়ল ও রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ এই বিষয়গুলো নিয়ে মাথা ঘামান না। অথচ এ বিষয়ে তাদেরই সবচেয়ে বেশি সচেতন হওয়ার কথা বলা হচ্ছে বার বার।
বাংলাদেশ গৃহগণনা/জনশুমারী (২০২২) সালের হিসাব অনুযায়ী দেশে মোট জনসংখ্যার মধ্যে প্রায় ৫৭ শতাংশ জনগোষ্ঠীই কিশোর-কিশোরী। অথচ কৈশোরবান্ধব সেবাকেন্দ্রের সেবা সম্পর্কে কিশোর-কিশোরীদের কোনো সুস্পষ্ট ধারণা নেই বা তাদের সেভাবে জানানোও হয় না। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার হলো কিশোর-কিশোরীদের স্বাস্থ্যসেবা নেয়ার ক্ষেত্রে গোপনীয়তার অভাব রয়েছে। কিশোর-কিশোরীরা সেবা গ্রহণের সময় সেবাদানকারীর কক্ষের বাইরে অযাচিতভাবে মানুষ উঁকিঝুঁকি দেয়। যত্ন নিয়ে বা গুরুত্ব দিয়ে কিশোর-কিশোরীদের বিশেষ করে কিশোর ও অবিবাহিতা কিশোরীদের সঙ্গে কথা বলা হয় না। অনেক ক্ষেত্রে কিশোর-কিশোরীরা স্কুলে থাকার কারণে স্বাস্থ্যসেবা নেয়ার ক্ষেত্রে স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রের সময়সূচির অনুসারে সেবাকেন্দ্রে আসতে পারে না এবং স্বাস্থ্যসেবাও নিতে পারে না।
সমীক্ষায় উঠে আসে, যৌনস্বাস্থ্য বিষয়ে শিক্ষা কিন্তু শুধু যৌনতা বিষয়ে শিক্ষা নয়, এ শিক্ষা শিশু-কিশোরদের স্বাস্থ্য, আবেগ, মানসিক এবং সামাজিক শিক্ষা, যা মানুষের সারাজীবন প্রভাব রাখে। অথচ আমাদের সমাজে বয়ঃসন্ধিকালের শিশু-কিশোরদের এসব নিয়ে কথা বলাটা এখনও একধরনের প্রাচীন ধারার মধ্যে রয়ে গেছে। ফলে যা জানা তাদের জন্য জরুরি, তারা তা জানতে পারছে না। প্রচলিত ধারণা ও বিভিন্ন ধরনের বিতর্কিত কথাবার্তার কারণে বয়ঃসন্ধিকালের স্বাস্থ্য ইস্যুগুলো নিয়ে কথাই বলা যায় না। অথচ সমাজে যৌন ও প্রজনন স্বাস্থ্য বিষয়ে নেতিবাচক ঘটনা ঘটেই চলেছে। যেমন বাল্য বয়সে গর্ভধারণ, অনিরাপদ গর্ভপাত, যৌনরোগ সংক্রমণ, যৌনতা-বিষয়ক সহিংসতা।
যৌন ও প্রজনন স্বাস্থ্য ও অধিকার নিয়ে কাজ করছে ব্র্যাক সামাজিক ক্ষমতায়ন ও আইনি কর্মসূচির আওতায় অধিকার এখানে এখনই প্রকল্প। প্রকল্পটির উদ্দেশ্য হলো- সমাজের কিশোর ও তরুণরা প্রজনন স্বাস্থ্য বিষয়ে যাতে খোলামেলা কথা বলতে পারে এবং তথ্য প্রাপ্তির ক্ষেত্রে যে সামাজিক ‘ট্যাবু’ ও বাধাঁ রয়েছে তা দূর করা। সমাজের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি এবং জনমত গড়ে তোলার মাধ্যমে এমন একটি অনুকূল পরিবেশ তৈরি করা, যেখানে কিশোর ও তরুণেরা প্রজনন স্বাস্থ্য বিষয়ে নিঃসংকোচে কথা বলতে পারে এবং সঠিক তথ্য প্রাপ্তির মাধ্যমে তাদের প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্য সেবা গ্রহণ করতে পারে। তরুণদের যৌন ও প্রজনন স্বাস্থ্য অধিকার এবং লিঙ্গ ভিত্তিক ন্যায়বিচারের জন্য সুশীল সমাজকে সম্পৃক্ত করে সমাজের সকল স্তরের যুবক-যুবতী ও কিশোর-কিশোরীদের জন্য এমন একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক ব্যবস্থা গড়ে তোলা যা তাদের যৌন ও প্রজনন অধিকার এবং অ-বৈষম্যমূলক লিঙ্গ প্রকাশের বিষয়ে সচেতন এবং ক্ষমতাবান/ আত্মপ্রত্যয়ী করবে।
উদ্দেশ্য অর্জনে প্রকল্পটি যুব ও তরুণ জনগোষ্ঠী (১৫-২৪ বছর), শিক্ষক, ছাত্র-ছাত্রী, এসএমসি সদস্য, অভিভাবক সহ স্বাস্থ্য সহায়তা প্রদানকারী সরকারী ও বেসরকারী বিভিন্ন সংস্থা এবং মিডিয়ার সাথে সম্পর্কিত ব্যক্তিবর্গ, বিভিন্ন নাগরিক সমাজ ও সিভিল সোসাইটির সদস্যবৃন্দ প্রমূখদের সাথে লালমনিরহাট জেলায় একযোগে কাজ করছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *