স্টাফ রিপোর্টার॥
দুর্নীতির মাধ্যমে তিস্তা ২য় সড়ক সেতুর কাজ শেষ হওয়ার পর এবার অ্যাপ্রোচ সড়ক নির্মানে সীমাহীন দুর্নীতি চলছে বলে অভিযোগ উঠেছে। সেতুটি নির্মাণে প্রতিনিয়ত চলছিল ফাঁকিবাজি। এছাড়াও দু’পারের অ্যাপ্রোচ সড়ক নির্মানে চলছে সীমাহীন অনিয়ম ও দুর্নীতি।এসব দুর্নীতির সাথে সরাসরি উপজেলা প্রকৌশলী পারভেজ নেওয়াজ খান জড়িত বলে অভিযোগ রয়েছে।উক্ত প্রকৌশলী ইতো মধ্যে কোটি টাকা ঘুষ নিয়েছেন সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারের নিকট থেকে। ২০১২ সালের ২০ সেপ্টেম্বর বর্তমান ক্ষমতাসীন দলের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দ্বিতীয় তিস্তা সড়ক সেতু নির্মাণ কাজের উদ্বোধন করেন এবং ২০১৪ সালের জুনে সেতুর কাজ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান নাভানা কনস্ট্রাকশন সে সময় সেতুর নির্মাণ কাজের অগ্রগতি দেখান ৪৫ শতাংশ। পরবর্তীতে এক বছর মেয়াদ বাড়িয়ে ২০১৫ সালের জুন পর্যন্ত সময় নির্ধারণ করা হয়। আর এ এক বছরে কাজ হয় মাত্র ২০ শতাংশ। সেতু নির্মানের সময় অনিয়মের আশ্রয় গ্রহন করায় গার্ডার ভেঙ্গে পড়ে। ফলে দ্বিতীয় দফায় ২০১৬ সালের জুন পর্যন্ত আবারো সময় বাড়ানো হয়। কিন্তু সে সময়ের মধ্যে সেতুর নির্মাণ কাজ শেষ না হওয়ায় পরবর্তীতে তৃতীয় দফায় আবার চলতি বছরের জুন পর্যন্ত কাজের সময়সীমা বাড়ানো হলে সেতুর কাজ শেষ না হওয়ায় তা অক্টোবর মাস পর্যন্ত সময়সীমা নির্ধারন করে দেয়া হয়েছে। তবে দফায় দফায় নির্মাণের সময় বাড়লেও বাড়ছে না কাজের কোন গতি। সরেজমিনে দেখা গেছে, মূল সেতুর কাজ এখনো শেষ হয়নি। সেতুটির ভেতরে ফুটপাত, পাইপলাইন, বিদ্যুৎ লাইন, রংসহ বিভিন্ন কাজ চলছে। তাই দুই পাশে লোহার গেট লাগিয়ে বন্ধ রাখা হয়েছে সেতুটি। কালীগঞ্জের কাকিনা হতে গঙ্গাচড়ার মহিপুর ঘাট পর্যন্ত প্রায় পাঁচ কিলোমিটার অ্যাপ্রোচ সংযোগ সড়কে এখনো চলছে বালু-মাটি ফেলানোর কাজ। এছাড়া ব্রিজের দুই পাশে প্রটেকশন দেয়াল ধসে যাওয়াসহ পাঁচ কিলোমিটার সংযোগ সড়ক, তিনটি কালভার্ট ও দুটি ছোট সেতু বন্যার কবলে পড়ে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। যা সংস্কার করতেও সময় লাগবে। আর ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান যে গতিতে এসব কাজ চালিয়ে যাচ্ছে তাতে চলতি বছরেও সকল কাজ শেষ হবে না বলে স্থানীয়দের ধারনা।তবে এ গাফিলাতির জন্য স্থানীয়রা সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলী কুখ্যাত দুর্নীতিবাজ পারভেজ নেওয়াজ খানকে দায়ী করেছেন। এলজিইডি সূত্রে জানা যায়, বৃহত্তর রংপুর-দিনাজপুর জেলার গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পের (জিআরডিপি) অর্থায়নে ১২১ কোটি ৬৫ লাখ ৭৪ হাজার ১০৩ টাকা ব্যয়ে সেতুটি নির্মাণের কার্যাদেশ দেয়া হয়। এলজিইডির তত্ত¦াবধানে নির্মাণকাজ শুরু করে ঢাকার ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান নাভানা কনস্ট্রাকশন। ৮৫০ মিটার দৈর্ঘ্য এবং ৯ দশমিক ৬ মিটার প্রস্থের এ সড়ক সেতুর দুপাশে রেলিংসহ ২ দশমিক ৩ মিটার প্রস্থের ফুটপাত রয়েছে। সেতুটির উত্তর পাশে (কাকিনার দিকে) তিস্তা নদীর বাঁ তীরে ১ হাজার ৩০০ মিটার দীর্ঘ নদীশাসন কার্যক্রমের অংশ হিসেবে পাকা করা হয়েছে। অপরদিকে সেতুটির দক্ষিণ দিকে (মহিপুর অংশে) পানি উন্নয়ন বোর্ডের পুরোনো নদীশাসন কার্যক্রমের সিসি ব্লক রয়েছে। এছাড়া কালীগঞ্জের কাকিনা হতে গঙ্গাচড়ার মহিপুর ঘাট পর্যন্ত প্রায় পাঁচ কিলোমিটার অ্যাপ্রোচ সংযোগ সড়কের ব্যয় ধরা হয় ১৩ কোটি টাকা এবং ওই সংযোগ সড়কে তিনটি কালভার্ট ও দুটি ছোট সেতুর নির্মাণ ব্যয় নির্ধারণ করা হয় প্রায় ৯ কোটি টাকা। এর মধ্যে মূল সেতু ও পুরো সড়কজুড়ে থাকবে আলোকসজ্জার ব্যবস্থা। স্থানীয়দের অভিযোগ, দ্বিতীয় তিস্তা সড়ক সেতুর নির্মাণ প্রকল্পটি অনুমোদন থেকে শুরু করে বাস্তবায়নে বিভিন্ন ধাপে ধাপে অনিয়ম-দুর্নীতির আশ্রয় নেয়া হয়েছে। প্রকল্পটির ত্রুটি, বিচ্যূতি, অনিয়ম, দুর্নীতি ঢাকতে প্রকল্প সংশ্লিষ্টদের নিয়মবহিভূত আর্থিক সুবিধা দেয়া হয়েছে নির্মাতা সংস্থার পক্ষ থেকে। বার বার এসব অনিয়ম চাপা পড়ায় ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান ধীরগতিতে কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। আর সেতুটি নির্মাণকাজ তত্ত্বাবধানের দায়িত্বে থাকা উপজেলা প্রকৌশলী পারভেজসহ অন্যান্য সরকারি কর্মকর্তারা বছরের পর বছর নির্মাণ কাজের সময়সীমা বাড়িয়ে দিয়ে নিরবে অফিসে বসে আছেন। স্থানীয়দের অভিযোগ, ঠিকাদারি প্রতিষ্টানকে ওইসব সুযোগ-সুবিধা দেয়ার জন্য প্রকৌশলীগন ইতোমধ্যে তাদের কাছ থেকে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। ঠিকাদারি প্রতিষ্টানকে অবৈধ সুযোগ দেয়ার কারনে কিছুদিন আগে গার্ডার ভেঙ্গে গিয়েছিল। সংশ্লিষ্টদের সীমাহীন অনিয়ম ও দুর্নীতির বিষয়টি উর্ধতন কর্তৃপক্ষ সরেজমিন তদন্ত করেছিলেন কিন্ত রহস্যজনক কারনে দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা গ্রহন করেননি বলে জানা গেছে। ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান নাভানা কনস্ট্রাকশনের ম্যানেজার প্রবীণ কুমার বিশ্বাস জানান, সেতু নির্মাণকাজে কোন ফাঁকিবাজি করা হয়নি। যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে ইতিপূর্বে দুটি গার্ডার ভেঙে পড়ায় কিছুটা বেশি সময় লেগেছে। এছাড়া সংযোগ সড়ক নির্মাণের ক্ষেত্রে কিছু জমি ব্যক্তিগত হওয়া আর সরকারি বাজার মূল্যের চেয়ে জমির দাম বেশি হওয়ার কারণে জমি অধিগ্রহণের ক্ষেত্রে জটিলতা তৈরি হয়। এ বিষয়গুলো সমাধান করতেও কিছু সময় লেগে গেছে। বর্তমানে সেতু নির্মাণের কাজ শেষ করা হয়েছে। সংযোগ সড়কের কাজ শেষ হলেই চালু করা যাবে সেতুটি। সেতুটি নির্মাণকাজ তত্ত্বাবধানের দায়িত্বে থাকা লালমনিরহাটের কালীগঞ্জ উপজেলার এলজিইডি প্রকৌশলী পারভেজ নেওয়াজ খান ওরফে কাউয়া পারভেজ জানান, সেতুটির কাজ এ পর্যন্ত ৯৯ দশমিক ৫ শতাংশ হয়েছে। বাকি কাজ অক্টোবর মাসের মধ্যেই শেষ করা হবে। এবিষয়ে লালমনিরহাট এল.জি.ইডি’র নির্বাহী প্রকৌশলী জাকিউর রহমান বলেন, সেতুর কাজ শেষ হয়েছে,অ্যাপ্রোচের কাজ চলছে,আগামী ডিসেম্বর মাসেই সকল কাজ সমাপ্ত হবে এবং যথা সময়ে উদ্ধোধন করবে প্রধান মন্ত্রী।এদিকে এই বিপুল পরিমান অর্থ ব্যয়ে স্বপ্নের ২য় তিস্তা সেতু নির্মানে দুর্নীতির বিষয়টি তদন্ত করা প্রয়োজন বলে সচেতন মহল অভিমত ব্যক্ত করেছেন।