কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি:
কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলার ধরলা নদী কবলিত প্রত্যন্ত চরাঞ্চল জুড়ে নজর কাড়ে বিস্তৃত বাদাম ক্ষেত। এ অঞ্চলের কৃষকরা ধরলা নদীর বুকে জেগে ওঠা বালুর চর ও নদীর তীরে গড়ে ওঠা বালুর দ্বীপে মৌসুম অনুযায়ী আখ, বাদাম, ভুট্টা ও কলা সহ বিভিন্ন ফসলের চাষাবাদ করেন। তবে আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এবারে অন্যান্য ফসলের তুলনায় বাদামের বাম্পার ফলন হয়েছে। বাদাম বিক্রি করে ভালো দামও পাচ্ছেন চাষীরা। ভালো দাম পাওয়ায় চাষিরা বাদাম চাষে আগ্রহী হচ্ছেন।
উপজেলা কৃষি অফিস জানায়, উপজেলার ছয় ইউনিয়নের মধ্যে চারটি ইউনিয়ন ধরলা নদী কবলিত। সবখানেই কমবেশি বাদামের চাষ হলেও এই নদীর চরাঞ্চল গুলোতে বাদামের চাষ চোখে পড়ার মতো। এবারে নাওডাঙ্গা ইউনিয়নের চর গোরকমন্ডল, ঝাউকুঠির চর, শিমুলবাড়ির চর জ্যোতিন্দ্রনারায়ন, বড়ভিটার মেখলীর চর, চর ধনীরাম এলাকায় সবচেয়ে বেশি বাদাম চাষ হয়েছে। খরিপ-২ মৌসুমে চিনাবাদাম আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ১৫ হেক্টর আর আবাদ হয়েছে ২৫ হেক্টর। আর উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১ দশমিক ২ মেট্রিক টন। ফসল ঘরে তোলা শেষ হলে উৎপাদন জানা যাবে। চলতি বছরে উপজেলায় রবি মৌসুমে চিনাবাদাম আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ২৫ হেক্টর, এখন পর্যন্ত ৫ হেক্টর অর্জিত হয়েছে। আশা করা যায় এবারও লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাবে।
কৃষকরা বলছেন অন্যান্যবারের তুলনায় এবার কয়েকগুণ বেশি বাদামের আবাদ হয়েছে। তাছাড়া অন্যান্য আবাদের তুলনায় কম খরচে বেশি লাভ ও কোনো প্রকার বাড়তি ঝামেলা না থাকায় বাদাম চাষের দিকে ঝুঁকে পড়েছেন চাষিরা। শুধু চর গোরকমন্ডল এলাকাতেই প্রায় ৬০ একর জমিতে বাদামের চাষ হয়েছে। প্রতি বছরের তুলনায় এবার বাম্পার ফলন হয়েছে। ভালো ফলন পাওয়ায় সকলের মুখে হাসি।
উপজেলার নাওডাঙ্গা ইউনিয়নের প্রত্যন্ত চর গোরকমন্ডল এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, মমতাজ আলীর জমি থেকে বাদাম তুলছেন ছফুরা খাতুন, ছকিনা খাতুন, সুকুরজান, আকলিমা খাতুন সহ ২০/২৫ জন নারী। কয়েকজন রাস্তার ধারে বসে গাছ থেকে বাদাম ছড়াচ্ছেন। তারা জানালেন, প্রতি কেজি বাদাম ছড়ানোর জন্য পাবেন ৪ টাকা। এছাড়াও বাদাম গাছের ডালপালা নিবেন গোখাদ্য ও জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করার জন্য।
উপজেলার নাওডাঙ্গা ইউনিয়নের চর গোরকমন্ডল গ্রামের বাদাম চাষী সাইদুল ইসলাম জানালেন, তিনি এবছর ৫ বিঘা জমিতে বাদামের চাষ করেছেন। ফলনও হয়েছে বেশ। জমি প্রস্তুত থেকে শুরু করে ফসল ঘরে তোলা পর্যন্ত বিঘা প্রতি খরচ হয়েছিল ৭ থেকে ৮ হাজার টাকা। বিঘা প্রতি ফলন হবে প্রায় ৪ মণেরও বেশি। এখন প্রতি মণ বাদাম বিক্রি হচ্ছে ৭ থেকে ৮ হাজার টাকায়। বাদাম বিক্রি করে চাষের খরচ মেটানোর পর প্রতি বিঘায় ২০ হাজার টাকারও বেশি লাভ হবে। এবছর বাদাম বিক্রি করেই লক্ষাধিক টাকা লাভবান হবেন বলে আশা রাখছেন তিনি।
আরেক বাদাম চাষি এমদাদুল হক বলেন, জমি থেকে বাদাম তোলা শুরু করে দিয়েছি। গত বছর বাজারে দাম ভালো পাওয়ায় এবারও বাদামের চাষ করেছি। এবছর আরো দাম বৃদ্ধি পেয়েছে, আশা করি ভালো লাভ হবে।
এব্যাপারে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা নিলুফা ইয়াছমিন জানান, বাদাম একটি অর্থকরী ফসল। ফলনও ভাল এবং দামও ভাল। অন্যান্য ফসলের চাইতে বাদামের মূল্য বেশি হওয়ায় বাদামের চাষ ক্রমেই জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। এজন্য বাদামের নতুন নতুন জাত সরবরাহ করা হচ্ছে। এবছর আমরা ১৫০ জন বাদাম চাষীকে কৃষি প্রণোদনার আওতায় নিয়ে এসেছি। প্রত্যেককে ১০ কেজি করে বাদাম বীজ, ১০ কেজি ডিএপি ও ৫ কেজি করে এমওপি সার প্রদান করা হয়েছে। আশা করছি গোটা উপজেলাতে বাদামের চাষ ছড়িয়ে পড়েবে এবং চাষিরা লাভবান হবেন।