লালমনিরহাট প্রতিনিধি
লালমনিহাট শহরের পুরান বাজার এলাকায় একই আঙ্গিনায় অবস্থিত দুই ধর্মের দুটি ধর্মীয় উপাসনালয়। একপাশে ধূপকাঠি অন্যপাশে আতরের সুঘ্রাণ। একপাশে উলুধ্বনি অন্য পাশে, ভেসে আসছে আজান। এভাবেই ধর্মীয় সম্প্রীতি এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করে চলছে একই আঙ্গিনায় শতবর্ষী আঙ্গিনায় মসজিদ ও মন্দির।

স্থানীয়রা জানান, একই আঙিনায় প্রায় শত বছর ধরে কোন সাম্প্রতিক কলহ, দাঙ্গা ছাড়াই দুটি ধর্মের মানুষ তাদের ধর্ম পালন করে আসছে। ১৮৩৬ সালে প্রথমে কালী মন্দির প্রতিষ্ঠিত হয়, পরবর্তীতে বাজার এলাকার মুসল্লিরা তাদের নামাজ আদায়ের করার জন্য একটি মসজিদ ঘর নির্মাণ করেন। পরবর্তীতে ওই মসজিদের নামকরণ করা হয় পুরান বাজার জামে মসজিদ।

হিন্দু সম্প্রদায়ের যখন পূজা বা ধর্মীয় অনুষ্ঠান আসে, তখন দুই কমিটি একত্রে বসে সিদ্ধান্ত নেয়। নামাজ বা আযানের সময় সূচির পূর্বে তাদের ধর্মীয় কার্যকর্ম বন্ধ থাকে। আবার যখন নামাজ শেষ হয় তখন তাদের পূজার কার্যক্রম পুনরায় করেন।
স্থানীয়রা আরো জানান, যখন পূজা আসে পূজার সময় আযানের সময় হলে নামাজের সময় হলে প্রতিমা গুলো কাপড় দিয়ে ঢেকে দেওয়া হয় এবং তাদের যন্ত্র সম্পূর্ণ বন্ধ থাকে।

জানা গেছে, এখনে মন্দির ও মসজিদ দেখতে প্রতিদিন দূর দূরান্ত থেকে ছুটে আসে দর্শনার্থীরা। কয়েকটি দেশের রাষ্ট্রদূতও এই মন্দির ও মসজিদ পরিদর্শন করেছেন। মসজিদ সামনে একটি মাঠ রয়েছে , ওই মাঠ দুই ধর্মের মানুষই সমানভাবে ব্যবহার করে আসছে। যেমন পূজার সময় সেই মাঠটিতে মেলা বসে আবার ঈদের আগের দিন সন্ধ্যা অস্থায়ীভাবে মেলা বসে।

পুরান বাজার জামে মসজিদের ইমাম মোহাম্মদ আলাউদ্দিন জানান, ঐতিহ্যবাহী পুরান বাজার মসজিদের পাশেই রয়েছে মন্দির। মসজিদের আগে মন্দিরটি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এখানে জাতি ধর্ম নির্বিশেষে সবশ্রেণির মানুষ যার যার ধর্ম পালন করে। এখানে কোনোদিন বিশৃঙ্খলাও হয়নি

কালীবাড়ী মন্দিরের ও প্রধান পুরোহিত শ্রী শংকর চক্রবর্তী জানান, ১৮৩৬ সালে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর এলাকার নামকরণও করা হয় কালীবাড়ী। পরে এখানে বাজার গড়ে উঠলে বাজারের ব্যবসায়ী ও শহরের ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা মন্দিরের দেওয়াল ঘেঁষে প্রতিষ্ঠা করেন পুরান বাজার জামে মসজিদ। সেই থেকে এক উঠানে চলছে দুই ধর্মের দুই উপাসনালয়ের কার্যক্রম। ধর্ম পালনে সামান্য বিশৃঙ্খলাও কোনদিন হয়নি।

লালমনিরহাটের জেলা প্রশাসক রকিব হাদার বলেন, লালমনিহাটের একই আঙ্গিনায় মসজিদ ও মন্দির এটি একটি বিরল দৃষ্টান্ত। এখানকার মানুষ সব ধর্মের মানুষের সহাবস্থান বিশ্বাস করেন। যার প্রমাণ একই উঠনে কেন্দ্রীয় কালীবাড়ী মন্দির ও পুরান বাজার জামে মসজিদ। এটি ধর্মীয় সম্প্রীতির অনন্য নিদর্শন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *