নাগেশ্বরী (কুড়িগ্রাম) প্রতিনিধি :
কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরী উপজেলার নুনখাওয়া ও নারায়নপুর ইউনিয়নে টিসিবির পণ্য নি¤œআয়ের মানুষদের না দিয়ে ব্যবসায়ীদের কাছে টোকেন বিক্রির অভিযোগ উঠেছে ইউপি চেয়ারম্যান ও মেম্বারদের বিরুদ্ধে। রোববার দুপুরে নুনখাওয়া ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়ে টিবিবি বিক্রির সময় ব্যবসায়ীদের পণ্য উঠানোর প্রমানও পাওয়া গেছে।
এ সময় চেয়ারম্যানের সাথে সাধারণ মানুষের বাগবিতন্ডা হওয়ার ঘটনাও ঘটেছে। অনেকে অভিযোগ করেছেন একাধিকবার যোগাযোগ করেও একটি টোকেন পাননি তারা। অন্যদিকে অন্য ইউনিয়নের লোকের কাছে মেম্বাররা টোকেন বিক্রি করেছেন। এ বিষয়ে চেয়ারম্যানের দাবী টিসিবির পণ্য বিক্রি করে খাওয়ার মতো তিনি নন। হাতে টাকা না থাকায় সাধারণ মানুষেরাই ব্যবসায়ীদের কাছে টোকেন বিক্রি করেছে। নুনখাওয়া ইউপি কার্যালয় থেকে পণ্য তুলে মাথায় করে দু’টি বস্তা নিয়ে যাচ্ছিলেন ভিতরবন্দ ইউনিয়নের ৭ নং ওয়ার্ডের তৈয়ব আলী। এতোগুলো পণ্য কার জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আছে সামনে লোক আছে। নাম জানেন না। পরে স্বীকার করেন তিনি এগুলো এক ব্যবসায়ী তুলতে দিয়েছেন। ওই ব্যবসায়ীদের নাম জানেন না। আর একজন বস্তায় করে নিয়ে যাচ্ছিলেন পণ্য। তিনি জানান সাবেক ইউপি মেম্বার রিয়াজুল ইসলাম দোকানে বসে তাকে ¯িøপ দিয়ে পাঠিয়েছেন। এ ছাড়াও অনেককেই দেখা যায় বস্তা বস্তা পণ্য নিচ্ছে ডিলারের কাছ থেকে। তারা সবাই ব্যবসায়ীর লোকজন বলে অভিযোগ করেন উপস্থিত ইউনিয়নবাসীরা। এদিকে ছয়মাস পিছে ঘুরেও একটি ¯িøপ না পাওয়ার অভিযোগ করেন অনেকে। ৪ নং ওয়ার্ডের গরুভাসা এলাকার হোসেন বলেন, ‘গত টিপে একটা ¯িøপ চাইছি দেয় নাই। এ টিপে চাইছি জহুরুল মেম্বার বাড়িত থাকি কয়, ¯িøপ নাই।’ ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, সব ¯িøপ বেছে খাইছে। দিব্যে কোথথাকি। ১ নং ওয়ার্ডের ছাপিয়া বেওয়া টাকা হাতে ঘুরছেন পরিষদের সামনে। তিনি বলেন, কাক কাক বলে ¯িøপ দেয় ওমরা আত্মসাৎ করেন। এজন্য টাকা নিয়ে আসছি। কইতা দেয়না। এর আগোত চেয়ারম্যানের কাছত গেছি সাথের মিলন কয় কার্ড দেওয়া শ্যাষ। কই পাই আমরা। সেখানকার এক বৃদ্ধ বলেন, বাড়ি হামার নদীর ওপার আসি আর ফেরত যাই। ¯িøপ দিছে ওমরা বেছি। পাই কেমন করি। এমন অভিযোগ করেন উপস্থিত অনেকে। এ সময় চেয়ারম্যান সেখানে আসলে অনেকের সাথে চেয়ারম্যানের তর্ক বাঁধে। বিতরণের সময় কয়েকজন ইউপি মেম্বার উপস্থিত থাকলেও সংবাদকর্মীদের দেখে দূরে চলে যান তারা। পরে আর কথা বলা সম্ভব হয়নি।পরে তিনি দোতালায় ডেকে বেশ কিছু লোকজনের মধ্যে টোকেন (¯িøপ) বিতরণ করেন। এ প্রসঙ্গে নুনখাওয়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আমিনুল ইসলাম বলেন, ‘একটি করে ¯িøপ বিক্রি করলে ৭০-৮০ টাকা পাওয়া যায়। ১০০ ¯িøপ বিক্রি করে ৫-৭ হাজার টাকা খাবো সেই চেয়ারম্যান আমি না। আমি যার যার ¯িøপ তার কাছে পৌঁছায় দিয়েছি। মেম্বারদের বিষয়টি তাঁর জানা নেই বলে জানান চেয়ারম্যান।

গত ১এপ্রিল শনিবার নারায়নপুর ইউনিয়নের টিসিবির পণ্য নদীর পারে বিতরণ করতে দেখা গেছে। ইউনিয়ন পরিষদের প্রায় ৩কিলোমিটার দুরে মাঝিয়ালী এলাকায় নদী পার হয়ে এলাকার লোকজনদের পণ্য আনতে দেখা যায়। এ সময় কারও হাতে ব্যাগে পণ্য,আবার কারও মটর সাইকেলে বস্থা ভর্তি মাল নিতে দেখা যায়। একজন মটর সাইকেলের লোককে জিজ্ঞাসার করলে তিনি বলেন এগুলো টিসিবির মাল, আপনার কাছে এতো মাল কেন জানতে চাইলে উত্তর না দিয়ে চলে যায়। ইউনিয়নের সুবিধাবঞ্চিত লোকজন জানায় আমরা কোন টোকেন পাই না, লজ্জায় বলতেও পারিনা। নারায়নপুরের সিরাজ মিয়া জানায় আগে থেকেই একজন ব্যবসায়ীকে দশটি করে ¯িøপ বিক্রিকরে দেয়। তারা বস্তা ভর্তি করে মাল তুলে নিয়ে আসে। আবার অনেকের কাছে ইউপি সদস্যরা মূল্যের অতিরিক্ত ৫০/৬০ টাকার বিনিময়ে টোকেন বিক্রি করে দেয়। আনছেল আলী জানায় আমরা গরিব মানুষ আমাদের কিনা খাওয়া ছাড়া উপায় নাই। আমরা ¯িøপ পাই না,তাই নদীর ঘটে যেখানে টিসিবির মাল বিক্রি হয় সেখানে চেয়ারম্যানের লোকের নিকট থেকে ৪৭০ টাকার মাল ৫৫০ টাকা দিয়ে কিনি আনি খাই। আজিজুল হক বলেন ভাই আমরা যদি টিসিবির টোকেন না পাই তা হলে আমার টোকেন যায় কোথায়। এ ব্যাপারে ইউপি চেয়াম্যান গোলাম মোস্তফার সাথে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করে পাওয়া য়ায় নি।
এ প্রসঙ্গে উপজেলা নির্বাহী অফিসার ফারজানা জাহান মুঠোফোনে বলেন, টিসিবি নিয়ে কোথাও অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেয়া হবে। নাগেশ্বরী উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মোস্তফা জামান বলেন, সব ইউনিয়নে সুন্দরভাবে টিসিবির পর‌্য বন্টন হয়েছে। দুই একটি ইউনিয়ন থেকে অভিযোগ এসেছে। আমরা ওই চেয়ারম্যানকে ফোনে বলেছি। তারা ব্যবস্থা নেবেন। আশা করি আগামীতে এ সমস্যা থাকবেনা।
প্রশাসন জানায়, উপজেলার একটি পৌরসভা ও ১৪টি ইউনিয়নের জন্য টিসিবির মোট সুবিধাভোগীর সংখ্যা ৫৩ হাজার ২২১টি। এরমধ্যে নুনখাওয়া ইউনিয়নে ৩ হাজার ৬০ টি। গত ফেব্রæয়ারী মাসের পণ্য বিতরণ করা হয় গত ৩ ও ৪ এপ্রিল। গত মার্চ মাসের টিসিবির পণ্য বিতরণ করা হয় রোববার।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *