কুড়িগ্রাম প্রতিনিধিঃ
কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ীতে নিখোঁজ হওয়ার আট মাস পেরিয়ে গেলেও সন্ধান মেলেনি ১২ বছরের শিশু রবিউল ইসলাম রবির। রবিউল উপজেলার সদর ইউনিয়নের চন্দ্রখানা গ্রামের বাসিন্দা তৌহিদুল ইসলাম টুনকু ও রাশিদা বেগমের ২য় পুত্র। সে ফুলবাড়ী আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ের ৬ষ্ঠ শ্রেণির ছাত্র। গত ১৪ ফেব্রুয়ারি দুপুরে বাড়ী থেকে নিখোঁজ হয়। এরপর তার পরিবারের লোকজন প্রতিবেশী ও সকল আত্মীয় স্বজনের বাড়ীতে খোঁজাখুঁজি করেও তার খোঁজ পায়নি। রবিউল নিখোঁজ হওয়ার ছয়দিন পর ২০ ফেব্রুয়ারি ফুলবাড়ী থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেন তার বাবা। যার জিডি নং ৯৫২।

নিখোঁজের প্রায় পাঁচ মাস পর কচাকাটা থানার সুবারকুটি গ্রামের বাসিন্দা হাবিবুর রহমানের ছেলে সাখাওয়াত হোসেন, একই এলাকার রেজাউল করিম ও ফুলবাড়ী সদর ইউনিয়নের চন্দ্রখানা গ্রামের মৃত তছলিম উদ্দিনের ছেলে হাসান মিয়া ও তার স্ত্রী তানজিনা বেগমের বিরুদ্ধে ফুলবাড়ী থানায় অভিযোগ দায়ের করেন রবিউলের বাবা।

অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার ফায়ার সার্ভিস সংলগ্ন এলাকায় নিখোঁজ রবিউলের বড় চাচার বাড়ী ভাড়া নিয়ে সাখাওয়াত ও রেজাউল করিম সেখানে কিছু ছাত্রকে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে কোরআন শিক্ষা দিতো। তাদের এ শিক্ষা কার্যক্রম চলমান থাকা অবস্থায় তারা রবিউলসহ বেশ কয়েকজনকে বিশ হাজার টাকা বেতনের চাকরির প্রলোভন দেখাতো। এভাবেই প্রলোভন দেখানোর কিছুদিন পর রবিউল নিখোঁজ হয়। রবিউল নিখোঁজ হওয়ার পর থেকে গাঁ ঢাকা দেয় রেজাউল । এর ১৫/১৬ দিন পর সাখাওয়াতও কাউকে কিছু না জানিয়ে গোপনে চলে যায়। বন্ধ হয় তাদের কুরআন শিক্ষা কার্যক্রম। রবিউলকে রেজাউল ও সাখাওয়াত সঙ্গে নিয়ে গেছেন এবং হাসান আলী ও তার স্ত্রী তানজিনা বেগম রবিউল নিখোঁজ হওয়ার ঘটনায় জড়িত বলে অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে।

সন্তানকে ফিরে পেতে দিন রাত বিভিন্ন জায়গায় ছুটছেন তার বাবা মা।রবিউলের বাবা তৌহিদুল ইসলাম বলেন, আমার শিশু সন্তান নিখোঁজ হওয়ার পর ফুলবাড়ী থানায় ডায়েরি এবং পরবর্তীতে চারজনের বিরুদ্ধে অভিযোগ দিয়েছি। অভিযোগ দেওয়ার প্রায় ২০ দিন পর ফুলবাড়ী থানার এক এসআই আমাকে বলে অভিযোগের কপি হারিয়েছে। আমি আবারও লিখিত অভিযোগ দিয়েছি। এরপরও আমার ছেলেকে উদ্ধারে পুলিশের কোন তৎপরতা দেখিনি। আমি থানায় গেলে ওসির কথায় চরম হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়ি। পরবর্তীতে কুড়িগ্রাম পুলিশ সুপারের সাথে দেখা করি। তিনি আমার উপস্থিতিতে নাগেশ্বরী সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার ও ফুলবাড়ী থানার ওসিকে বাচ্চাটি উদ্ধারে তৎপরতা চালানোর নির্দেশ দিয়েছিলেন। কিন্তু এখনো পুলিশ আমার ছেলেকে উদ্ধার করতে পারেনি। আমি জানি না আমার ছেলেটা কোথায় আছে, কেমন আছে বলেই কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন তিনি।

এ ব্যাপারে ফুলবাড়ী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রাজীব কুমার রায় জানান, অভিযোগের ভিত্তিতে আমরা সবাইকে একাধিকবার জিজ্ঞাসাবাদ করেও কোন ক্লু পাইনি। পিবিআইকে রবির সমস্ত তথ্য দেয়া হয়েছে। সকল পুলিশ স্টেশনে ছবিও পাঠানো হয়েছে। রবিকে উদ্ধারের জন্য আমরা সর্বাত্মক চেষ্টা অব্যাহত রেখেছি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *