সেনবাগ সংবাদদাতা
নোয়াখালী-২ (সেনবাগ-সোনাইমুড়ি) আসনে মনোনয়ন প্রত্যাশীদের দৌড়ঝাপ শুরু হয়েছে। ইতিমধ্যে দলীয় মনোনয়ন পেতে দলীয় হাই কমান্ডে লবিং শুরু করে দিয়েছেন মনোনয়ন প্রত্যাশীরা। নোয়াখালী-২ আসনটি অন্যান্য আসন থেকে ছোট হওয়ায় ভোট করতে সহজ হবে বিদায় এখানে মনোনয়ন পেতে মরিয়া প্রার্থীরা। এ আসনে মনোনয়ন পেতে মনোনয়ন প্রত্যাশীরা স্থানীয় সাংবাদিকদের সাথে মতবিনিময়সহ বিভিন্ন সভা সমাবেশ করতে মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন। ইতিমধ্যে আওয়ামীলীগ থেকে মনোনয়ন প্রত্যাশী স্থানীয় এমপি মোরশেদ আলম, জেলা আওয়ামীলীগের সহ সভাপতি আতাউর রহমান ভুইয়া মানিক, উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি আলহাজ্ব জাফর আহম্মদ চৌধুরী, ড. জামাল উদ্দিন। বিএনপি থেকে মনোনয়ন প্রত্যাশী সাবেক বিরোধীদলীয় চীপ হুইফ জয়নুল আবেদীন ফারুক, কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য কাজী মফিজুর রহমান, সংযুক্ত আরব আমিরাত স্বে”্ছাসেবক দলের আর্ন্তজাতিক বিষয়ক সম্পাদক তোফাজ্জল হোসেন মানিক, জাতীয় পার্টি থেকে মনোনয়ন প্রত্যাশী জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান সালাহ্ উদ্দিন আহমেদ, সেনবাগ উপজেলা জাতীয় পার্টির আহ্বায়ক,সাবেক ছাত্রনেতা হাসান মঞ্জুর। মনোনয়ন প্রত্যাশী স্থানীয় এমপি মোরশেদ আলম ১৯৯৬ সালে বেগমগঞ্জ থেকে জাতীয় পার্টির লাঙ্গল প্রতিক নিয়ে নির্বাচন করে পরাজিত হয়ে রাজনীতি থেকে নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়েন। পরে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে তিনি আওয়ামীলীগে যোগদান করে নোয়াখালী-২ (সেনবাগ-সোনাইমুড়ি) আসনে বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় এমপি নির্বাচিত হন। নির্বাচিত হওয়ার পর দলীয় নেতাকর্মীরা আশা করেছিল তিনি দলকে সংগঠিত এবং নির্বাচনে প্রতিদ্বন্ধিতা করার সংগঠনে পরিণত করবেন। ৭৩এর পর দীর্ঘদিন আওয়ামীলীগ এ আসনে ক্ষমতায় না থাকায় এলাকাটি মূলত আওয়ামী বিরোধীদের ঘাটিতে পরিণত হয়। কার্যত এ নির্বাচনী এলাকায় আওয়ামীলীগের শক্ত কোন ভিত ছিল না। কিন্তু মোরশেদ আলম সাংগঠনিকভাবে দলকে না গুছিয়ে তিনি মুষ্ঠিমেয় কতিপয় অসাংগঠনিক ব্যক্তির বলয়ে আবদ্ধ হয়ে যান। দলের নেতাকর্মীরা তার কাছে ঘেষার কোন সুযোগ পেত
না। তাছাড়া তিনি এলাকায় উল্লেখযোগ্য কোন উন্নয়ন কর্মকান্ড দেখাতে পারেননি। নির্বাচনী এলাকা প্রায় সবকটি সড়কের অবস্থা করুণ। পৌর এলাকার সড়কসমুহের অবস্থা দেখলেই পুরো নির্বাচনী এলাকার সড়কগুলো সম্পর্কে একটা ধারণা পাওয়া যায়। এলাকায় মাদকের ভয়াবহতা নির্মূলে তিনি কোন কঠোর অবস্থান গ্রহণ করেননি। পুরো নির্বাচনী এলাকার দলীয় নেতাকর্মীদের সাথে মোরশেদ আলমের দূরত্ব এতই বেড়ে যায় যে, উনার কোন সভা সমাবেশে আওয়ামীলীগ নেতাকর্মীদের দেখা যায়না। অপর মনোনয়ন প্রত্যাশী জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি আতাউর রহমান ভুইয়া মানিককে জেলা আওয়ামীলীগ সেনবাগের অগোছালো আওয়ামী রাজনীতিকে গুচিয়ে দলকে নির্বাচন যুদ্ধে অবতীর্ণ হওয়ার সাংগঠনিক শক্তি অর্জনের দায়িত্ব প্রদান করে। অপেক্ষাকৃত তরুণ আতাউর রহমান ভূইয়া মানিক বহুধাবিভক্ত সেনবাগ আওয়ামীলীগকে ঐক্যবদ্ধ করার মিশনে নামেন। নানা প্রতিকূলতা কাটিয়ে তিনি সেনবাগ আওয়ামীলীগকে ঐক্যবদ্ধ করতে সক্ষম হন। তিনি এমপি গ্রুপ, জাফর চৌধুরী গ্রুপ ও টিপু গ্রুপ নামে পরিচিত খন্ডিত আওয়ামীলীগকে ঐক্যবদ্ধ করে এক মঞ্চে এনে জেলার রাজনৈতিক মহলে তাক লাগিয়ে দেন। তাছাড়া অর্থ বিত্তে প্রতিষ্ঠিত মানিক দলের সর্ব পর্যায়ের নেতাকর্মীদের মাঝে বিভিন্ন ঈদ বা উৎসবে কোটি কোটি টাকা বিতরণ করে নেতাকর্মীদের মনোবল চাঙ্গা রাখেন। সেনবাগের রাজনীতিতে নিকট অতীতে যা কল্পনা করা যেত না। ব্যক্তিগত জীবনে মানবতাবাদী হিসেবে পরিচিত আতাউর রহমান ভূইয়া মানিক সেনবাগের বাহিরেও শত শত লোককে বসত ঘর নির্মাণ করে দিয়ে বিরল এক দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। সেনবাগ হাসপাতালে গিয়ে দুখি অসহায় রোগীদের খোজ খবর নেন এবং প্রত্যেককে অর্থিক অনুদান দিয়ে বিরল দৃষ্ঠান্ত স্থাপন করেন,যা আগে কেউ করেনি। আতাউর রহমান ভূইয়া মানিক ব্যক্তিগত অর্থায়নে ৫কোটি টাকা ব্যয়ে সোনাইমুড়ি উপজেলা কমপ্লেক্স মসজিদ নির্মাণ, সোনাইমুড়িতে আতাউর রহমান ভূইয়া মানিক স্কুল এন্ড কলেজ নির্মাণসহ বিভিন্ন সামাজিক ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান নির্মাণ করে সমাজসেবক হিসেবে এলাকায় বেশ আলোচনায় রয়েছেন। মনোনয়ন প্রত্যাশী সাবেক জাসদ, জাতীয় পার্টি নেতা আলহাজ্ব জাফর আহম্মদ চৌধুরী ১৯৯১ সালে দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে স্বতন্ত্র প্রার্থী হলে তার দলের প্রার্থী মওদুদ আহমেদের শোচনীয় পরাজয় ঘটে। এতে মওদুদ আহমেদের সাথে জাফর চৌধুরীর বিরোধ দেখা দিলে তিনি আওয়ামীলীগে যোগ দেন এবং ১৯৯৮ সালে সেনবাগ উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি নির্বাচিত হন। ২০০১ সালে তিনি নোয়াখালী-২ আসন থেকে আওয়ামীলীগের প্রার্থী হিসেবে নৌকা প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্বন্ধিতা করে পরাজিত হন। এরপরে তিনি আর কোন নির্বাচনে নৌকারপক্ষে কাজ করেননি বলে এলাকায় প্রবাদ প্রচলিত রয়েছে। ২০০৬সালে নির্বাচনে তিনি নৌকার প্রার্থী ড. জামালের বিরুদ্ধে পরোক্ষ নির্বাচনে অংশই নেননি বরঞ্চ নৌকাকে হারানোর জন্য দুই হাতে টাকা খরচ করেছেন বলে এলাকায় অভিযোগ রয়েছে। গত মেয়র নির্বাচনে তিনি নৌকার প্রার্থী আবু জাফর টিপুর বিরুদ্ধে নির্বাচনী প্রচারণা চালিয়েছেন এমন অভিযোগ ক্ষোভ দলীয় মেয়রের। অপর মনোনয়ন প্রত্যাশী বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির সাধারণ সম্পাদক, বাংলদেশ ব্যাংকের পরিচানা পর্ষদের সদস্য ড. জামাল আহমেদ এফসিএ ২০০৬ সালে নোয়াখালী-২ আসন থেকে আওয়ামীলীগের প্রার্থী হিসেবে নৌকা প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্বন্ধিতা করে পরাজিত হন। নির্বাচনে পরাজিত হওয়ার পর তিনি এলাকায় নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়েন। তিনি নেতাকর্মীদের বাহিরে নিজস্ব একটা বলয় তৈরী করে তার কর্মকান্ড পরিচালনা করা চেষ্টা চালান। কিন্তু তিনি এতে সফল হতে পারেননি। ২০১৪সালের নির্বাচনকে সামনে রেখে সেনবাগের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ল্যাপটপ বিতরণের মাধ্যমে তার কর্মকান্ড সীমাবদ্ধ রাখেন। দল আলহাজ্ব মোরশেদ আলমকে মনোনয়ন প্রদান করলে তিনি তার ল্যাপটপ বিতরণ কর্মকান্ডও বন্ধ করে দেন। এখন আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে তিনি আবার সেনবাগের দলীয় নেতাকর্মীদের বাহিরে নিজে নিজে প্রচার প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। দলীয় নেতাকর্মীরা তার এ প্রচারণাকে তেমন আমলে না নিলেও অনেকের মতে বর্তমান সরকারের সময়ে ড. জামালই সেনবাগের একমাত্র ব্যক্তি যিনি সরকার থেকে সবচেয়ে বেশী বেনিফিশিয়াল। তিনি জনতা ব্যাংক, বাংলাদেশ ব্যাংক ও এসেনসিয়াল ড্রাগ এর মতো গুরুত্বপূর্ণ সরকারী প্রতিষ্ঠানের পরিচালক হলেও তার দ্বারায় সেনবাগের একজন নেতাকর্মীল উপকার হয়নি। তিনি কাউকে এক টাকা দেনও নি এমনকি একজনকে চাকরিও দিতে পারেননি। বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশী যতজনই হোক জয়নাল আবেদীন ফারুক যে মনোনয়ন পাচ্ছেন তা অনেকটা নিশ্চিত। ঘোরপাক খাচ্ছে কে পাচ্ছেন নৌকার টিকেট তা নিয়ে। রাজনৈতিক বোদ্ধাদের মতে, সেনবাগের ৬বারের এমপি জয়নাল আবেদীন ফারুককে নির্বাচনী ময়দানে খুব সহজেই কাত করা যাবে তা ভাবার কোন অবকাশ নেই। পুরো নির্বাচনী এলাকাই বিএনপির দূর্গ। এই দূর্গ থেকে শক্তি প্রয়োগ করে নয় কৌশলে বের করে আনতে হবে নৌকার বিজয়। আগামী নির্বাচনে দলীয় সভানেত্রী কাকে করবেন নৌকার কৌশলী মাঝি তাই দেখার বিষয়।